ফ্রান্সের প্যারিসে একটি সমৃদ্ধ বাংলা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলা কমিউনিটিতে মননশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে সাহিত্য সংগঠন 'অক্ষর'-এর আত্নপ্রকাশ। গত রবিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ল্য তেয়ার দু ত্ব (LE THEARE DU TEMPS) থিয়েটার হলে এক মনোজ্ঞ সংস্কৃতি সন্ধ্যার মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
প্যারিসে 'অক্ষর'র বীজ অঙ্কুরিত হয় মূলত প্রায় দু’ বছর আগে। শুরুটা কয়েকজন কবিতা-প্রেমী বন্ধুদের সাহিত্য আড্ডার মধ্যদিয়ে। সেই আড্ডায় নিয়মিত নতুন-পুরাতন বন্ধুদের যাওয়া আসার মাঝখানে কয়েকজন বন্ধুর আড্ডা স্থায়ীরূপ নেয় Centre national d'art et de culture Georges-Pompidou (সংক্ষেপে 'সেন্টার জর্জ পম্পেডু')'র নিচতলায়।
এখানে প্রতিমাসেই বসে কবিতা পাঠের আসর। এই আসরে অংশগ্রহণকারীরা ধীরে ধীরে স্বপ্ন দেখে, কবিতার সুধা নিজেদের মধ্য থেকে প্যারিসের বাংলা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে দিতে। তারা উপলব্ধি করেন সৃজনশীল সাহিত্য, সাংস্কৃতিক চর্চা ও পাঠ্যাভ্যাসের ভেতর দিয়ে একটি মননশীল জাতি গঠনের যে উত্তাল স্রোতপ্রবাহিত ছিল তা আজ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অবক্ষয়, অপসংস্কৃতির প্রভাবে মন্থরগতি। এই মন্থরতাকে প্রবাহের মাধ্যমে পুনঃজাগরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে বসবাসরত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চিন্তা ধারার বাংলাভাষী মানুষ একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ার চেষ্টা করছে। এই সামাজিক আন্দোলনের ক্ষুদ্র একটি অংশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপলব্ধি থেকেই মূলত ‘অক্ষর’র সৃষ্টি। মানুষের জ্ঞান চর্চার ইতিহাস সুদীর্ঘ।কিন্তু জ্ঞান লিপিবদ্ধের যাত্রা শুরু অক্ষর আবিস্কারের মাধ্যমে।অক্ষর সৃষ্টির ফলশ্রুতিতেই আজ জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখার এই বিকাশমান রূপ। অক্ষর জ্ঞান অর্জনের ভেতর দিয়েই মানুষের জ্ঞানের বিস্তৃত ভূবনে প্রবেশ।
তাই ‘অক্ষর’ নামকরণের মাধ্যমে এই আত্মপ্রকাশ এবং 'অক্ষর'-কে বিন্দু করেই 'অক্ষর'র সহযাত্রীরা তাদের লক্ষ্য ও প্রয়াসকে অব্যাহত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। 'অক্ষর'র সতীর্থরা কেউ নিজেদেরকে সাহিত্য ও সংস্কৃতিক বোদ্ধা ব্যক্তিত্ব মনে করে না। কিন্তু তারা সাহিত্য ও সংস্কৃতি অনুরাগী। 'অক্ষর' তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্যারিসে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে মূলধারার সাহিত্য সংস্কৃতি ও পাঠচর্চার বিকাশ ঘটাতে চায়।
অদূর ভবিষ্যতে কমিউনিটির সচেতন মানুষের সার্বিক সহায়তা ও পরামর্শে প্যারিসে একটি স্বাতন্ত্র মতাদর্শের স্থায়ী বাংলা পাঠাগার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য স্থির করেছে। এই পাঠাগার শুধু একটি পড়াশুনার কেন্দ্রস্থলই হবে না; এটি হবে প্যারিসে অবস্থানরত সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা এবং জ্ঞান পিপাসু বাঙালিদের মননশীল আড্ডাস্থল। 'অক্ষর' বিশ্বাস করে তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে কমিউনিটির সৃজনশীল মানুষদের সব সময় পাশে পাবেন।
চলতি আসরে 'অক্ষর' সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় আগতদের মুগ্ধ করে কবিতা আবৃত্তি, পুঁথি, গল্প ও প্রবন্ধের অংশ বিশেষ পাঠ এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীত। অংশগ্রহণ করেন রোজী মজুমদার, শম্পা বড়ুয়া, শাহাদাত হোসেন রনি, বদরুজ্জামান জামান, মোহিত জ্যোতি, সাইফুল ইসলাম, মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ, ওয়াহিদুজ্জামান, গিয়াস বাবু, আবুল কালাম আজাদ, মৌসুমী ভট্টাচার্য্য, নীলিমা সেন, অমিয়া রহমান, সাগর বড়ুয়া, পুঁথি পাঠ করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় পুঁথিশিল্পী ও গবেষক কাব্য কামরুল প্রমুখ। শিল্পীদের তবলায় সহযোগিতা করেন প্লাসিড শিপন। মঞ্চ সজ্জায় ছিলেন মোহিত জ্যোতি এবং আলোকচিত্রে সহযোগিতা করেন সুমন আজাদ।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাকে প্রাঞ্জলতায় পরিপূর্ণ করে সঞ্চালন করেন প্যারিসের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুনির কাদের। আর সার্বিক সহযোগিতায় একে প্রস্ফূটিত করেন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্য অনুরাগী হাসনাত জাহান।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা