৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৫:৩৫

ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রথমে প্যানিক বায়িং, এখন মৃত্যুভয়!

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রথমে প্যানিক বায়িং, এখন মৃত্যুভয়!

প্রতীকী ছবি

ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। সারাদিন খবরের দিকে চোখ রাখি। এরই মধ্যে নিজেদের পরিচিত কয়েকজন বন্ধু-আত্মীয় করোনাভাইরাসে জীবন হারিয়েছে। 

কিন্তু গত ডিসেম্বরে চীনে যখন প্রথম করোনার রোগী ধরা পরে তখনও ভাবিনি যুক্তরাজ্য পর্যন্ত এই রোগ আসবে। গত মার্চ যখন যুক্তরাজ্যে করোনা রোগী ধরা পড়লো তখন থেকেই একটু একটু ভয় লাগতে শুরু হয়েছিল। তবে সেই ভয় এখন আর একটু একটুতেই সীমাবন্ধ নেই, এখন প্রতিদিনই মনে হচ্ছে যে কোনো দিন মরে যাবো। এতো এতো মৃত্যুর সংবাদ ৫৮ বছরের জীবনে কখনো শুনিনি। করোনা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা এভাবেই শেয়ার করলেন, লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের বাসিন্দা আজগর মিয়া।

সম্প্রতি স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে আসে সাইমন আরিফ। সাইমন বলেন, প্রতিদিন এতো মৃত্যুর সংবাদ। গত ডিসেম্বরে যখন লন্ডনে এসেছিলাম, তখনও চোখে কতো স্বপ্ন। কিন্তু এখন শুধু মায়ের কাছে ফিরতে চাই। প্রতিদিন চোখ বন্ধ করলে মায়ের চেহারা চোখে ভেসে ওঠে। এমন মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে ফিরতে পারবো কিনা জানা নেই। 

আজগর মিয়া ও সাইমন আরিফের মতো যুক্তরাজ্যে বসবাসরত লাখ বাঙালি করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত। যুক্তরাজ্যের বাঙালি কমিউনিটির দেওয়া তথ্যমতে, গত দুই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে ৪১ জন বাঙালি করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া প্রায় কয়েক হাজার বাঙালি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাসায় কিংবা হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে আছেন। আর আক্রান্ত ও প্রাণ হারানো বাঙালিদের বেশিরভাগের বসবাস ইস্ট লন্ডনে।

এ বিষয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথভাবে কোয়ারেন্টাইন প্রকিয়া অনুসরণ করতে না পারায় ইস্ট লন্ডনে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। 

বিবিসির দেওয়া তথ্যমতে, ইস্ট লন্ডনের কাউন্সিলগুলোর মধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটে ৪০৬ জন, নিউহ্যাম ৬০৮ জন, হ্যাকনি ৪১২জন, ওয়ালথ্যাম ফরেস্ট ৪৪৩ জন, ব্যাকিং এলাকায় ২৪৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। 

বুধবার লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ বাঙালি গ্রোসারিশপগুলো খোলা। তবে সাধারণ মানুষের জন্য যে সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হয়েছে তাও মানছেন না অনেকে। 

এ বিষয়ে কথা হয় শ্যাডওয়েলে বাংলাদেশি গ্রোসারি শপে কিনতে আসা এক ক্রেতার সাথে। তিনি জানান, অনেক দিন ধরে কাজ বন্ধ। খাওয়া আর ঘুম। তাই মাঝে মাঝে দম বন্ধ লাগে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তো বাইরে আসতেই হয়। যতটুকু সতর্ক থাকার ততটুকুই আছি। 

করোনা থেকে সুস্থ্য হওয়া পূর্ব লন্ডনে বসবাসরত এমাদ আহমদ জানান, আমি যখন বিছানায় কাতরাচ্ছিলাম তখন আমার শ্বশুর রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মারা যান। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না, খুব কষ্ট হচ্ছিল। এ ভাইরাস কারও শরীরে তীব্রমাত্রায় আবার কারও শরীরে কিছুটা মৃদুভাবে আক্রমণ করে। আমার শরীরে করোনার আক্রমণ ততটা তীব্র ছিল না বলেই দ্রুত সুস্থ হয়েছি। 

অন্য আর একজন আক্রান্ত মো. উজ্জ্বল মিয়া টেলিফোনে জানান, জ্বর-বমির ভাব, খাবারে অরুচি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখান গরম পানির সাথে লেবুর রস, জুসসহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ওষুধ হিসেবে দেওয়া হয় শুধু প্যারাসিটামল। ১০ দিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরি। তবে এখনও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি। 

গত ২৩ মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যে তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেন। আর এ ঘোষণার পর দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ও ফার্মেসি খোলার অনুমোদন দেন দেশটির সরকার। কিন্তু যখন দেশটি এমন ঘোষণা দেন তার আগেই  ইউরোপের অন্য দুইটি দেশ স্পেন আর ইতালির পরিস্থিতি ততদিনে ভয়াবহ ছিল। স্পেন আর ইতালির মতো ভয়াবহ সময় পার করছে যুক্তরাজ্য। 

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে গত বুধবার পর্যন্ত ৬০ হাজার ৭৩৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও ভাইরাসটিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৯৭ জন। সুস্থ্য হয়েছে মাত্র ১৩৫ জন। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর