আবুধাবীর ইলেক্ট্রা রোড প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আল-মোল্লা নামে পরিচিত। মূলত আল-মোল্লা হচ্ছে একটি বিল্ডিংয়ের নাম। এ বিল্ডিংয়ের নিজাম হোটেলকে ঘিরে বসতো চট্টগ্রাম প্রবাসীদের মিলন মেলা। কেউ আসতেন দেখতে, কেউ সদাই কিনতে, পান খেতে, কেউবা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করতে, আবার কেউ কর্মের সন্ধানে। প্রায় হাজার দশেক প্রবাসীর উপস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী সিটির এই স্থানটি জমজমাট থাকতো প্রতিসন্ধ্যায়।
লোকমুখে প্রচার আছে, দেশে যাওয়ার জন্য ছুটি পেলে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বাজার করতে আসতেন এই মার্কেটে। খালি হাতে এক দরজা দিয়ে ঢুকলে অন্য দরজা দিয়ে বের হতেন ভরা হাতে। এখানে পাওয়া যেতো পছন্দের ও প্রয়োজনীয় সকল ধরণের পণ্য। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তাজা-তরকারি, মাছ-মাংসের সুলভ মূল্যের প্রতিষ্ঠানও ছিলো এটি। কিন্তু কিছুদিন আগে আল-মোল্লা বিল্ডিংয়ের সিলিং ভেঙ্গে পড়ে দু'জন আহত হওয়ার ঘটনা ও বিল্ডিংয়ের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় প্রশাসনিকভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিংয়ের যাবতীয় কর্যক্রম বন্ধ করে দেয় হয়। আদেশ আসে বিল্ডিংটি ভেঙ্গে দেয়ার। এ জন্য স্থান পরিবর্তন করে নিজাম হোটেল। ভাটা পড়ে প্রবাসীদের মিলনকেন্দ্রে।
তবে আল-মোল্লা বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি বাকালা আল আসফোর দোকানটি ঘিরে কর্মের সন্ধানী প্রবাসী শ্রমিকরা এখনও এখানে মিলিত হন প্রতিসন্ধ্যায়। এখন প্রায় পাঁচ শতাধিত প্রবাসী মিলিত হন এখানে। কেউ আসেন পান খেতে, ব্যালেন্স কিনতে কেউবা এসব বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু নেই আগের সেই আড্ডা, রমরমা অবস্থা। প্রবাসীরা এখন আড্ডা বসে তালতলা, দরবেশ মসজিদ এলাকা, খেঁজুর তলায়। হামদান রোড, ইলেক্ট্রা রোডের এসব এলাকার নামগুলোও প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া।
আল মোল্লা বিল্ডিংয়ের নামকরা রফিকের গোস্তর দোকানের মালিক চট্টগ্রাম প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক জানান, ' আমি এখানে ৩৪ বছর যাবত আছি। আল-মোল্লা বিল্ডিংয়ের শুরু থেকে শেষ সব দেখেছি। আল-মোল্লা বিল্ডিং ছিল চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের মতো। এই বিল্ডিংয়ে অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ছিলেন চট্টগ্রামের। অক্সিজেন আর বায়জিতেরও ব্যবসায়ী ছিলেন অনেকে।
তিনি আরও জানান, ছুটির দিনে মানুষের ভিড়ে হাঁটার জায়গা থাকতো না এখানে। পাওয়া যেতো না গাড়ি রাখার পার্কিং। প্রবাসীরা ছুটিতে দেশে যাওয়ার সময় এই মার্কেট থেকেই ক্রয় করতে পারতো সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র। এক কথায়, এক দরজা দিয়ে ঢুকলে অন্য দরজা দিয়ে ভরা হাতে বের হতো সবাই। কিন্তু এখান আর সেই অবস্থা নেই। বিল্ডিংয়ের মেয়ার শেষ। এখন সবাই তালতলা, দরবেশ মসজিদ এলাকা, খেঁজুর তলার দিকে চলে গেছে। '
নুর হোসেন বুলেট নামে এক চট্টগ্রাম প্রবাসী জানান, 'ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাট হাজারীসহ পুরো চট্টগ্রামের মানুষের মিলনমেলা বসতো নিজাম হোটেলকে ঘিরে। প্রথম দিকে পানের খিলির জন্য প্রবাসীরা আসতেন এখানে। পানের পিক ফেলে পরিবেশ নোংরা করার অভিযোগে সিইডি-পুলিশের'র তাড়াও খেতেন অনেকে। কেউ কেউ গ্রেফতারও হতেন। কালক্রমে এটি প্রবাসীদের মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়।'
মোহাম্মদ ইয়াকুব নামের এক চট্টগ্রাম প্রবাসী শ্রমিক বলেন, 'আমি কোম্পানিতে চাকুরী করি। বেতন দেয় দৈনিক ৮০ দিরহাম। আর এখানে দাঁড়িয়ে যদি কাজ পাই তবে দৈনিক বেতন পড়ে ১৫০ দিরহাম। এখানে যারা কাজ করে তাদের বেশির ভাগ নির্মাণ শ্রমিক, হেল্পার ও প্লাম্বার। কোম্পানির কাজ না থাকলে নিয়মিত এখানে এসে দাঁড়ায় শ্রমিকরা। আবার ব্যালেন্স ও পান বেচা কেনার জন্যও অনেকে এখানে আসেন।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ এপ্রিল, ২০১৫/মাহবুব