শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এনজাইমবিহীন গ্লুকোজ সেন্সর উদ্ভাবন

রাশেদ হোসাইন, জবি প্রতিনিধি

এনজাইমবিহীন গ্লুকোজ সেন্সর উদ্ভাবন

ডায়াবেটিস একটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এটি মৃত্যু এবং বিকলাঙ্গ অথবা পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আই.ডি.এফ) এর মতে, শুধু ২০১১ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত জনসংখ্যা ছিল ৮.৪ মিলিয়ন ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে এই রোগ জনজীবনে মহামারী আকারে ধারণ করেছে। ডায়াবেটিস সংশ্লিষ্ট জটিলতা প্রতিরোধের জন্য প্রতিনিয়ত রক্তের গ্লুকোজ পর্যবেক্ষণ করতে একটি অতি-সংবেদনশীল ও নৈর্বাচনিক বিশ্লেণধর্মী পদ্ধতি দরকার। প্রচলিত এনজাইম-নির্ভর গ্লুকোজ সেন্সরগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এ জে সালেহ আহম্মদ বাজারে প্রচলিত স্টিক থেকেও কম খরচে এনজাইমবিহীন গ্লুকোজ সেন্সর উদ্ভাবন করেন। বাজারে প্রচলিত এম্পেরোমেট্রিক গ্লুকোজ সেন্সরের অন্যতম সমস্যা হলো এটি উচ্চ তড়িৎ বিভবে কাজ করে। এ কারণে এই সেন্সর ইম্পেডিমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা, যা কম তড়িৎ বিভবে কাজ করে। এই পদ্ধতির বিস্তৃত রৈখিক-ঘনমাত্রার পাল্লা ০.৩ থেকে ১০ মিলিমোলার পর্যন্ত এবং ন্যূনতম সনাক্তকরণ সীমা ০.১ মিলিমোলার পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে। এই গবেষণার মূল বিষয় হচ্ছে ইলেক্ট্রো-ক্যামিকেল সেন্সর, যা মানুষের জীবনের জন্য অতীব জরুরি একটি বিষয়। ড. সালেহ বলেন, আমাদের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ জানার জন্য মার্কেটে (Electrochemical glucose sensor) ইলেক্ট্রো-ক্যামিকেল গ্লুকোজের সেন্সর সহজলভ্য থাকার কারণে আমরা খুব সহজেই আমাদের গ্লুকোজ লেভেল সম্পর্কে জানতে পারি। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগী তার রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি না আমাদের দেহে কলেস্টেরল অথবা ডোপামিনের লেভেল কত অথবা আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি না আমাদের দেহের ক্যান্সার কোন পর্যায়ে  আছে। কারণ গ্লুকোজ সেন্সরের মতো অন্যান্য সেন্সর মার্কেটে সহজলভ্য নয়। সালেহ আহম্মদ বলেন, এই কাজ করতে (Electrochemical workstation) ইলেক্ট্রো-ক্যামিকেল ওয়ার্ক স্টেশন নামক যন্ত্র ব্যবহার করতে লাগে, যা অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের কোনো ফান্ডিং থেকে এই যন্ত্র কেনা সম্ভব নয়। যার কারণে TWAS (The World Academy of Sciences) দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সাইন্স থেকে একটা ফান্ডিং পাই এবং যন্ত্রটি কিনি। আমার শেষ ৫টা আর্টিকেলে এর প্রায় সব কাজ এই যন্ত্র দিয়ে করেছি। কাজেই উন্নত মানের গবেষণার জন্য ফান্ডিং-এর পরিমাণ আরও অনেক বাড়াতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোরিয়া ও জাপানকে অনুসরণ করা যেতে পারে। ড. এ জে সালেহ আহম্মদের এই গবেষণা সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করেছে আব্দুল্লাহ আল মামুন, তানিয়া আক্তার, মো. আল মামুন, শরীফা ফরায়েজী এবং ফারজানা জামান মনিরা। ড. এ জে সালেহ আহম্মদ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন সহকারী অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১১ সালে কোরিয়ার কনকুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্স ইন সায়েন্সেস (সিএআরএস) এ সিনিয়র সাইন্টিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তার একটি প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ডিনস্ এওয়ার্ড-এর জন্য নির্বাচিত হয়। ২০১৩ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। আইএসআই (ISI) জার্নালে তার মোট ২৮টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যার মোট ইনপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৭২.০৩৩। গুগল স্কলার এর হিসাবে তার মোট সাইটেশন ১৩৯১ (যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ), এইচ ইনডেস্ক (h-index) ১৭ এবং আই-১০ ইনডেস্ক (র১০-রহফবী) ১৯। এ ছাড়াও তার ২টি পেটেন্ট, একটি বইয়ের অধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে ৪৫টি গবেষণা সার সংক্ষেপ পঠিত হয়েছে। তার বেশ কিছু সংখ্যক বৈজ্ঞানিক জার্নালের পর্যালোচক যে জার্নালগুলো রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি, এলসভিআর, স্প্রিংঙ্গার এবং ইলেক্ট্রোকেমিকেল সোসাইটি থেকে   প্রকাশিত হয়।

সর্বশেষ খবর