৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১০:৩৯

নিউইয়র্ক সিটিতে গাড়ির গতিসীমা কমানোর প্রতিবাদ

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

নিউইয়র্ক সিটিতে গাড়ির গতিসীমা কমানোর প্রতিবাদ

ওসমান চৌধুরী

সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর অভিপ্রায়ে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটান, কুইন্স, ব্রুকলীন, ব্রঙ্কস এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের ৯টি সড়কে গাড়ি চালানোর গতি কমিয়ে ৩০ থেকে ২৫ মাইল করা হলো। ৬ সপ্তাহের মধ্যে এই বিধির পরিপূরক সকল টেকনোলজি সংশ্লিষ্ট রাস্তায় স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হবে। 

১ সেপ্টেম্বর জারিকৃত নতুন এ বিধির কঠোর সমালোচনা করেছেন ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। করোনার কারণে ইতিমধ্যেই তারা নাজুক অবস্থায় নিপতিত হয়েছেন এবং জুন থেকে সিটির অধিকাংশ রেস্টুরেন্টের সামনের সড়কে চেয়ার-টেবিল বসানো হয়েছে-এ অবস্থায় ট্যাক্সি চালানো যাচ্ছে না স্বাভাবিক গতিতে, তার ওপর বেশকটি সড়কের গতি কমানোয় ট্যাক্সি ড্রাইভাররা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন ‘ইউনাইটেড ট্যাক্সি ড্রাইভার্স এসোসিয়েশন’র প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট ওসমান চৌধুরী। 

তিনি সিটি প্রশাসনের এহেন কার্যক্রমকে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের জন্যে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’র সামিল বলে উল্লেখ করেন।

সিটির পরিবহন কমিশনার পলি ট্রটেনবার্গ বলেছেন, কুইন্সের রকওয়ে ব্লুভার্ডে ১৫০ এভিনিউ থেকে নাসাউ কাউন্টির সীমানা পর্যন্ত আড়াই মাইল রাস্তায় গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ মাইল। এখন থেকে তা ৩৫ মাইল করা হলো। নর্দার্ন বুলেভার্ডে ১১৪ স্ট্রিট থেকে নাসাউ কাউন্টি সীমানা পর্যন্ত গ্লেনউড স্ট্রিট পর্যন্ত ৭ মাইল রাস্তায় ঘণ্টায় ৩০ মাইলের স্থলে ২৫ মাইল গতিবেগ নির্ধারণ করা হলো। স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের টারজি স্ট্রিটে ওয়েস্ট ফিঙ্গারবোর্ড রোড থেকে ব্রড স্ট্রিট পর্যন্ত ১.৮ মাইলে সর্বোচ্চ গতিবেগ ২৫ মাইল করা হয়েছে। আগে ছিল ৩০ মাইল। ব্রুকলীনে ফ্লাটবুশ এভিনিউর গ্র্যান্ড আর্মি প্লাজা থেকে এ্যাম্পায়ার বুলেভার্ড পর্যন্ত ৮ মাইলের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ মাইলের স্থলে ২৫ মাইল, শোর পার্কওয়ের সার্ভিস রোডে বে ৮ স্ট্রিট থেকে প্লাম্ব থার্ড স্ট্রিট পর্যন্ত ৪.৮ মাইল রাস্তায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ৫ মাইল কমিয়ে ২৫ মাইল করা হয়েছে। ঢালগ্রেন প্ল্যাসে ৮৬ স্ট্রিট থেকে ৯২ স্ট্রিট পর্যন্ত দশমিক ৩ মাইলে গতিবেগ কমিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ মাইল করা হয়েছে। ম্যানহাটানের রিভারসাইড ড্রাইভে ১৬৫ স্ট্রিট থেকে ১৮১ স্ট্রিট পর্যন্ত দশমিক ৮ মাইলে সর্বোচ্চ গতিবেগ ৫ মাইল কমিয়ে ঘণ্টায় ২৫ মাইল করা হয়েছে। ব্রঙ্কসে ব্রাকনার বুলেভার্ডে ইস্ট ১৩৫ স্ট্রিট থেকে পেলহাম বে পার্ক পর্যন্ত ৬.৫ মাইলের গতিবেগ ৩০এর স্থলে ২৫ মাইল এবং ওয়েবস্টার এভিনিউর ইস্ট ২৩৩ স্ট্রিট থেকে ইস্ট গানহীল রোডে ১.২ মাইল রাস্তায়ও এখন থেকে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেড়ে গাড়ি চালাতে হবে। নতুন এই গতিবেগ মনিটরিং করতে স্পিড ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়েছে। যারা এ বিধি লংঘন করবেন তাদেরকে ৫০ ডলার জরিমানা করা হবে। টিএলসির লাইসেন্সধারিদের জন্যে এই জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্সের ৫ পয়েন্ট কাটা যাবে। 
কমিশনার পলি ট্রটেনবার্গ বলেছেন, চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত সিটিতে যত দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা আগের বছরের পুরো মাসকেও ছাড়িয়ে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, করোনায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ড্রাইভাররা ট্রাফিক আইন লংঘন করে দ্রুতবেগে গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশীদুর্ঘটনার স্থানগুলো চিহ্নিত করেই উপরোক্ত ৯টি সড়কে সর্বোচ্চ গতিবেগ কমানো হলো। তিনি উল্লেখ করেন, এ যাবত ৯৫০ স্পিড ক্যামেরা স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামনের বছরের মধ্যে তা বাড়িয়ে ২০০০ করা হবে। 
সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বলছেন, সিটির ৭৫০টি পাবলিক স্কুলের আশপাশের সড়কের গতিবেগ লংঘনকারি ড্রাইভারদের জরিমানার জন্যে ‘স্পিড ভায়োলেশন ক্যামেরা’ এবং ‘রেড লাইট ভায়োলেশন ক্যামেরা স্থাপনের কাজও ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মেয়র দাবি করেন যে, রাস্তা-ঘাট সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের এমন নেটওয়ার্ক বিশ্বে আর কোন সিটিতে নেই। সিটি মেয়র বলেন, এই সিটির স্কুলগামী শিশু-কিশোরের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বটি আমরা যথাযথভাবে পালন করতে চাই। ইতিপূর্বে ‘ভিশন জিরো’ কর্মসূচিতে সুফল পাওয়া গেছে। সেজন্যে অনেক সড়কেই ‘স্পিড ভায়োলেশন ক্যামেরা’ এবং রেড লাইট ভায়োলেশন ক্যামেরা’ স্থাপন করা হয়। মেয়র অবশ্য উল্লেখ করেন যে, এসব ক্যামেরার মাধ্যমে সিটির আয়ও বেড়েছে। একইসাথে পথচারি হতাহতের ঘটনা গত ৮ মাসে কমেছে আগের বছরের তুলনায় ৬.৯%। তবে যানবাহন দুর্ঘটনায় হতাহতের হার বেড়েছে। 
ট্রাফিক ব্যবস্থাকে স্বস্তির মধ্যে আনতে সিটি প্রশাসনের এই উদোগের প্রশংসা করেছেন ব্রুকলীনের কংগ্রেসওম্যান ইভেটি ডি ক্লার্ক।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় সমগ্র কমিউনিটিতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সে অবস্থায় গাড়ি চালানোর গতিবেগ কমানোর ফলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। যদিও ট্যাক্সি ড্রাইভাররা ক্ষোভ জানিয়েছেন গতিসীমা কমিয়ে দেয়ায়। ২৫ বছরেরও অধিক সময় যাবত ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারি বাংলাদেশি আমেরিকান ওসমান চৌধুরী বলেছেন, করোনায় যাত্রী কমেছে। ১২ ঘণ্টার স্থলে ১৪/১৫ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েও আগের অর্ধেক আয়ও হচ্ছে না। গতিবেগ কমানোতে সে আয়ে ভাটা পড়বে, অপরদিকে ট্রাফিক স্পিড লংঘনের জন্যে জরিমানার শিকার হতে হবে। এটি কোনভাবেই ড্রাইভারদের অনুকূলে যাবে না। 

বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটিকে সচল রাখছি ক্যাবিরা। অথচ সেই ট্যাক্সি শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালে এক যাত্রীর ২৭টি ডায়মন্ড রিং সহ একটি ব্যাগ এই ওসমান চৌধুরীর ট্যাক্সিতে ভুলে রেখে গিয়েছিলেন। এরপর সেই মহিলা যাত্রীকে হন্যে হয়ে খুঁজে সেই ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে সারাবিশ্বে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সততার ক্ষেত্রে অনন্য এক নির্দশন হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন ওসমান চৌধুরী। তিনি এখনও ট্যাক্সি চালানোর পাশাপাশি ড্রাইভারদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার করছেন। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর