অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওডিআই ক্রিকেট থেকে হঠাৎ অবসর নিয়েছেন। শরীরের ওপর চাপ নিতে না পারায় এই সিদ্ধান্ত, তবে টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে খেলে যেতে চান তিনি।
বিশ্ব ক্রিকেটের এক বিস্ফোরক অধ্যায় শেষ হলো। অস্ট্রেলিয়ার তারকা অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার জানিয়েছেন, শরীর আর ৫০ ওভারের ধকল নিতে পারছে না। তবে তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেশের হয়ে খেলে যেতে চান এবং লক্ষ্য রাখছেন ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে।
‘ফাইনাল ওয়ার্ড’ পডকাস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাক্সওয়েল বলেন, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর বুঝলাম, শরীর আর নিতে পারছে না। প্রতি ম্যাচের পরই ব্যথা নিয়ে ঘুমাতে হচ্ছিল। আমি নির্বাচক জর্জ বেইলির সঙ্গে কথা বললাম এবং বললাম, ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমি সম্ভবত খেলতে পারব না। এখনই আমার জায়গায় কাউকে গড়ে তোলার সময়।”
? এক নজরে ম্যাক্সওয়েলের ওয়ানডে ক্যারিয়ার
- ম্যাচ: ১৪৯
- রান: ৩৯৯০ | গড়: ৩৩.৮১ | স্ট্রাইক রেট: ১২৬.৭০
- সেঞ্চুরি: ৪ (এর মধ্যে একটি ডাবল সেঞ্চুরি)
- উইকেট: ৭৭
- ওডিআই বিশ্বকাপ জয়: ২ বার (২০১৫, ২০২৩)
ইতিহাস গড়া ইনিংস
২০২৩ সালের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে যখন অস্ট্রেলিয়া পড়ে ৯১ রানে ৭ উইকেটে, তখন একাই ম্যাচ জেতান ম্যাক্সওয়েল। তিনি অপরাজিত ছিলেন ২০১ রানে—প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ওডিআইতে ডাবল সেঞ্চুরি, রান তাড়ায় বিশ্বের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, এবং কোনো নন-ওপেনারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও এটি।
তিনি বলেন, “ওটাই ছিল আমার ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। এমন এক ইনিংস যেখানে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দুনিয়াকে দেখাতে পেরেছিলাম—এটাই আমি, এটা আমার সামর্থ্য।”
আরও কিছু রেকর্ড
- ২০২৩ বিশ্বকাপে ৪০ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
- ২০১৫ বিশ্বকাপে ৫১ বলে শতরান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
- ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেজে করেন ১০৮ রান, এনে দেন জয়।
বল হাতেও অবদান
- ২০১৫ বিশ্বকাপে ছিলেন দলের প্রধান স্পিনার, নিয়েছেন ৬ উইকেট। ২০২৩ বিশ্বকাপে ছিলেন দ্বিতীয় স্পিনার, ৪.৮১ ইকোনমি রেটে বল করে ফাইনালে রোহিত শর্মার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন।
- ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচে শেষ ওভারে মাত্র ২ রান ডিফেন্ড করে জিতিয়ে দেন দলকে।
ফিল্ডিং—ম্যাক্সওয়েল মানেই চমক
চাইলেই বল হাতে কিংবা ব্যাটে ম্যাজিক দেখাতেন, তবে ফিল্ডিংয়েও ম্যাক্সওয়েল ছিলেন অনন্য। অভ্যন্তরীণ রিং কিংবা বাউন্ডারি—যেখানেই থাকুন, দুর্দান্ত ক্যাচ, দ্রুত রিফ্লেক্সে ম্যাচের গতি বদলে দিতে পারতেন।
অস্ট্রেলিয়ার শ্রদ্ধা, বিশ্ব ক্রিকেটের বিদায়
- নির্বাচক জর্জ বেইলি বলেন, “ওডিআই ক্রিকেটে ম্যাক্সওয়েলের প্রভাব অসাধারণ। দুইটি বিশ্বকাপ জয়ে তার অবদান অনস্বীকার্য।”
- ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও টড গ্রিনবার্গ বলেন, “তার ব্যাটিং বহু দর্শককে মাঠে এনেছে, তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছে। অস্ট্রেলিয়া তার কাছে ঋণী।”
ভবিষ্যতের লক্ষ্য
ম্যাক্সওয়েল এখনো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলতে চান। সম্প্রতি আইপিএলে আঙুল ভেঙেছিলেন, বর্তমানে পুনর্বাসনে আছেন। চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লীগ ক্রিকেটে খেলার আশা করছেন। এরপর ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অস্ট্রেলিয়ার ক্যারিবিয়ান সফরের টি-টোয়েন্টি দলে তাকে দেখা যেতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক