১৫ জুলাই, ২০১৯ ১৯:৫১

বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়: পরিকল্পনামন্ত্রী

এনআরবি নিউজ, নিউইয়ক থেকে:

বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনা মন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে আমরা আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উপনীত হয়েছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। 

রবিবার নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে “এনআরবি এনগেজমেন্ট: দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড” শীর্ষক দিনব্যাপী এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। 

দেশের উন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ জোরদার করার লক্ষ্যে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আয়োজনে এই সেমিনারটিতে সহ-আয়োজক ছিল এটুআই, কেবিনেট ডিভিশন, আইসিটি ডিভিশন, ইউএসএইড, ইউএনডিপি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থা ব্রিজ টু বাংলাদেশ।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা।

কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ আজ কৃষিতে স্বয়ংসম্পন্ন। চাল, ডাল, সবজি মাছ মাংসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনে আমরা উদাহরণ সৃষ্টি করেছি”। 

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যংকের সাম্প্রতিক তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'এডিবির হিসাব মতে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ।'

দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। তারা যে রেমিটেন্স প্রেরণ করছেন তা আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি”।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন প্রবাসে বসবাসরত বিভিন্ন পেশায় কর্মরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির জ্ঞান, মেধা ও অর্জিত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশ আর সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দেওয়া বাংলাদেশ নয়। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের উদাহরণ সৃষ্টিকারী এক উন্নয়নশীল দেশ। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত শিল্প-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে অদম্য গতিতে”।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ রেমিট্যান্স প্রেরণ ও বিনিয়োগ ছাড়াও বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অসমান্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার আওতায় বাংলাদেশে ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ জ্ঞান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র’ স্থাপন করার বিষয়ে বুয়েন্স আইরেসে বাপা+৪০ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটন ডিসি’র ইকোনমিক মিনিস্টার মো: শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ দেশে এখন বিনিয়োগসহ প্রবাসী অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশে যে অদম্য উন্নয়ন পরিক্রমা চলছে তাতে প্রবাসীরা অংশগ্রহণ করে দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রবাসীদের কল্যাণ ও সেবা এবং বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে মর্মে উল্লেখ করেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। তিনি বাংলাদেশে থাকা প্রবাসীদের সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে অর্থ আনার পরিবর্তে তা দেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। 

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ‘অ্যকসেস টু ইনফরমেশন’ (এটুআই) এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারতা, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ, বেজা, বেপজা, হাই-টেক পার্ক ও ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহার করে প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখতে পারেন তা তুলে ধরেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের জাতিসংঘ উইং-এর অতিরিক্ত সচিব ও এনআরবি টাক্সফোর্সের আহ্বায়ক সুলতানা আফরোজ। 

অনুষ্ঠানেতে রাজধানী ঢাকায় নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মেলনে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের অংশবিশেষ এবং সম্মেলনের সারাংশ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটির মতবিনিময় অংশে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার প্রবাসী বাংলাদেশী বিষয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং আয়োজকরা এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।

দিনব্যাপী আয়োজিত সেমিনাটির পরবর্তী অংশে ‘সাসটেইনঅ্যাবল এনার্জি: দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে আরেকটি সাইড ইভেন্টের আয়োজন করা হয় যেখানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ইডকল ও বিটুবি আয়োজিত এই ইভেন্টে প্রদত্ত বক্তব্যে জ্বালানী উপদেষ্টা প্রবাসী উদ্যোক্তাদের সামনে জিরো ওয়েস্ট কনসেপ্ট এর আওতায় বাংলাদেশে টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব নতুন শহর গড়ে তোলার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং এক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক বিনিয়োগের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর