প্রবাস প্রজন্মে বঙ্গবন্ধুর জীবন-ইতিহাস তথা বিশ্বের মানচিত্রে বাঙালির উত্থানের গল্প ধারণ করার সংকল্পে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিনের সমাবেশ হলো স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় ১৭ মার্চ সকাল) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে জুইশ সেন্টারে।
এ সমাবেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনার পথে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই প্রবাসেও যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের প্রতিহত করতে দেশপ্রেমিক প্রতিটি প্রবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
‘জনকের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি-সমাবেশ’ শীর্ষক এ সমাবেশের সম্মিলিত আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখা, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভ্যাটার্ন্স’৭১, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান-প্রজন্ম ফোরাম। মঞ্চে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের আগে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন জনকের আত্মার শান্তি কামনায়। তারও আগে বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের সবিতা দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত দুটি গান পরিবেশন করেন কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান। একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ১৮ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর সেই জাদুকরি ভাষণ উপস্থাপন করে ছোট্টমনি ফাছিল কবির কাব্য। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ করে নতুন প্রজন্মের তামান্না আহমেদ শান্তি। এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে উপস্থিত সকলের সামনে গান, কবিতা আর ছন্দে ভিন্ন এক আমেজে মহিমান্বিত করার পরই মূল আলোচনা শুরু হয়।
সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া। ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সহযোগিতায় সমগ্র অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন শারমিন সিরাজ সোনিয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে শুধু বাঙালির নেতাই নন, তিনি মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষের মুক্তির দিশারি ছিলেন তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে যথাযথভাবে জানাতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
বিশেষ অতিথি নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সকলেই যদি বাংলাদেশের সামগ্রিক কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং উন্নয়ন-অভিযাত্রায় সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা দিতে পারি তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। মার্কিন মুল্লুকের রাজনীতিক ও নীতি-নির্দ্ধারকদের সঙ্গে বাংলাদেশি আমেরিকানরা সম্পর্ক জোরদার করার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের কল্যাণ সাধন করা সহজ হবে বলেও উল্লেখ করেন কন্সাল জেনারেল।
জ্যাকসন হাইটস এলাকা নিয়ে গঠিত নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৫ এর কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান বলেন, সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে। যে সংকল্পে জাতিরপিতার নেতৃত্বে বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করেছে, একই চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রেও। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মূলধারায় প্রবাসীদের পথিকৃত মোর্শেদ আলম বলেন, সকলেই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি এবং বাঙালিত্ব হৃদয়ে লালনের পাশাপাশি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বিস্তৃত করার পথে হাঁটতে পারি তাহলেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে এবং বাঙালি হিসেবে আমরা আরো উঁচুতে উঠতে সক্ষম হবো বহুজাতিক এ সমাজে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন-ইতিহাস আলোকে দীর্ঘ বক্তব্যের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভ্যাটার্ন্স’৭১ এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগে ইদানীং জামায়াত-শিবিরের লোকজন ভিড় করেছে। এ ব্যাপারে খাঁটি মুজিব সৈনিকদের সজাগ থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহি মিনা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতিরপিতা স্মরণে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত প্রবাসীদেরকে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুকে যথাযথভাবে স্মরণ ও সম্মান জানানো যাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কাদের মিয়া।
আলোচনায় আরও অংশ নেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামে ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাজী শফিকুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন তালুকদার, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান-প্রজন্ম ফোরামের সভাপতি আশরাব আলী খান লিটন, কমিউনিটি লিডার সাহাবউদ্দিন লিটন। অন্যতম হোস্ট সংগঠন ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আকবর রীচি মঞ্চে উপবেশন করেছিলেন।
আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি ও পাঠ করেন মানিকগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি সালেহা ইসলাম, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্য শামিম আকতার শরিফ। অনুষ্ঠানে অতিথির মধ্যে আরও ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়। শিল্পীদের সাথে তবলায় সংগত করেন তপন মোদক।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ