এজেন্ডা ২০৩০ এর সফল বাস্তবায়নে এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উত্তরণ টেকসই করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
ইকোসকের ‘৪র্থ উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) ফোরাম’ এর চলতি অধিবেশনের সাইডলাইনে ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো ও এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রায়ন (Graduation, International Support Measures (ISMs) and Leveraging implementation of Sustainable Development Goals)’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীরা এই আহ্বান জানান। তারা উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থার নীতিগত বিষয়গুলো পুন:বিবেচনা করে উদারভাবে এ সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান।
জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ ও ক্যাবো ভারদে স্থায়ী মিশন এবং অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি), জাতিসংঘের এলডিসি, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় এবং ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দফতর সংলগ্ন মিলেনিয়াম হোটেলে এই ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ইভেন্টটিতে কী-নোট স্পীচ প্রদান করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন জাতিসংঘে ক্যাবো ভারদের স্থায়ী প্রতিনিধি জোসে লুইস ফিয়ালহো রোচা (José Luis Fialho Rocha) আঙটাডের মহা-সচিব মুখিসা কিটুয়ি (Mukhisa Kituyi), জাতিসংঘের এলডিসি, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি ফেকিটামোইলোয়া কাটোয়া উটয়কামানু (Fekitamoeloa Katoa ‘Utoikamanu), ওইসিডি’র পরিচালক জর্জ মরিরা দ্য সিলভা (Jorge Moreira da Silva) এবং জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভোলপমেন্ট পলিসি’র প্রধান রোনাল্ড মোলেরাস (Roland Mollerus)। অনুষ্ঠানটির মডারেটর ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মানোয়ার আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও সাফল্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণই বাংলাদেশের সর্বশেষ লক্ষ্য নয়; আমরা উত্তরণকে টেকসই ও স্থায়ী করে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করতে চাই। এসকল ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদার সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে স্থায়ী প্রতিনিধি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে এলডিসি ক্যাটাগরি সৃষ্টি এবং তৎপরবর্তী উত্তরণ মেকানিজমসমূহের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে তার অভীষ্ঠ উন্নয়ন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলছে. আর এরফলেই ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে প্রতিটি সূচকে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
মুখ্য সচিব এজেন্ডা ২০৩০ এর পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণ পথে থাকা দেশগুলোর উত্তরণ বাধাহীন, মসৃণ ও টেকসই করতে হবে মর্মে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থার উদার ও বাধাহীন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
টেকসই লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহ যাতে প্রযুক্তি ও জ্ঞান হস্তান্তরে এগিয়ে আসে সে বিষয়ের উপরও জোর দেন তিনি। এই দেশগুলোর প্রতি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর আরও উদাত্ত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মুখ্য সচিব।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা না থাকলেও বাংলাদেশ এর বিরূপ প্রভাবের শিকার উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, এক্ষেত্রে আমরা উত্তরণকালীন ও উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য আরও বাড়তি নীতিগত ও আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
ক্যাবো ভারদের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত জোসে লুইস ফিয়ালহো রোচা তার দেশের উত্তরণ সময়কালের এবং উত্তরণ পরবর্তী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। নিজ দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সদ্য উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর উত্তরণ পথ মসৃণ এবং টেকসই করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পদক্ষেপসমূহ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, উন্নয়ন অংশীদার ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমন্বয়ে উত্তরণ সময়ের জন্য একটি ‘ট্রানজিশন সাপোর্ট টিম’ প্রণয়নের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আঙ্কটাডের মহা-সচিব মুখিসা কিটুয়ি উত্তরণ টেকসই করতে ডিজিটাল ইকোনমি সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন। দেশগুলোর ই-কর্মাসের প্রস্তুতি, সক্ষমতা বিনির্মাণের উপরও জোর দেন তিনি। তিনি টেকসই উন্নয়ন অর্থায়নে জাতিসংঘ উন্নয়ন ব্যবস্থা আরও কিভাবে ভালো সমর্থন যোগাতে পাওে তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে অভিমত প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি’র প্রধান রোনাল্ড মোলেরাস উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য একটি কনসালটেটিভ মেকানিজম তৈরি করার কথা উল্লেখ করেন। এই কনসালটেটিভ মেকানিজম সংশ্লিষ্ট দেশ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামোর সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে যা ওই দেশ সমূহের উন্নয়ন চাহিদা নিরূপন করে এর সঠিক তথ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরবে।
দেশসমূহের উত্তরণকালীন সুবিধাদি যাতে আরও বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আসন্ন ডব্লিউটিওর সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে মর্মে উল্লেখ করেন রোনাল্ড মোলেরাস।
জাতিসংঘের এলডিসি, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি ফেকিটামোইলোয়া কাটোয়া উটয়কামানু উত্তরণশীল দেশগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করে উন্নয়ন সহযোগিতার চাহিদা জানানোর কথা বলেন।
এলডিসিদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সহায়তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে ওডিএ প্রদানকারী দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি’র পরিচালক জর্জ মরিরা দ্য সিলভা বলেন, উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এই ধারার পরিবর্তন দরকার এবং উত্তরণশীল দেশগুলোকে অবশ্যই সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে।
এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়ন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণসহ সামগ্রিক উন্নয়ন অভিযাত্রায় যাতে কোন দেশ যাতে পিছিয়ে না থাকে সে লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্যানেল আলোচকগণ।
উল্লেখ্য গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া এফএফডির ৪র্থ ফোরাম ১৮ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। অনুষ্ঠানটিতে এফএফডির ৪র্থ ফোরামে যোগদানকারী বাংলাদেশ ডেলিগেশনের সদস্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম