নিউইয়র্কে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল আরেক বাংলাদেশির। ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাজমা খানমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুনের এ নিষ্ঠুর ঘটনা ঘঠে বুধবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টা) সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা হিলস এলাকায়। নিজ বাসার দু’ব্লকের মধ্যে ১৬০-১২ নরম্যাল রোডে নাজমা খানমকে হত্যা করা হয়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় নাজমা খানম আক্রান্ত হন। শতগজ পেছনেই হাঁটছিলেন তার স্বামী।
পুুলিশ জানায়, 'আমাকে মেরে ফেললো, বাঁচাও-বাঁচাও' নাজমা খানমের এমন আর্তচিৎকারে স্বামী দৌড়ে কাছে আসার আগেই দুর্বৃত্ত কেটে পড়ে। তার স্বামী ভেবেছিলেন যে, তার স্ত্রী হয়তো ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। কিন্তু কাছে এসে দেখতে পান যে, বুক থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। সাথে সাথে ফোন করেন পুলিশকে। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশ এসে নাজমা খানকে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন।
নিউইয়র্ক মুসলিম পুলিশ অফিসার এসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ কবিরের খালা নাজমা খানমের ঘাতকের সন্ধানে পুলিশ মাঠে নেমেছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে।
নিহত নাজমা খানম ৩ সন্তানের মা। তার এক সন্তান নিউইয়র্কে এবং অপর দু’জন থাকেন বাংলাদেশে।
গত ১৩ আগস্ট এই এলাকার কাছাকাছি দূরত্বে ওজনপার্কে গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশি ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকঞ্জি (৫৫) এবং তার সাথী তারা মিয়াকে (৬৪)। ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অস্কার মরেল (৩৫) নামক এক হিসপ্যানিককে।
নাজমা খানমের আরেক ভাগ্নে মোহাম্মদ রহমান দাবি করেন, 'তার খালাকেও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটিও হেইট ক্রাইম। কারণ তিনি মুসলিম পোশাকে হাঁটছিলেন। এছাড়া তার কাছে থেকে কিছুই নেয়নি দুর্বৃত্তটি।'
তদন্ত কর্মকর্তারা অবশ্য তা স্বীকার করেননি। তারা বলেছেন, ‘এক্ষুণি হেইট ক্রাইম’ হিসেবে অভিহিত করার মত কিছুই উদঘাটিত হয়নি।’
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত ইমামসহ দুই বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনাকেও ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এ নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মুসলিম আমেরিকানরা ক্ষুব্ধ। তারা প্রবাসীদের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন।
অকুস্থলে এবং তার আশপাশের সিসিটিভিসহ সবকিছু পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে জানা গেছে।
নাজমা খানমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সংবাদ মূলধারার সবকটি টিভি এবং জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে। ইমাম হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিনের ব্যবধানে অকারণে আরেক বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনায় প্রবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
কুইন্সের জ্যামাইকা এবং ওজনপার্ক এলাকায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি বাস করছেন। সকলেই বাংলাদেশি পোশাকে চলাফেরা করেন। জাতিগতভাবে বাঙালিরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও নিজেদের অবস্থানের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। ‘এতদেত্ত্বেও চোরাগুপ্তা হামলার শিকার হওয়ায় কেউই এখন নিরাপদ বোধ করছেন না’-মন্তব্য কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আকবর হোসেনের। এই এলাকায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করছেন আকবর। তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম, এটি আমাদের নিরাপদ আবাস। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনায় একেবারেই অপরিচিত লাগছে এলাকাটি।’
নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, ঘাতকের গ্রেফতারে সহায়তার জন্যে। কেউ কিছু জানলে তা যেন ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে ফোন করে জানান, সে আহবানও জানানো হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬