শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
দেবারতি গুহ

ডয়চে ভেলের প্রথম বাঙালি এশিয়া প্রধান

ডয়চে ভেলের নতুন পরিচালক এসে বাংলাসহ কয়েকটি ভাষার বিভাগ বন্ধ করার কথা ভাবছিলেন। তার সিদ্ধান্ত ঘুরে গেল দেবারতি ও তার দলের দুর্দান্ত কাজ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে। বাংলা নিয়ে এ লড়াই ডয়চে ভেলেতে তাকে অনন্য করে তোলে...

রণক ইকরাম ও তানভীর আহমেদ

ডয়চে ভেলের প্রথম বাঙালি এশিয়া প্রধান

ছবি : রাফিয়া আহমেদ

ডয়চে ভেলের এশিয়া প্রধান দেবারতি গুহ। এ পর্যায়ে কোনো বাঙালির দায়িত্ব পাওয়া নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। শুরু করেছিলেন বিনা বেতনে কাজ করা এক ইন্টার্ন হিসেবে। কর্মস্পৃহা আর মেধার মূল্যায়ন হলো কয়েক বছরেই। বাংলা বিভাগ প্রধানের দায়িত্ব পেলেন। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের আঞ্চলিক প্রধান সাধারণত জার্মান বা ইউরোপীয় কেউ হন। সে প্রথা ভাঙলেন। ডয়চে ভেলের নতুন পরিচালক এসে বাংলাসহ কয়েকটি ভাষার বিভাগ বন্ধ করার কথা ভাবছিলেন। তার সিদ্ধান্ত ঘুরে গেল দেবারতি ও তার দলের দুর্দান্ত কাজ,  ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে। বাংলা নিয়ে এ লড়াই ডয়চে ভেলেতে তাকে অনন্য করে তোলে। মাঠপর্যায়ের রিপোর্টিং দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করা দেবারতি এখন এশিয়া প্রধান। তার নেতৃত্বেই কাজ করছেন দুশো জনের বেশি কর্মী।

 

পরিচয়ে বাঙালি

দেবারতির শেকড় বাংলাদেশে। বাবার বাড়ি বরিশাল, মায়ের সিলেট। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর তারা চলে আসেন কলকাতা। শৈশব-কৈশোর কলকাতাতে কাটলেও শেকড়ের টান ভুলেননি। স্কুল বন্ধের দিনগুলোতে ছুটে আসতেন বাংলাদেশে। ঊননব্বইয়ের বন্যায় কলকাতা ফিরতে বেশ দেরি হলো। সহপাঠীরা খেপাত, বন্যায় ভেসে গেছেন কিনা! আত্মপরিচয় খুঁজে ফিরেছেন সবসময়। উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটেছেন দিল্লি। প্রণয়ের টানে গেলেন জার্মানি। কাজের প্রয়োজনে নানা দেশ, নানা বর্ণের, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। টানাপড়েন ছিল, কটু কথার মৌমাছিও হুল ফুটিয়েছে। দেবারতি বলেন, ‘বুকের ভিতর অবচেতনে সবসময়ই টের পেয়েছি আমি বাঙালি। কখনো কলকাতা, ঢাকাকে আলাদা করে ভাবিনি। সব ধরনের ধর্মীয় উৎসবে শামিল হতাম। পূজা যেমন হচ্ছে বাসায়। বাইরে আজানও শুনতে পেতাম। ক্রিসমাস গাছ সাজানো হতো। সৌহার্দ্যরে পরিবেশ ছিল। নিজের পরিচয় ভারতীয় বা বাংলাদেশি না বলে তাই বলি বাঙালি। বাংলায় কথা বলি। ভিতরে তো বাংলাকেই ধারণ করছি।’

 

কলকাতায় জীবন যেমন

বাংলাদেশ থেকে এলেন কলকাতায়। সংস্কৃতিমনা পরিবার তাদের। বাবা ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে দিয়েছেন। বৈঠকখানায় বাবা-চাচাদের জ্ঞান আলোচনা শুনতেন। নাটক, গান, নাচ, অর্থনীতি, রাজনীতি কী নেই সেই আলোচনায়! কিছুটা আত্মস্থ করতেন, কিছুটা বুঝেছেন বয়স বাড়ার সঙ্গে। মা প্যারালাইসড। তাকে ছেড়ে যাওয়া যায় না। ঘর-কলপাড়ের জীবন ছেড়ে বাইরে যাওয়া হতো না তার বাবার কারণে। বাবা রক্ষণশীল হয়ে উঠতেন নাচ-গান শেখার কথা উঠলেই। তবে নাচটা ঠিকই শেখেন দেবারতি। ছোটবেলায় সাইকেল চালানোর খুব শখ ছিল। বাবা না করে দিলেন। উল্টো ঘরে এলো সেলাই মেশিন। মাধ্যমিকের পর টিউশনি শুরু করেন। টিউশনির টাকা জমিয়ে অনেকটা জেদ করেই কেনেন সাইকেল। সে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনভাবে থাকতে চেয়েছি। বাবাকে বললাম সাইকেল চাই। বাবা শুরুতে দিতে চাইলেন না। নানী তাকে বুঝিয়েছেন। তখনো সাইকেল চালাতে জানি না। খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সাইকেল আসছে। তখন আমার বয়স ১৫ বা ১৬ বছর হবে। একটা বাক্স এলো বাসায়। ভাবলাম ফোল্ডিং সাইকেল। বাক্স খুলে দেখি, সেলাই মেশিন। পুরো হতভম্ব হয়ে যাই। পরে সাইকেল কিনি আমার টিউশনি করে জমানো টাকায়।’

দেবারতিকে সাইকেল চালানো শেখায় কলেজের এক বান্ধবী। সেই শেখাটাও ছিল অন্যরকম। প্রথম প্রথম একবার নামলে আর উঠতে পারতেন না। দেবারতি বলেন, ‘কলেজে যাওয়ার সময় একবার কোনো কারণে নামলে আর উঠতে পারতাম না। বাকি পথটুকু হেঁটেই যেতে হতো। ছয় মাসের মতো সাইকেল চালিয়েছিলাম। পাড়ার এক মেয়ে ছিল, তার সত্যিই একটা সাইকেলের প্রয়োজন ছিল। পরে তাকে সাইকেলটা দিয়ে দিই।’

১৯ বছর বয়সেই বিয়ের প্রস্তাব আসে তার বাসায়। আকাশ ভেঙে পড়ে যেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি তো বিয়ে করব না। খুব জেদি ছিলাম। বাসায় বললাম, বিয়ে দেবে তো পড়াশোনা করাচ্ছো কেন?’ অসুস্থ মা মনে-প্রাণে চাইতেন দেবারতি কলকাতার এই ঘরকুনো জীবন পেরিয়ে এগিয়ে যাক। মায়ের মৃত্যুর পর সময়টা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। বিষণ্নতা আর না ঘুমানোর রোগ জেঁকে বসে। মাধ্যমিক শেষ করেই তাকালেন সামনের দিকে। আরও পড়াশোনা করবেন, যেতে হবে দিল্লি।

 

স্বপ্ন দেখার শহর দিল্লি

মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে গেলেন দিল্লিতে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তির জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। পরীক্ষায় পাঁচ প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিয়েছিলেন তিনটির। পড়ুয়া দেবারতির মেধার প্রমাণ মেলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। তার জীবনের বড় পরিবর্তন কিংবা এগিয়ে যাওয়ার গোড়াপত্তন হলো। দেবারতি বলেন, ‘ঘরের মধ্যেই জীবনটা আটকে ছিল। মা মারা যাওয়ার পর দিল্লিতে পড়াশোনার সিদ্ধান্তটা নিই। দিল্লিতে পড়তে যাওয়ার পরই জীবনকে নতুন করে চিনেছি।’

দিল্লিতে জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, আত্মপরিচয়, ক্যারিয়ার সব কিছু নিয়ে ভাবতে জানলেন। তিন বিষয়ে এমএ ডিগ্রি রয়েছে তার। সংগীত, সফটওয়্যার ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এমফিল করেন পলিটিক্যাল ফিলোসফিতে। পিএইচডি পুরোটা শেষ করেননি। এমএ করার সময়ই          পরিচয় হয় এক জার্মান তরুণের সঙ্গে। সেই পরিচয়ে ২০০০ সালে প্রণয়পর্ব থেকে বিয়ে করেন। জার্মানিতে প্রথম বেড়াতে আসেন ২০০১ সালে। জীবনের প্রয়োজনে এখন জার্মান শেখা চাই। জার্মান ভাষা শেখার জন্য দিল্লির ম্যাক্স মুলার ভবনে আনাগোনা তার। ২০০৩ সালের ঘটনা। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি বিজ্ঞাপনে। জার্মানির শীর্ষ পত্রিকা ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং একজন এশিয়া প্রতিনিধি খুঁজছে।

 

সাংবাদিক হয়ে ওঠা

ক্যারিয়ার নিয়ে খুব একটা ভাবেননি। পড়াশোনা, রিসার্চ নিয়ে তুমুল আগ্রহ তার। দেবারতির ভাষায়, ‘শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেব এটাই হয়তো ছিল মনে। নইলে সংস্কৃতি চর্চা। সংগীতেই এমএ করেছিলাম। মিডিয়াতে আসার কথা প্রথম আমাকে বলেছিলেন পার্থ চ্যাটার্জি। তাকে দাদা বলে ডাকতাম। তিনি এক দিন আমাকে বললেন, কেন একাডেমিকসে যাচ্ছো। মিডিয়াতে যাও না কেন?’

সে কথা আড়ালে গেঁথে গিয়েছিল মনে। তাই ম্যাক্স মুলার ভবনে দেখা সেই সাংবাদিকতার বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেন। পার্টটাইম জব ছিল। দারুণ একটা ইন্টারভিউ দিলেন। কাজটিও পেয়ে গেলেন। সাংবাদিকতার শুরু এখান থেকেই। তিনি সহকারী প্রতিবেদক ছিলেন সে সময়। সাংবাদিকতার পেশা চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে।

দেবারতি একেবারে মাঠপর্যায় থেকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। বোরকা পরে দিল্লির অলিতে-গলিতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘুরেছেন। দিল্লির রাস্তায় অবাধে হেঁটে ফেরা গরুদের আশ্রম বানিয়ে ব্যবসা করত একটি মাফিয়া চক্র। তাদের ওপর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির সময় হামলার শিকার হন তিনি। সেই ঘটনা জানিয়েছেন দেবারতি। বলেন, ‘রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গরুদের বৃদ্ধাশ্রম গড়েছিল একটি মাফিয়া চক্র। তারা এই গরুদের দুধ সংগ্রহ করে তাতে পানি মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করত। মাফিয়াদের একটি দল আমার ওপর আক্রমণ করে। পায়ে মারাত্মক আঘাত পাই।’

এরপরও থেমে থাকেননি  তিনি। পত্রিকায় যার সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন পরবর্তীতে তিনি পুরো প্রতিবেদন তৈরি করতে বলেন। দেবারতি বলেন, ‘আমি মাঠপর্যায়ে কাজ করতাম। আমার বস এশিয়ার খবরগুলো দেখতেন ইউরোপীয় চিন্তা-চেতনা থেকে। এ কারণে তার সঙ্গে প্রায়ই গঠনমূলক বিতর্ক হতো। রিপোর্টিংয়ের খুঁটিনাটি পুরোটাই শিখেছি এই জার্মান পত্রিকায় কাজ করে।’

 

ডয়চে ভেলেতে দেবারতি

ভারতের আরেক প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতে একেবারে শুরুর দিকে চুক্তিভিত্তিক কিছু কাজের অভিজ্ঞতা ছিল দেবারতির। তবে তার ক্যারিয়ারের সোনালি অধ্যায় ডয়চে ভেলেতে। বিনা পয়সায় ইন্টার্ন হিসেবে ডয়চে ভেলেতে কাজ শুরু করেন তিনি। এখানে বেতার, অনলাইন ও টেলিভিশন সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ নেন। পরে যোগ দেন এডিটর হিসেবে। ডয়চে ভেলেতে তখন ভাষা প্রধানরা বেশির ভাগই জার্মান। তার ওপরে কাজ করতেন আঞ্চলিক প্রধানরা। ক্যারিয়ারের গল্পে দেবারতি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার কো-অর্ডিনেটর এডিটর হিসেবে ২০০৯ সালে কাজ শুরু করি। নতুন পরিচালক আসেন ২০১৪ সালে। ডয়চে ভেলে ঠিক করে বাংলাসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় সংবাদ বন্ধ করে দেবে। প্রথমেই ওঠে বাংলার কথা। আমি তার বিরোধিতা করি। একটা লড়াই চালিয়ে যাই বলতে গেলে। আমি আমার দলের কাজ, কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরি পরিচালকের সামনে। মাত্র ৪ জনের দল নিয়ে আমার এই লড়াইয়ের কথা শুনে তিনি বাংলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।’

ডয়চে ভেলেতে বাংলা বিভাগ টিকে থাকে। দেবারতির আলাদা একটি অবস্থান তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে আমি কনিষ্ঠ। এরপর বিদ্রƒপাত্মক ই-মেইল আসতে শুরু করে। কেন বাংলাদেশি না হয়েও বাংলা বিভাগের প্রধান হলাম, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তিন বছর এই কটুকথার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে।’ দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান সময়ের আগেই অবসরে গেলে ডয়চে ভেলে দেবারতিকে আপতত তার কাজটিও দেখে দিতে বলে। এশিয়া প্রধানের ডেপুটি হিসেবে কাজ করছিলেন দেবারতি। এশিয়ার প্রধানের পদ খালি হলে তাকে আবেদন করতে বলেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। অফিশিয়ালি ২০১৮ সালের আগস্টের ১ তারিখে এশিয়ার প্রধান হিসেবে যোগ দেন তিনি।

 

সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

ডয়চে ভেলের এশিয়া প্রধান হিসেবে অনেকগুলো ভাষায় সংবাদ প্রকাশের চ্যালেঞ্জ দেবারতির ওপর। ইরান থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা অনেকগুলো দেশ ও ভাষায় খবর প্রকাশ করছেন। ভাষা বৈচিত্র্যে রয়েছে ফার্সি, দারি পাশতু, উর্দু, হিন্দি, বাংলা, ইন্দোনেশিয়া, চীনা ভাষা ইত্যাদি। এশিয়ার বাকি দেশগুলোর খবর ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় করা হয়। ডয়চে ভেলের ৬৫ বছরে প্রথম কোনো বাঙালি নারী এশিয়ার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেবারতি বলেন, ‘এশিয়া ঘুম থেকে আগে ওঠে। একসময় পুরনো খবর থাকত অনলাইনে। এটা আমাকে পীড়া দিত। জনবল কম। শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকতে নতুন খবর, কনটেন্টের প্রয়োজন। তাইপে, দিল্লি ও জাকার্তায় অফিস খুলেছি।’

পত্রিকা, অনলাইন,  রেডিও, টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া এখন সংবাদ প্রচারে বড় ভূমিকা রাখছে। ট্রেন্ড পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। দেবারতি বলেন, ‘শুধু ওয়েবসাইট বা টিভির জন্য এখন খবর দিলে হবে না। ২০ বছর পর কোথায় যাচ্ছে মিডিয়া সেটাও ভাবতে হবে। একই কনটেন্ট কাগজে বা টিভিতে দেব, সোশ্যাল মিডিয়াতে দেব, তা হবে না। নতুন কিছু দিতে হবে। আমি তো মনে করি, ফেসবুক ও ইউটিউবের ভিডিও এক হওয়া উচিত না। ডয়চে ভেলেতে কাজের স্বাধীনতা আছে। বাংলা বিভাগে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি বহুদিন ধরে।’

বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের প্লাটফর্ম সাংবাদিকদের ওপর চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে। দেবারতি মনে করেন ওপেন প্লাটফর্মে, কিছু মিডিয়াতে সব ঠিক হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সিটিজেন জার্নালিজম ভালো চোখে দেখি। তবে একটা নীতিমালা মেনে চলা উচিত। সংবাদ প্রচারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এজন্য গাইডেন্স দরকার। তবে বাকস্বাধীনতা যেন বন্ধ না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। এটার ব্যালেন্স প্রয়োজন।’

বাংলাদেশের উন্নয়ন, সাফল্য, অনুপ্রেরণীয় কাজগুলো সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করতে চান তিনি। পাশাপাশি এই উন্নয়নে যেসব বাধা রয়েছে সেসবও তুলে ধরবেন। দেবারতি বলেন, ‘বাংলাদেশ মানেই পরিবেশ হুমকি, দরিদ্রতা, রোহিঙ্গা সংকট- এমন একটি ধারণা রয়েছে ইউরোপের। সেটা দূর করতে বাংলাদেশের সফল গল্পগুলো বিশ্বকে জানাচ্ছে ডয়চে ভেলে। ইউরোপের যে ভালো দিকগুলো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অনুকরণযোগ্য সেসবও তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে।’

 

প্রেরণায় মাদার তেরেসা

মানুষের সেবা করাই পরম ধর্ম মানেন দেবারতি। জীবনের পথচলায় প্রেরণা জুগিয়েছেন অনেকেই। ছোটবেলায় মাদার তেরেসার সঙ্গে মানবসেবায় কাজ করেছেন। দেবারতি বলেন, মাদার তেরেসার সঙ্গে কাজ করতে হলে ধর্ম পরিবর্তন করতে হতো। আমি সেটা করিনি। মাদার তেরেসা ডেকে বললেন, তুমি তোমার মতো করে মানুষের সেবা কর। এখনো সেটা করার চেষ্টা করছি। আমাকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়েছেন আমার জেঠু রণজিৎ গুহ, মামা বিনায়ক সেন। স্বপ্ন আছে শিশুশিক্ষা, নারী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করার।’

 

পরিপাটি একজন

কাজপাগল শব্দটির সমার্থক দেবারতি। এখন লেখালেখি করছেন নিয়মিত। বাংলা খাবার প্রিয় তার। পরনে বাঙালি শাড়ি, পরিপাটি মানুষটির ভালো লাগে রবীন্দ্রনাথ। জার্মানিতে অভিনয় করেছেন নাটকে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে অভিনয় করেছেন ‘সংস অব দ্য টি-শার্ট’ নাটকে। সারোগেসির ওপর তার অভিনীত নাটক রয়েছে। পাশাপাশি নাচ, গান ও আবৃত্তি করেন। অবসরে সিনেমা দেখেন। অভিনয়ে শাবানা আজমি, নাসিরুদ্দিন শাহকে রেখেছেন পন্দের তালিকায়। বহু দেশ ঘুরেছেন। ধর্মীয় প্রথা, আচার, রীতিনীতি তার ভালো লাগার আরেক জগৎ। জীবনে নানা বাধা পার হয়ে শিখেছেন, লড়াইটা নিজেকেই করতে হয়। হাল না ছেড়ে নিজের কাজ করে যেতে হয়। দেবারতি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে নারীর। বিশেষ করে নারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের। একদম গ্রাম থেকে উঠে এসে তারা বাংলাদেশের চিত্রটাই বদলে দিয়েছে। এই অভাবনীয় সাফল্য গর্ব করার মতো। নারীর পথচলায় প্রতিবন্ধকতা এলেও লড়াই করে যেতে হবে। নিজেকে নিজে সাপোর্ট করতে হবে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। পরিবার ও সমাজের সচেতন মানুষকেও নারীর পথচলায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে।’

দেবারতি গুহ তার কাজের মাধ্যমে নিজেকে বিশ্বদরবারে পরিচয় করিয়েছেন। তার জীবনের আঁকেবাঁকে ছড়িয়ে থাকা গল্পগুলো স্বপ্ন দেখায় হাল না ছেড়ে এগিয়ে যাওয়ার।

সর্বশেষ খবর