জর্জ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৮ই এপ্রিল নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে গেল বাঙালিদের প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এ কারনে মিলন মেলা বললাম; কারন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করা সত্যিই কষ্টকর। মেলায় যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি অথবা মাস্টার্স এর ছাত্র। গটিঞ্জেনে এটাই আমার প্রথম কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই আমি খুব উৎসাহী ছিলাম কখন ১৮ এপ্রিল আসবে। এই অনুষ্ঠানে যোগদানের একটি বিশেষত্ব আছে, যা আমার কাছে ছিল নতুন এবং ভালো লাগার। সেটা হল- এখানে যোগদান করতে হলে আপনাকে কোন না কোন খাবার রান্না করে নিয়ে আসতে হবে; যাকে বলা যায় সবাই যখন আয়োজক। আর কে কোন খাবার নিয়ে আসবে সেটা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্বটা যিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি হলেন ড. মনিকা।
মনিকা দিদি সম্পর্কে একটু বলে রাখি। কলকাতার মানুষ মনিকা দিদি; অনেক বছর ধরে গটিঞ্জেনে আছেন। দিদির সাথে প্রথম পরিচয়েই আমার খুব ভালো লেগেছিল; তিনি খুবই আন্তরিক। আর সে কারনেই মনে হয় এখানে যারা বাংলাদেশি আছেন তাদের সাথেও তার অনেক সখ্য। তার তো যেই কথা সেই কাজ। আমার এবং সাইফুর ভাইয়ের ভাগ্যে পড়েছিল দুইটি মুরগি রান্না আর আলু ভর্তা করে নিয়ে যেতে হবে। তবে কোন কিছুই কাউকে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। সবাই নিজ নিজ মতামত প্রকাশ করেছেন; আলোচনা করে খাবার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
দিনটি নিয়ে আমি দারুণ উৎসাহী ছিলাম। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না। বিদেশের মাটিতে দেশের সব মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের দারুণ এক সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমি যতটুকু শুনেছি, এখানে বাংলাদেশিদের শেষ অনুষ্ঠান হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসের। তাই বুঝতেই পারছেন বছরে কোন অনুষ্ঠানে
ঠিক ৫ টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। শ্যামল দার মেসেজ পেয়ে আমি আর ফরেস্ট্রির খুব আদরের ছোট ভাই সোহাগ একটু আগেই চলে যাই আন্তর্জাতিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রে। শ্যামল দা আর সাইফুর ভাই সম্পর্কে একটু বলে রাখি; তারা দুজনেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির ছাত্র। বাংলাদেশে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
খুব কম সময়ের মধ্যেই সাজানোর কাজ শেষ হয়ে যায়; তাতে অবশ্য সোহাগের অবদানই বেশি। যাই হোক, এবার সবাই আসতে শুরু করেছে, আর সাথে কোন না কোন খাবার। সব ধরণের খাবার ই ছিল; যেমন শুঁটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, মুরগির মাংস, সবজি, ডাল, বেগুন ভাজা, ডিম ভুনা। খাবার শেষে ছিল মিষ্টি, আইসক্রিম, ফল এবং সব ধরনের ঠাণ্ডা পানীয়। জার্মানি, ব্রাজিল, বলিভিয়া এবং অন্যান্য দেশের যারা অতিথি হয়ে এসেছিলেন; তারা খুব আনন্দের সাথে লাইন ধরে এক এক করে রাতের খাবার শেষ করেছেন। অন্যান্যদের সাথে একজন তো শুঁটকি ভর্তা খেয়ে হু-হা করতেই ব্যস্ত ছিল। সেটা ছিল অন্যরকম এক দৃশ্য! নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। সাথে বাড়তি আয়োজন হিসেবে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক সব ধরনের গানই পরিবেশন করেছেন এক এক করে শিল্পীরা। সাথে ছিল নাচ আর মনিকা দিদির অতি আদরের দুই ছেলের বৈশাখ নিয়ে বাংলায় কিছু কথা। দিনটি ছিল অন্যরকম সুন্দর।