ইঁদুর, ষাঁড়, বাঘ, খরগোশ, সাপ, ঘোড়া, ভেড়া, মোরগ, কুকুর, ছাগল, ড্রাগন এবং শূকর। এই বারটি প্রাণীর মধ্য থেকে চায়নিজদের নতুন বছর আসে একেক বছর একেক নামে। নির্দিষ্ট ১২টি প্রাণীর নাম ঘুরে ফিরে রাখা হয় একেক বছর। তবে ড্রাগন বর্ষে খুশির মাত্রাটা যেন থাকে অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশি। উৎসবের আমেজও থাকে একটু বেশী বেশী। এ বছর চীনা ক্যালেন্ডার মতে চায়নিজ নিউ ইয়ার আসছে নাকি ড্রাগনবর্ষ হিসেবে। তাইতো চায়নিজদের মনে আনন্দের সীমা নেই। চায়নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, যে বছর ড্রাগন আসে সেই বছর নাকি তাদের জন্য লক্ষী বছর।
চায়নিজ নিউ ইয়ার আসছে। তাইতো মালয়েশিয়ার প্রতিটি শহর, বিপনীবিতান, অলিগলি ও বাড়িগুলোকে সাজানো হয়েছে লাল রঙয়ের চায়নিজ বিশেষ কাপড়ের রঙিন সাজে। সেই সাথে শোভা পাচ্ছে ড্রাগনের প্রতিকৃতি। টিভি কিংবা বিল বোর্ড অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনেও শোভা পাচ্ছে ড্রাগনের প্রতিকৃতি। চায়নিজ নিউ ইয়ার উপলক্ষ্যে মার্কেটে মার্কেটে চলছে মূল্যহ্রাসের হিড়িক। যেকোন কেনাকাটায় থাকছে ২৫ পার্সেন্ট থেকে কোথাও কোথাও ৭৫ পার্সেন্ট পর্যন্তও ছাড়।
চন্দ্র বর্ষের প্রথম দিনটিকে চীনারা নববর্ষ হিসেবে পালন করে থাকে। এই উৎসবকে বলা হয় 'চুন জি'। চীনারা তাদের নিজস্ব বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে। নতুন বছর আসলে কোন তারিখ থেকে শুরু হবে এর কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কারণ এই তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তন হয়! বর্ষপঞ্জি অনুসারে এ বছর ফেব্রুয়ারির দশ তারিখ থেকে চীনাদের নতুন বছর শুরু হচ্ছে। চীনাদের নববর্ষ আর বসন্ত দুটোই আগমন হয় একই সময়ে।
চায়নিজ নিউ ইয়ার উৎসব মূলত বছরের শেষ মাসে ক্রিসমাস উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যায়, বাকী থাকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা। ক্রমান্বয়ে সেই উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চায়নিজদের মাঝেও। তারই ধারবাহিকতায় সেই ঢেউয়ের আঁচ লাগে তিন জাতির দেশ (মালয়, তামিল, চায়নিজ) মালয়েশিয়ান চায়নিজদের মাঝেও।
অন্যান্য দেশে শুধু চায়নিজরা এ উৎসব পালন করলেও পর্যটন নগরী মালয়েশিয়ায় মালয়েশিয়ান চায়নীজরাসহ অন্যান্য জাতিরাও অপেক্ষায় থাকেন চায়নিজ নিউ ইয়ারের। কারণ মালয়েশিয়াতে চায়নিজ নিউ ইয়ার মানে লম্বা ছুটি আর মোটা অংকের বোনাস। যেখানে মালয়েশিয়ায় অনেক সময় বিদেশী শ্রমিকরা ঈদের দিনও ছুটি পায় না, সেখানে বেশির ভাগ মিল কারখানার মালিক চায়নিজ হওয়ায় সরকারিভাবে চায়নিজ নিউ ইয়ারে দু'দিন ছুটি হলেও বেশির ভাগ চায়নিজ মালিকরা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে প্রায় এক-দুই সপ্তাহও। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে মেলে বেতন সমান ডাবল বোনাসও।
সারা বছর পুরো মালয়েশিয়া জুড়ে কোথাও কমলা লেবুর তেমন দেখা না মিললেও শুধুমাত্র চায়নিজ নিউ ইয়ারকে কেন্দ্র করেই পুরো মালয়েশিয়ায় আমদানি করা হয় লক্ষ লক্ষ টন কমলা লেবু। চায়নিজ নিউ ইয়ারকে কেন্দ্র করে মোড়ে মোড়ে বসে কমলার স্টল। কারণ কমলা ছাড়া যে নিউ ইয়ারই বৃথা। চায়নিজ নিউ ইয়ার এ মালয়েশিয়ায় থাকে কমলার ছড়াছড়ি। চায়নিজ মালিকদের অধীনে কাজ করা সকল শ্রমিক ও চায়নিজ সকল সরবরাহকারী তাদের সকল জাতের গ্রাহকদের উপহার স্বরূপ প্রদান করেন নানান পদের কমলা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল