বাঙালি জাতির চিরন্তন ঐতিহ্য হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের এই প্রথম দিনটিতে সারা বাংলায় বয়ে যায় উৎসবের আমেজ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসে মেলা। রং-বেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। থাকে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোক সংস্কৃতির উপাদান।
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে যারা প্রবাসে কর্মরত তাদের মাঝেও বাংলা নববর্ষে আনন্দের কমতি থাকে না। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায়। পহেলা বৈশাখের দিনে বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং মালয়েশিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজন করে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের। মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলা হয়ে ওঠে পহেলা বৈশাখে।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার বাংলাদেশি কাজ করে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিল কনসাল্ট এসডিএন বিএইচডি (SEAL CONSULT SDN BHD). কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে একসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার বাঙালি কাজ করেন। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আমিরুল ইসলাম খোকন। প্রতিষ্ঠানটি ১৪২২ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এক বিশেষ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। MATRADE EXHIBITION CENTER এ পুরো অনুষ্ঠানটি তাদের কর্মরত শ্রমিকরা বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালি সংস্কৃতি এ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। দেড় হাজারের অধিক কর্মরত শ্রমিক নেচে গেছে আনন্দমুখর পরিবেশে সুশৃঙ্খল এই বর্ষবরণ উদযাপন করেন। এ যেন প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ডিফেন্স অ্যাডভাইজার কমডোর আরিফ, লেবার কনসু্লার মো. সাইয়েদুল ইসলাম, শাহিদা সুলতানা, নুসরাত জেবিন প্রমুখ। তারা দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবাইকে নবববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশের মাটিতে এ ধরনের লাইভ এবং সুন্দর অনুষ্ঠান এই প্রথম দেখলাম। এ অনুষ্ঠানে এসে আমরা খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশি শ্রমিকদের মেশিন রেডিবল পাসপোর্ট ও আইনি সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এসময় দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিজ নিজ ফোন নাম্বার উপস্থিত প্রবাসীদেরকে দেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামি ইউনিভার্সিটির (আইইউএম) প্রফেসর নূরুল আমিন।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন রেস্তোরা, ফ্যাশন হাউজ ও সুপার শপগুলোতে ছিল বিশেষ আয়োজন। ছিল বিশেষ মূল্য ছাড়। প্রথম ৫০০ জন ক্রেতার জন্য বিনামূল্যে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করেছিল কুয়ালালামপুরে অবস্থিত রসনা বিলাস রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও দেশীয় খাবারের সমাহারসহ প্রায় ৫০টি বাংলাদেশি খাবারের আইটেম ছিল নববর্ষে।
এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও পালন করা হয়েছে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অব মালয়েশিয়া (বিএসইউএম), আমরা প্রবাসী যুব সংঘ, আমরা বাংলাদেশি, বিডি রেড মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ কমিউনিটি জহুর প্রদেশ, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি পুত্র মালয়েশিয়া ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি বাংলা নববর্ষ পালন করেছে।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত প্রবাসীদের নববর্ষের বিশেষ আকর্ষণ ছিল বাংলাদেশের শিল্পী মমতাজের কনসার্ট। ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের চুন হু স্টেডিয়ামে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন মমতাজ। মমতাজের এই কনসার্টে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা প্রাণভরে উপভোগ করেন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাস প্রবাসী বাঙালিদের সৌজন্যে আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশের। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম পান্তা-ইলিশ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পান্তা-ইলিশ ছাড়াও দূতাবাস আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন, নৃত্য পরিবেশনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ এপ্রিল, ২০১৫/ রশিদা