শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
অনন্য

সিঙ্গাপুরে বিনতান দ্বীপে...

মো. মনির হোসেন

সিঙ্গাপুরে বিনতান দ্বীপে...

সিঙ্গাপুর লাগোয়া দর্শনীয় একটি দ্বীপ বাতাম। পর্যটন ও শিল্পপ্রধান এ দ্বীপটির মূল শহর হচ্ছে নাগোয়া। যেখানে রয়েছে শতাধিক চার তারকা মানের হোটেল-রিসোর্ট ও ডজনাধিক আন্তর্জাতিক মানের শপিংমল। একসময় বাতাম আইল্যান্ড ডিউটি ফ্রি শপিংয়ের জন্য পরিচিত ছিল ব্যাপক। আর এখন সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জল-সবুজের পর্যটন আকর্ষণ। আর এ জল-সবুজের মোহনীয় রূপে আমার মতো অনেক পর্যটকই মুগ্ধ হন। আর এবার ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে ছিলেন ড. ইসমাইল, সাংবাদিক জাহিদুজ্জামান ও প্রকৌশলী হাবিব। বাতাম ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন ভোরে নাস্তার টেবিলে আলোচনা হয় বিনতান আইল্যান্ড যাওয়ার। যেই কথা সেই কাজ। স্থানীয় বন্ধু ওমর শাহ্কে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম বিনতানের উদ্দেশে। বাতাম থেকে পুঙ্গুর শহর প্রায় ৩৩ কিলোমিটার আর এখানেই রয়েছে তাদের অভ্যন্তরীণ ফেরি টার্মিনাল। যেখান থেকে প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর বিভিন্ন কোম্পানির ক্রুজ বিনতানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আমরাও টিকিট ক্রয় করে ক্রুজে চেপে বসলাম। আমাদের এমভি মেরিনা নামক জলযানটি চলছে দক্ষিণ চায়না সাগরের বুক চিরে। মাত্র ৫০ মিনিট পর আমরা পৌঁছে গেলাম বিনতান ফেরি টার্মিনালে। বাতাম ও বিনতানে ম্যানগ্রোভ বনের আধিক্য লক্ষণীয়। ফেরি টার্মিনাল থেকে সারা দিনের জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে ছুটে চললাম কাক্সিক্ষত গন্তব্যে। অবশেষে ৫৬ কি.মি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম ত্রিকরা সৈকতে। তবে এ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে কোনো রূপ বিরক্তি বা ক্লান্তি আসেনি। পুরো পথটিই মনে হয়েছে একটি পার্ক। কোথাও নারিকেল গাছ, কোথাও ম্যানগ্রোভ আবার কোথাও অন্যান্য বনবনানী। আবার কোথাও দেখা যায় তাদের ফলের রাজা ডুইরিয়ানের বাগান। ত্রিকরা সৈকতটি পর্যটকদের কাছে ভার্জিন বিচ হিসেবে পরিচিত। এই বিচে মানুষের হাতের ছোঁয়া নেই, ওইরকম রং চং করা নেই, একেবারেই ন্যাচারাল। শান্ত একটি এলাকা। মাইলের পর মাইল শুধু সবুজ গাছপালা, নীল জলরাশি আর সাদা পাথর। মনের শত কষ্ট ভোলানো একটি সাগরপাড়। এ সৈকতের চারটি অংশ সাতু, দুয়া, তিগা ও আমপাট। এর মধ্যে ত্রিকরা তিগা দেখতে খুব সুন্দর।   বিনতান আইল্যান্ডে আরও একটি সুন্দর সৈকত রয়েছে, সেটির নাম লাগই সৈকত। এ অঞ্চলটিতে অনেক হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। আমরা লাগই সৈকতটিতে যেতে পারিনি কারণ আমাদের আবার বাতামে ফিরতে হবে। দিনের সর্বশেষ ফেরি ধরতে হবে। তাই একই পথে ফিরে চলা। সাড়ে পাঁচটা বাজতে এখনো ৫০ মিনিট বাকি। তাই ফেরিতে উঠার আগে ডুইরিয়ানের স্বাদ গ্রহণ। টার্মিনালের আগেই একটি বাজার, যেখানে ডুইরিয়ানের অনেক দোকান রয়েছে। অনেক ডুইরিয়ান সাজানো আছে।  সেখান থেকে ৪টি ডুইরিয়ান হজম করে নিলাম। সবশেষে নীড়ে ফেরা। মুসাফির মুছড়ে আঁখি, ফিরে চল নীড়ের টানে।

ভ্রমণ টিপস : ইন্দোনেশিয়া যেতে এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা লাগে না। তাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই শুধু বিমান টিকিট কেটে ইন্দোনেশিয়ার বাতাম ভ্রমণ করতে পারবেন। ইন্দোনেশিয়ায় পাবলিক বাহন খুব কম। সবাই নিজ নিজ গাড়ি ও বাইকে চলাচল করে। তবে খুবই কম টাকায় এসি জিপ সারাদিনের জন্য রিজার্ভ করা যায়। ইন্দো রুপি সাত থেকে আট লাখে সারাদিন একটি জিপ ভাড়া করতে পারবেন যা বাংলাদেশি টাকায় ৪২০০ টাকা থেকে ৪৮০০ টাকা হবে। ৪ রাত থাকতে পারলে পুরো বাতাম ও বিনতান ভ্রমণ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পারে। এখানে সিফুড কম মূল্যে খেতে পারবেন। ইন্দো ট্রেডিশনাল ড্রেস বাটিক পাবেন তুলনামূলকভাবে কম দামে। বিশ^মানের কফি পাবেন কম দামে। ডুইরিয়ান, ড্রাগন, রামবুটান ও সালাক ফল খেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন : বাতামে হোটেল-রিসোর্টের অভাব নেই। সমুদ্রঘেঁষা রিসোর্টে থাকতে চাইলে হারিস ও তুরি বিচ রিসোর্ট, নংসা ভিলেজ, নিপা আইল্যান্ড রিসোর্ট, কেটিএম রিসোর্ট, হেরিসন রিসোর্ট ও মেরিনা রিসোর্ট রয়েছে। নাগোয়া সিটিতেও থাকতে পারেন, এখানে অনেক হোটেল রয়েছে। চার তারকা মানের হারমোনি স্যুটস হোটেলে ২ জন ৪০০০ টাকায় এক রাত যাপন করতে পারবেন বুফে ব্রেকফাস্টসহ। বাতাম ট্যুরের হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, গাইড ও মিনি ক্রুজের বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে বাতাম গাইড হলিডেজের সঙ্গে।

 

কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে মিদান মালিন্দো অথবা মালয়শিয়ান এয়ারলাইনে, মিদান থেকে বাতাম লায়ন, বাটিক এবং সিটিলিংক এয়ারলাইনে টিকিট করতে পারেন। সবমিলিয়ে বিমান ভাড়া হতে পারে ৩৫০০০ টাকা। আর সিঙ্গাপুরের ভিসা থাকলে আরও সহজ হবে। ঢাকা থেকে যে কোনো এয়ারে সিঙ্গাপুর। ভাড়া ২৫০০০ টাকার কম/বেশি। আর সিঙ্গাপুর থেকে সমুদ্রপথে মাত্র ৫০ মিনিটে বাতাম। ক্রুজ ভাড়া ১৫০০ টাকা। 

সর্বশেষ খবর