‘সারাবিশ্বে এখন গণতন্ত্র এবং সেক্যুলারিজমের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের জন্যে ত্যাগ স্বীকারের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছেন বাংলাদেশের এই নেত্রী’-এ অভিমত ৮১ বছর বয়েসী লেখক-সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরীর।
মহান ভাষা দিবসের অমর সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, ‘আমার যে বিশ্বাস তা যেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লালন এবং লেখনীর মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সামনে উপস্থাপন করে যেতে পারি-এটিই আমার একমাত্র চাওয়া।’
গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতর সংলগ্ন বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ: অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত’ শীর্ষক আলোচনায় একমাত্র বক্তা ছিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী। ‘স্থায়ী মিশনের পিআর লেকচার সিরিজ-২০১৫’-তে গাফফার চৌধুরী দীর্ঘ বক্তব্যে বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং স্বাধীনতার জন্যে বাঙালির রক্তদানের ধারাবাহিক ঘটনাবলি প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে পশ্চিমা হায়েনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা যদি স্বাধীন না হতাম তাহলে আমাদের এই ভূখণ্ডটিতেও তালেবানের উদয় হতো, তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত হতো।’ ‘মৌলবাদীদের অপতৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে যতই জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হউক না কেন আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। বাঙালিরা অতীতের মতই মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা ও জাতিসত্ত্বা অক্ষুণ্ন রাখবেই’-দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন গাফফার চৌধুরী।
গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে, সারাবিশ্বে গণতন্ত্র এবং সেক্যুলারিজমের প্রতীক হয়ে আছেন শেখ হাসিনা। অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে একটি মশাল ধরে রেখেছেন শেখ হাসিনা। এ যাবৎ নয়বার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু তিনি সে মশাল ছাড়েননি। যে মশাল জ্বালিয়ে গেছেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করেছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশের জন্যে। সে লক্ষ্যে এখনও অবিচল রয়েছেন বাঙালিরা। তাই একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা ১০০টি মন্দির ভাঙলেও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা মুছে ফেলা যাবে না’।
গাফফার চৌধুরীকে বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে একটি ‘আজীবন সম্মাননা ক্রেস্ট’ প্রদান করা হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে নিরন্তরভাবে সরব থাকার জন্যে। বিপুল করতালির মধ্যে এটি হস্তান্তর করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন।
ইফতারের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্র ওলেমা লীগের সভাপতি মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের মাঝে ছিলেন লেখক-কলামিস্ট বেলাল বেগ, প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সেক্রেটারি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও মূলধারার রাজনীতিক ড. নূরন্নবী, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার এবং সেক্রেটারি ইমদাদ চৌধুরী, ডেমক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদস্য খোরশেদ খন্দকার, যুক্তরাষ্ট্র জাসদের সভাপতি আব্দুল মোসাব্বির এবং সেক্রেটারি নূরে আলম জিকু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ এবং সেক্রেটারি ফরিদ আলম, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল আহসান এবং সেক্রেটারি দর্পণ কবীর, যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের নেতা টমাস দুলু রায়, বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আলহাজ্জ নজমুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৪ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা