করমজল। দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। এখানে কুমির, বানর ও হরিণের দেখা মেলে। সেখানের রেঞ্জার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির। তিনি এখানের দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সময় ধরে কুমির বানরের প্রেম বিরহের গল্প শোনান। তার গল্প মুগ্ধ হয়ে শোনেন দর্শনার্থীরা।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাসিন্দা তিনি। বন বিভাগে চাকরি করেন ৩৫ বছর। তার মধ্যে করমজলে আছেন ১৪ বছর। প্রাণীদের আবেগ অনুভূতি খেয়াল করেন। কুমিরের খাবার দেওয়া ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন আনন্দের সঙ্গে। সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন শেডে ছোট মাঝারি কুমির। বড় কুমিরগুলো পুকুরে। চিকিৎসার প্রয়োজনে পুকুর থেকে তুলে আনেন তিনি। খাবার দেন। তিনি আয় আয় ডাক দিলে পুকুরের কুমির ওপরে উঠে আসে। কুমির কী খায়, কখন প্রজনন মৌসুম, কীভাবে তাপ গ্রহণ করে তার বর্ণনা দেন দর্শনার্থীদের। তার বর্ণনা শুনতে করমজলে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।
আজাদ কবির জানান, তাদের একটি পুকুরে পুরুষ কুমির আলেকজান্ডার, নারী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল বাস করত। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি জুলিয়েট একটি বানর ধরছিল। এ সময় তার আক্রমণে আহত হয় পিলপিল। আমরা জুলিয়েটকে ওপরে উঠিয়ে এনে কাটা স্থানে ১০টি সেলাই দিই। ১৮ দিন চিকিৎসার পর আবার পুকুরে ছেড়ে দিই। ছাড়ার সময় তখনকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন স্যারকে বলেছিলাম, জুলিয়েট আক্রান্ত হতে পারে। তিনি কারণ জানতে চাইলেন। তাকে বললাম, আলেকজান্ডার জুলিয়েটকে ভালোবাসে। তা পিলপিলের সহ্য হচ্ছে না। জুলিয়েট না থাকায় এই ফাঁকে আলেকজান্ডার ও পিলপিল সম্পর্ক গড়ে তোলে। আমার কথাই ঠিক হলো। জুলিয়েট পুকুরের ২০ গজ ভিতরে ঢুকতেই আবার আক্রান্ত হলো। এ সময় আলেকজান্ডার জুলিয়েট ও পিলপিলের মাঝে এসে ভেসে উঠল। মনে হলো সে ঝগড়া মীমাংসা করে দিচ্ছে। জুলিয়েটকে পরে নদীতে অবমুক্ত করা হয়। বানরের বিষয়ে বলেন। তাদের দলনেতা রয়েছে। তারা সদস্যদের অপরাধের শাসন করে। কোনো বানর অপরাধী হলে তাকে মাঝে বসিয়ে বিচার করে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী কাউকে লঘুদণ্ড কাউকে গুরুদণ্ড দেয়। লঘুদণ্ডে তাৎক্ষণিক মারধর করে। একবার দেখলাম মায়ের কোলে থাকা ছোট বানরও শাস্তিতে অংশ নিচ্ছে। গুরুদণ্ড হচ্ছে তাকে মারধর করে খালের অন্য পাড়ে তাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে কেউ মিশে না। প্রাণীদের সঙ্গে কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, অসুস্থ বাঘ, কুমির উদ্ধার ও চিকিৎসাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়। অবশ্য কাজ করতে গিয়ে ওদের প্রতি মায়া জন্মে গেছে। এতে তাদের চাহিদা ও আবেগ অনুভূতিরও ধারণা পাওয়া যায়। এক দিন তাদের না দেখলে কেমন যেন লাগে! সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাজী নূরুল করিম বলেন, আজাদ কবির আমাদের একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। তিনি প্রাণীদের জীবনচক্র গল্পের মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলেন। এতে দর্শনার্থীরা আনন্দ পান।