মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় নভেম্বরের ১৫-১৯ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য ৫ দিনব্যাপী শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের সম্মেলনের সংকট কাটিয়ে উঠতে হোস্ট সংগঠনকে যে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে, তা প্রতিপালনে যথাযথ পদক্ষেপগ্রহণ দূরের কথা, উল্টো হোস্ট সংগঠন 'ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব' এর গুরুত্বপূর্ণ তিন পরিচালক গত শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগকারী ওই তিন পরিচালক হলেন- নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের নাতি ও জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য গভর্নর নির্বাচনে ডেমক্র্যাটিক পার্টি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী রাজনীতিক-সমাজকর্মী জ্যাসন কার্টার, প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠক লোরা টার্নার সিডেল এবং পরিবেশকর্মী উইলিস পোটস।
এদিকে, এ ঘটনার ৩ সপ্তাহ আগে এই সংগঠনের চেয়ারম্যানের পদসহ সকল দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। আটলান্টায় নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মেলনের হোস্ট করার জন্য ড. ইউনূসের আগ্রহেই ২০১৩ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকান মোহাম্মদ ভূইয়ার নেতৃত্বে আটলান্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় 'ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব।'
একইবছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে এই সংস্থাকে নোবেল সম্মেলনের হোস্ট হিসেবে মনোনীত করা হয় মূলত: ড. ইউনূসের সম্পৃক্ততার কারণে। কিন্তু সমস্যার উদ্ভব হয় এ বছরের শুরুতে। ওই সম্মেলনের সাথে নিজের সম্পর্ক ছেদ করার ঘোষণা দেন আটলান্টা সিটি মেয়র কাসিম রীড। তিনি মোহাম্মদ ভূইয়ার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ করেছেন।
মোহাম্মদ ভূইয়াকে হোস্ট সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে অপসারণ করা হলেই আটলান্টা সিটিসহ তিনি নিজে আবারো সম্মেলনের সকল কাজে সক্রিয় হবেন বলে উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ ভূইয়া মেয়রের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, 'মেয়রের ব্যবসায়িক বন্ধুকে সম্মেলনের সমস্ত কাজের দায়িত্ব অর্পণ না করায় আমার বিরুদ্ধে তিনি অবান্তর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।'
মেয়রের ওই ঘোষণার পর সম্মেলনের অনেক স্পন্সর নিজেদের গুটিয়ে নেন। এমনি অবস্থায় মোহাম্মদ ভূইয়া ড. ইউনূসের নামে একটি বিবৃতি প্রদান করেন মিডিয়ায়। ড. ইউনূস ওই বিবৃতির সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং একইসাথে মোহাম্মদ ভূইয়ার সাথে তার সকল সম্পর্ক ছেদ করার কথা মিডিয়াকে জানিয়েছেন।
এমনি টানাপোড়েনের মধ্যে এই নোবেল সম্মেলনের স্থায়ী সাচিবালয় রোমে চলতি মাসের ২-৩ তারিখে উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠকে আটলান্টার হোস্ট সংগঠনকে এক সপ্তাহের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি সকলের মধ্যে সমঝোতা না হয় তাহলে অন্য কোন সিটিতে এই সম্মেলনের হোস্ট করার হুমকিও রয়েছে। সে সময় শেষ হলো ৯ মে।
মোহাম্মদ ভূইয়া নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরে দাঁড়াতে না চাওয়ায় তার সংস্থার শীর্ষস্থানীয় এই ৩ কর্মকর্তাও পদত্যাগ করলেন। ফলে আটলান্টা সম্মেলন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটলো না। ধারণা করা হচ্ছে, রোম কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই তাদের নয়া সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। পদত্যাগ প্রসঙ্গে এই ৩ কর্মকর্তা বলেছেন, 'আটলান্টার মেয়র যে সব কারণে মোহাম্মদ ভূইয়াকে মূল দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি উঠিয়েছেন, ঠিক একই কারণে আমরাও এই সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। আমরা চেয়েছি, সম্মেলন অনুষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে মেয়রের সাথে সমঝোতা করতে। কিন্তু মোহাম্মদ ভূইয়া বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি হননি।'
তারা পদত্যাগ সম্পর্কে প্রদত্ত বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করেছেন যে, নোবেল শান্তি পুরস্কার সম্মেলনের কাজ করেছেন এমন অনেককে ইতিমধ্যেই সরিয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ ভূইয়া। সে সব স্বেচ্ছাসেবকরাও চাচ্ছেন অন্য কোন সংস্থার নেতৃত্বে আটলান্টাতেই নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মেলনের আয়োজন করতে।
এই ৩ জনের পদত্যাগের পর শনিবার ৯ মে মোহাম্মদ ভূইয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাবের পরিচালনা সংস্থার দায়িত্বে থেকেও তারা নিজেদের স্বার্থে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়েছেন। এমনকি ড. ইউনূসের পদত্যাগের পর কার্টার এ সংস্থার কার্যক্রমে সক্রিয় হতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।' সম্মেলনের প্রতি রোমে অবস্থিত স্থায়ী সচিবালয়ের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয় এমন কথাবার্তা বলেছেন পদত্যাগী অপর পরিচালক সিডেল-এ অভিযোগও রয়েছে ভূইয়ার বিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত: 'ইউনূস ক্রিয়েটিভ ল্যাব' নামক সংস্থাটির তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অপর কর্মকর্তা হলেন শামিমা আমিন এবং তিনি হলেন মোহাম্মদ ভূইয়ার স্ত্রী অর্থাৎ সংগৃহিত তহবিলের হিসাব থাকবে স্বামী-স্ত্রীর কাছে। এর ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংকট হতে পারে আশংকায় আটলান্টার মেয়র মোহাম্মদ ভূইয়াকে সম্মেলনের হোস্ট কমিটি থেকে সরিয়ে অন্য কাউকে নিযুক্ত করার শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু সেই শর্ত মানতে নারাজ মোহাম্মদ ভূইয়া। আর এ নিয়েই আটলান্টায় নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মেলন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১০ মে, ২০১৫/মাহবুব