২১ জুলাই, ২০১৯ ০৮:১১

রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখার আহ্বান বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক

রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখার আহ্বান বাংলাদেশের
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের ‘অ্যাশ সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্ননেন্স এন্ড ইন্নোভেশন’ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা অ্যাওয়ারনেস কনফারেন্স। এতে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। বোস্টনের অর্থনীতিবিদ ড. আন্দুল্লাহ শিবলী, ড. ডেভিড ড্যাপাইচ ও সমাজকর্মী নাসরিন শিবলী এই সেমিনারটির আয়োজন করেন।
 
সেমিনারটিতে প্রধান আলোচক ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যুটি কিভাবে অর্থনীতি, সমাজ ও পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে তা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্য বিড়ম্বিত, অমানবিক সহিংসতার স্বীকার এই মানুষগুলোকে আশ্রয় না দিলে তাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।
 
মন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্রম ইতিহাসসহ এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার এই সঙ্কটের সমাধানে এগিয়ে আসেনি। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ থেকে শুরু করে কোনো পদক্ষেপই তারা বাস্তবায়ন করেনি। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আস্থা ও নিরাপত্তা সৃষ্টিকারী কোনো অনুকূল পরিবেশই তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। পরিবর্তে মিয়ানমার বিষয়টি নিয়ে ব্লেইম গেম খেলছে।
 
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে সম্ভাব্য সব সবকিছুই বাংলাদেশ করে যাচ্ছে মর্মে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সঙ্কটের সমাধানে বিশ্ব বিবেককে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পদক্ষেপের পাশাপাশি এর সমাধানে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশ্বের খ্যাতনামা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ভূমিকা রাখতে হবে যাতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়।
 
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এর নিউইয়র্ক কার্যালয়ের পরিচালক নিনেথ কেলি রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জনগণের উদারতা, সহানভূতি ও মানবিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সঙ্কটে ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামোসহ যে সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে এবং এসকল পদক্ষেপে বাংলাদেশ যেভাবে সহায়তা করেছে তা বিস্তারিত উল্লেখ করেন কেলি। তিনি বক্তব্যের শুরুতে একটি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন দৃশ্যপট তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে নিজভূমি রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের চোখে যে ভয়, অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধিগণ দেখেছেন তা উল্লেখ করেন ইউএনএইচসিআর এর এই পরিচালক।
 
হার্ভার্ডের অ্যাশ সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্ননেন্স এর পরিচালক এন্থনি সাইচ রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক গবেষণা ও বিশ্লেষণধর্মী বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন। এই সঙ্কটের সমাধান না হলে এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ অবস্থার দিকে যেতে পারে তাও তুলে ধরেন অর্থনীতি ও রাজনীতির এই বিশ্লেষক।
 
আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের ভিতর দিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কটের আশু সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে আসে। প্রশ্নকর্তারা তাদের প্রশ্নের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিকে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান যা বিশ্বে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।
 
অনুষ্ঠানটিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীগ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হার্ভার্ড প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ইভেন্টটিকে ফলপ্রসূ করে তোলে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার শেষে মন্ত্রী স্থানীয় একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময় করেন। এই মতবিনিময় সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারাকে সম্পৃক্ত করতে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
 
উভয় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক এর কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা।
 
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর