একুশের গানের রচয়িতা ও কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, ‘মওদুদিবাদ এবং ওহাবিবাদীদের যদি শক্ত হাতে প্রতিহত করা সম্ভব হয় তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তার কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হবেই। তবে দুর্নীতি দমনে সরকারকে আরও কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া দরকার।’
মঙ্গলবার বোস্টন সিটি সংলগ্ন নর্থ রিডিং এলাকার ম্যাথডিস্ট চার্চে নিউইংল্যান্ড আওয়ামী লীগের একাংশ আয়োজিত ‘ভবিষ্যত বাংলাদেশের ভালো মন্দ, স্বপ্ন ও শংকা’ শীর্ষক আলোচনায় একমাত্র বক্তা হিসেবে গাফ্ফার চৌধুরী আরও বলেন, ‘নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। ধর্মান্ধরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে এমনটি করে থাকে। একারণে, আমার ব্যাখাও ওরা মানতে নারাজ।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, নকশালরা আগে রাজনীতির আড়ালে গুপ্ত হত্যার মত অপকর্মে লিপ্ত হতো। এখন একইধারায় নৃশংসতা চালানো হচ্ছে। তবে তা করা হচ্ছে ধর্মের অপব্যাখার বেড়াজালে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ওসমান গনি সভাপতিত্ব করেন এবং মঞ্চে উপেবেশন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুহাস বড়ুয়া, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসিম পারভিন, সিনিয়র সদস্য ড. বিনয় পাল।
গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্য শেষে সভাপতির সমাপনী বক্তবের সময় উপস্থিত প্রবাসীরা কিছু প্রশ্ন করতে চান। এ সময় তাদেরকে জানানো হয় যে, ৩টি প্রশ্ন করা যেতে পারে। প্রথম প্রশ্ন করেন শফিকুল ইসলাম, ‘আপনি প্রথমে বাঙালি, তারপর মুসলমান।’ এর জবাবে গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, এটি আমি সব সময় বিশ্বাস করি। প্রথমে আমার জাতীয়তাবাদ। মানুষ অনেক সময় ধর্ম পরিবর্তন করে কিন্তু জাতীয়তাবাদ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
প্রবাসীরা আরও জানতে চান যে, ইসলামের বর্তমান ভাষা আগে কাফেররা ব্যবহার করতো। কাফেরদের দেবতার নামে আল্লাহর ৯৯ নাম হয়েছে? গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর জন্ম যদি বাংলাদেশে হতো, তাহলে ইসলামের ভাষাও হতো বাংলা। সে কারণে সৌদি আরবে ৪ হাজার বছর আগে থেকে চালু আরবী ভাষা হচ্ছে আমাদের ধর্মীয় ভাষা। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবার আগে কাফেররা আরবী ভাষা ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির এমন আত্মীকরণ ঘটেছে। আমি সে কথাই উল্লেখ করেছি নিউইয়র্কের একাডেমিক আলোচনায়।
গাফ্ফার চৌধুরীর এ জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কিছু প্রবাসী। তারা হৈ চৈ শুরুর চেষ্টা করলে পুলিশ এসে সকলকে শান্তি-শৃঙ্খলা মেনে চলার অনুরোধ জানায়।
গাফ্ফার চৌধুরীর নিউইয়র্কে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার ঢেউ বোস্টনেও ছড়িয়ে পড়লে ওই প্রবাসীরা এ সমাবেশে ছুটে এসেছিলেন। তবে তারা গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্য ধৈর্য সহকারে শ্রবণ করেন। যদিও গাফ্ফার চৌধুরীর উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে ওই প্রবাসীরা ক্ষুব্ধচিত্তে মিলনায়তন ত্যাগ করেন। বাইরে এসে তারা মিডিয়াকে বলেন যে, তারা কোন দলীয় পরিচয়ে এখানে আসেননি। নিউইয়র্কে প্রদত্ত বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে তারা নিজেদের ধর্মীয় অনুভূতির তাগিদে সরাসরি গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রশ্ন করতে এসেছিলেন। তবে আয়োজকরা জানান যে, ক্ষোভ জানানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করার মতলবে যারা এসেছিলেন তাদের প্রায় সকলেই জামাত-শিবিরের লোক।
বক্তব্য শুরুকরার আগে গাফ্ফার চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ রাখেন তার বক্তব্য সঠিকভাবে উপস্থাপনের জন্যে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৮ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা