প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ব প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুয়েত সিটির রাজধানী হোটেলে ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ব প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হাফেজ আলী শাহজাহান অসুস্থ থাকায় তার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সত্যরঞ্জন সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ রফিকুল ইসলাম ভুলু, আনিস, শরিফ উদ্দিন, শাহ নেওয়াজ নজরুল, পিদ্দু, আব্দুস ছোবহান, আব্দুর রাজ্জাক, আতাউল গনি মামুন, বুলবুল, আল আমিন চৌধুরী স্বপন, আব্দুর রব মাওলা, জাহিদসহ অন্যরা বাংলাদেশ বিশ্ব প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও সংগঠনের সভাপতি হাফেজ আলী শাহজাহান এর অশেষ অবদানের কথা তুলে ধরেন।
এক বিবরনীর মাধ্যমে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে, রেমিটেন্সও বাড়ছে তবে তা ক্রমহৃাসমান হারে। অর্থ্যাৎ দুইজনের আয় তিনজনের মধ্যে ভাগাভাগি হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে এই ছদ্মবেশী বেরাকত্ব প্রকট, যা আমাদের শ্রম ও মেধার অপচয়। অথচ ঐ দুইজনের কর্মসংস্থানের পিছনে পাঁচজনেরই ভিটে মাটি বেঁচতে হয়েছে, যা তার জীবনে পুনরুদ্ধারের কোন সম্ভাবনা নেই।
জাতির অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের ২১ দফা দাবি যা পূর্বে ১৯৯৫ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং দেশে এবং বিদেশে জনমত সংগঠিত করার ফলে কয়েকটি সরকার মেনে নিলেও বর্তমানে বাকী এবং সময়ের প্রেক্ষিতে নতুন করে ১৬ দফা দাবি পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে তুলে ধরার প্রস্তুতি চলছে। দাবিগুলো হচ্ছে: দুঃস্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের সাহায্যের ও সহযোগিতা জন্য “প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট” গঠন করা, শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য প্রবাসীদের সরকারি জমি বরাদ্দ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সুবিধাসহ ঋণ প্রদান করা এবং বিদেশে চাকরি নিয়ে গমণকারীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান করতে হবে, চাকরি নিয়ে বিদেশে গমনকারীদের এবং ছুটিতে যাতায়াতকালীন ভ্রমণ কর মওকুফ করতে হবে, প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের উপর রেমিটেন্স বোনাস প্রদান করে হুন্ডির মাধ্যমে বেআইনি অর্থ বিনিময় কঠোর ভাবে দমন করতে হবে, বাসস্থান নির্মানের জন্য প্রবাসীদের সরকারী জমি বরাদ্দ সহ সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে, প্রতিটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবাসীদের পোষ্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ভর্তির সুযোগ দিয়ে দেশের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার সুযোগ দিতে হবে, দূতাবাস কর্তৃক ব্যাপক প্রচারাভিযানের মাধম্যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ও স্নাতক পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সকল দেশে বিদেশী স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, প্রবাসীরা কর্মজীবন থেকে স্থায়ীভাবে দেশে ফেরত আসাকালীন সময়ে ব্যবহার্য্য সামগ্রী বিনা শুল্কে দেশে নেওয়ার অনুমতি প্রদান করতে হবে, বিমানবন্দরসমূহে প্রবাসীদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান এবং যাতায়তের ক্ষেত্রে শুল্ক কর্তৃপক্ষের অযথা হয়রানি বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে, বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসৎ আদম ব্যবসায়ী ও ট্রাভেল এজেন্টদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে হবে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য এবং সুস্থ চিত্ত বিনোদনের লক্ষ্যে দুতাবাস কর্তৃক নিজস্ব অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থা করতে হবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, চিকিৎসা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবাসী ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য নূন্যতম ১০% কোটা বরাদ্দ করতে হবে, ভোটার কার্ড, স্মার্ট কার্ড ইত্যাদি প্রাপ্তির জন্য দেশের মধ্যে নির্ধারিত সময় থাকলেও, প্রবাসীদের জন্য সেটা সবসময় খোলা রাখতে হবে এবং এসকল সুবিধা প্রাপ্তির জন্য তাৎক্ষণিক প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া প্রবাসীরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বা ভ্রমণের সময় যাতে অন্যান্য সেবা জরুরী ভিত্তিতে পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে, “প্রবাসী ব্যাংকের” মাধ্যমেই প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমানের উপর প্রবাসীদের ৭৫% লোন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে, বিদেশে যারা ভিসা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দূতাবাস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের “ভিসা” এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হোক এবং তাদের নাম দূতাবাসের নোটিস বোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, ভিসার জন্য নির্ধারিত অর্থ ও কোম্পানীর নামসহ কোম্পানীর সকল তথ্য এই সব ভিসা এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে, সকল লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে নির্ধারিত করা হোক এবং বিশ বছরের উর্দ্ধকাল যাবৎ যারা বিদেশে অবস্থান করবে তাদের বিশেষ পরিচয় পত্রের মাধ্যমে সরকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/১ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল