শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
মূল রচনা

ক্যান্সার চিকিৎসায় অনন্য খাজা ইউনুস আলী হাসপাতাল

♦ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ♦ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন শিক্ষার্থীরা ♦ সব ধরনের চিকিৎসার সুযোগ

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

ক্যান্সার চিকিৎসায় অনন্য খাজা ইউনুস আলী হাসপাতাল

সৌন্দর্যমন্ডিত মনোরম পরিবেশে নির্মিত হাসপাতালটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৯৯৫ সালের ১৬ নভেম্বর। ২০০৪ সালের ৪ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়

 

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য অবদান রাখছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। আন্তর্জাতিক মানের এই হাসপাতালে দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসগণ সেবা প্রদান করছেন। স্বল্প খরচে অপারেশন ও চিকিৎসাসহ জটিল-কঠিন রোগের চিকিৎসাসেবার কারণে হাসপাতালটি ইতোমধ্যে এশিয়া মহাদেশে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। বিশেষ করে হাসপাতালের ক্যান্সার সেন্টারটি অন্যতম। আশপাশের অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা স্বল্পমূল্যে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পাচ্ছেন। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও কলেজের লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় ভারত-নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রী কলেজটিতে এমবিবিএস ডিগ্রি নিতে আসেন।

প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সৌদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নে ৩০০ বিঘা জমির ওপর হাসপাতাল অ্যান্ড কলেজটি নির্মিত হয়। যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত মনোরম পরিবেশে নির্মিত হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৯৯৫ সালের ১৬ নভেম্বর। ২০০৪ সালের ৪ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। সেই থেকে ১৭ বছর ধরে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে হাসপতালটি। মানবসেবার ব্রত নিয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মীয় কামেল সাধক ওলি শাহ সুফি হজরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহ.)-এর মেয়ের জামাই এনায়েতপুর গ্রামের আলহাজ মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাবেক এমডি ডা. এম এম আমজাদ হোসেন হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। নিজ অর্থ ব্যয়ে এ অঞ্চলের শিক্ষা ও চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষকে স্বল্প খরচে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসাসেবা দিতেই অজপাড়াগাঁয়ে সর্বাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালটি নির্মাণ করেন তিনি। হাসপাতালটিতে রেডিয়েশন অনকোলজি (ক্যান্সার) বিভাগে বিশ্বমানের প্রযুক্তির দ্বারা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি ও ব্রে-থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেমোথেরাপির জন্য রয়েছে বিশ্বমানের সিরিঞ্জ পাম্প, মেডিসিন ও ইনজেকশনের ব্যবস্থা। রেডিও থেরাপিতে কনভেনশনাল থ্রিডিসিআরটি, আইজিআরটি, আইএমআরটি, এসআরএস, এসআরটিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি রয়েছে। এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিতে এখানে ব্রেকি থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। দেশের বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে ক্যান্সার রোগীদের ব্রেকি থেরাপির জন্য সময় লাগে ১৫/২০ ঘণ্টা, সেখানে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মাত্র তিন মিনিটে এই থেরাপি প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে বিদেশমুখী রোগীরাও আসছেন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে।

ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালটিতে মেডিসিন, সার্জারি, স্ত্রী ও প্রসূতি, শিশু ও নবজাতক, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, গ্যাস্ট্রো-এন্ট্রোলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, ক্যান্সার সেন্টার, মেডিকেল অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, প্যালিয়েটিভ অ্যান্ড টারমিনাল কেয়ার, মেডিসিন, চক্ষু, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিকস্, রিউমেটোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, ডায়ালাইসিস, আইসিইউ, ইমার্জেন্সি, সিসিইউ, প্যাথলজি, এনআইসিইউ, অ্যানেস্থেসিওলজি ও ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। একঝাঁক দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওপেন হার্ট সার্জারি ও ক্যান্সার চিকিৎসায় উপমহাদেশের মধ্যে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। হাসপাতালটিতে আধুনিক মানের ৫৮৬টি বেড রয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ২১টি অপারেশন থিয়েটার ও রোগ নির্ণয়ের প্যাথলজিক্যাল ল্যাব রয়েছে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশি রোগীদের কাছেও বেশ আস্থা অর্জন করেছে এটি। বাংলাদেশে কর্মরত রাশিয়া, জাপান, কোরিয়াসহ বহু দেশের নাগরিকরা নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে থাকেন এখানে। হাসপাতালটিতে হার্ট ও ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয় দেশের অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় ৬০ ভাগ কম। দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা খরচের ১৫ শতাংশ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।  উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার দরিদ্র মানুষ, এমনকি সারা দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।  এ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়মিত রোগী আসছেন হাসপাতালটিতে।

সর্বশেষ খবর