২৫ মার্চ, ২০১৭ ২২:০১
গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের দৃঢ় প্রত্যয়

ব্যাংককে পালিত হলো গণহত্যা দিবস

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ব্যাংককে পালিত হলো গণহত্যা দিবস

'বাঙালি জাতিসত্তাকে সুপরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালরাত্রে পাকিস্তানি সশস্ত্র হানাদার বাহিনী বর্বরতম ও ঘৃণিত  হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এটা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি রাখে।'

আজ শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যাংককে ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম এসব কথা বলেন। 

২৫শে মার্চের কালোরাত্রে বাঙালি জাতির উপর সংঘটিত নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে স্বীকৃতি আদায়ের পক্ষে কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক ২৫ মার্চকে জাতীয় ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দানের ঘটনা ঐতিহাসিক। 

এই ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মূনা বলেন, যুগোস্লাভিয়া, রাওয়ান্ডা, কম্বোডিয়াসহ সাম্প্রতিক গণহত্যাগুলোর মতো ২৫শে মার্চ জাতিগত বাঙালিদের গণহত্যার ঘৃণিত ইতিহাসও উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাস থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় সেমিনারের আয়োজন করে গণসচেতনতা সৃষ্টি করবে। 

তিনি আরও বলেন, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে একদিকে যেমন ২৫ মার্চ এবং মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত নির্দেশিত এবং পরিকল্পিত গণহত্যা সম্পর্কে বাংলাদেশে এবং প্রবাসে নতুন প্রজন্ম অবগত হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে এই গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে সচেতনতা তৈরি করতে সাহায্য করবে।

রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন এবং পূর্ববর্তী ঐতিহাসক গণহত্যাগুলোর পাবলিক ক্যাম্পেইন স্ট্র্যাটেজির আলোকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিসরেও ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার বিভিন্ন মিডিয়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং মানবিক সংস্থার আঞ্চলিক দফতরগুলোর সাথে এ বিষয়ে কাজ করে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

রাষ্ট্রদূত মুনা উপস্থিত প্রবাসীদের ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’-কে স্বীকৃতির পক্ষে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায় জনমত সৃষ্টির জন্য দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দূতাবাসের সাথে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গ এবং ২৫ মার্চের কালরাত্রে গণহত্যার শিকার ও মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন তেলাওয়াত ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। 

আলোচনা সভার শুরুতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞে নিহত শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তাছাড়া ৭১’র গণহত্যার উপর নির্মিত “৭১’র গণহত্যা ও বধ্যভূমি” শীর্ষক একটি বিশেষ ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং থাইল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। 

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি বাদল তালুকদার তার বক্তব্যে দূতাবাসের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং থাইল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নতুন প্রজন্মকে ৭১’র গণহত্যা দিবস ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ওয়াকিবাহাল করার বিষয়ে প্রবাসীদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।  

বক্তারা ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। 

থাইল্যান্ডে বসবাসরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী, থাই নাগরিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। 

‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণীসমূহ থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে পাঠ করে শোনান।

বিডি প্রতিদিন/২৫ মার্চ ২০১৭/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর