বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের ঠকিয়ে বিপুল বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান 'ওয়ালমার্ট' তাদের ২৬৯টি স্টোর বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ১৫ জানুয়ারি ওয়ালমার্টের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়ার সময় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ হাজারসহ মোট ১৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারি বেকার হয়ে পড়বেন।
ওয়ালমার্ট অবশ্য জানায় যে, অন-লাইনের ব্যবসার প্রতি তারা অধিক মনোযোগ দিচ্ছে। এছাড়া সামনের বছর যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৫০টি সুপার সেন্টারসহ অন্যান্য দেশে মোট ৩০০টি স্টোর চালু করবে। এর ফলে বহুজাতিক এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ তেমন একটা হবে না বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে যারা চাকরি হারাবেন তাদেরকে পুনরায় নিয়োগের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মনে করছেন। এরফলে নতুন স্টোরে শ্রমিক বেতন বাবদ শুরু বছরে অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও শ্রমিক-অধিকার নিয়ে কর্মরতরা মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ কোম্পানিটি লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ২৬৯টি স্টোর এ বছরের মধ্যে বন্ধ করলেও সামগ্রিক ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে মাত্র ১% বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
২০১৩ সালেও এই কোম্পানি মুনাফা করেছে ৭ বিলিয়ন ডলার। ওই বছর বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকসহ ইউরোপ ও আমেরিকার শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক প্রদানের দাবিতে ওয়ালমার্টের সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। অনেক স্থানে কর্মবিরতিও পালিত হয়েছে। অনেক শ্রমিক জেলেও গেছেন। কিন্তু পারিশ্রমিক বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ আজ অবধি নেয়া হয়নি। এমনি বাংলাদেশে তাজরিন ফ্যাশন এবং রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ অথবা পুনর্বাসনের ব্যাপারেও ওয়ালমার্ট তেমন ভূমিকা রাখেনি।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের সঙ্গে মজুরির ব্যাপারে ওয়ালমার্টের প্রতারণা ও ধাপ্পাবাজির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া, নর্থ ক্যারলিনা, বোস্টন, মিশিগান, শিকাগোসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএনসহ শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলোতেও ওয়ালমার্টের সমালোচনামূলক সংবাদ-নিবন্ধ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এমনি অবস্থায় তারা ২৬৯ স্টোর বন্ধের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের কর্মহীন করে আরো অধিক মুনাফার ফন্দি এঁটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা