কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত বাংলাদেশি নাজমা খানমের (৬০) ঘাতক ৭২ ঘণ্টা পরও শনাক্ত এবং গ্রেফতার না হওয়ায় নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একইসাথে মুসলিম-আমেরিকানরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিউইয়র্কের পুলিশ ১০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঘাতকের সন্ধানদাতার জন্যে।
গত বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকায় নিজ বাসার কাছে ঘাতকের শিকার হন নাজমা খানম। বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি ধারালো একটি ছুরির ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত বুকে বিদ্ধ অবস্থায় পান বলে চিকিৎসকরা জানান। বুকে বিদ্ধ অবস্থায় ছুরিটি ভেঙ্গে যায় বলে ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন।
এদিকে, নাজমা খানমের নামাজে জানাযা গত শুক্রবার বাদ জুমআ জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিশা জেমস এ সময় বলেন, ‘এটি কোন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এরকম হত্যাকাণ্ড প্রায়ই ঘটছে। তবে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি নাজমা খানমকের হত্যার মোটিভ সম্পর্কে।’ এ সময় সকলে সমস্বরে স্লোগান ধরেন, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
ইউএস কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রভাবশালী সদস্য কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং (ডেমক্র্যাট-নিউইয়র্ক) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ছুরিকাঘাতে নাজমা খানমকে হত্যার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এরকম জঘন্য ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এটি কখনো কাম্য হতে পারে না।’
কংগ্রেসওম্যান বলেন, এর আগে ইমাম আকঞ্জি এবং তারা মিয়াকে খুনের সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তকে দ্রুত গ্রেফতার করায় আমি নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করছি। আমি আশা রাখি যে, একই উদ্যমে খুব দ্রুত নাজমা খানমের ঘাতকও গ্রেফতার হবে। তিনি বলেন, এই বর্বরতার ভিকটিম পরিবার এবং বাংলাদেশি-আমেরিকানদের পাশে রয়েছি আমি।
জানাযায় নাজমা খানমের স্বামী অধ্যাপক মো. শামসুল আলম খান (৭৫) স্ত্রীর জন্যে সকলের দোয়া কামনার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য যে, স্ত্রীকে রক্ষা করতে পারিনি।’
জানাযার পর একইদিন রাতে আমিরাতের ফ্লাইটে লাশ পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। দাফন করা হবে শরিয়তপুর জেলার পালং ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে। লাশের সাথে (একই ফ্লাইটে টিকিট না পেয়ে কাতার এয়ারওয়েজে) গেছেন অধ্যাপক শামসুল আলম খান এবং তাদের কনিষ্ঠ পুত্র নাইমুল আলম খান।
৮ বছর আগে তারা ডিভি লটারিতে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। গত জুন মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। আসছে ডিসেম্বরে তাদের বাংলাদেশে যাবার কথা ছিল কনিষ্ঠ পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ