নওগাঁ জেলাজুড়ে এখন শত শত পুকুর-দিঘিতে চাষ হচ্ছে মাছ। নিবন্ধিত ৩২টি মৎস্য রেণু উৎপাদনকারী হ্যাচারি সরবরাহ করছে তাদের নিজস্ব উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির পোনা। উৎপাদিত মাছ এখন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন মৎস্য চাষিরা...
ধান ও আমে সমৃদ্ধির পর এবার মৎস্য উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁয়। অনেকটা নীরবেই ঘটেছে এই বিপ্লব। জেলাজুড়ে এখন শত শত পুকুর-দিঘিতে চাষ হচ্ছে মাছ। নিবন্ধিত ৩২টি মৎস্য রেণু উৎপাদনকারী হ্যাচারি সরবরাহ করছে তাদের নিজস্ব উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য পোনা। উৎপাদিত মৎস্য এখন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন মৎস্য চাষিরা। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, হ্যাচারি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্থানীয় প্রযুক্তিতে রেণু পোনা উৎপাদন করছেন। প্রতিটি হ্যাচারিতে একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ব্যক্তি সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন। হ্যাচারিতে তাদের পরিচিতি ‘ডাক্তার’ হিসেবে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে মান্দা, নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশা এই চারটি উপজেলায় কোনো হ্যাচারি নেই। তবে নওগাঁ সদরে পাঁচটি, রাণীনগরে ১৬টি, আত্রাইয়ে দুটি, মহাদেবপুরে দুটি, পত্নীতলায় একটি, ধামইরহাটে তিনটি ও বদলগাছীতে তিনটি নিবন্ধিত হ্যাচারি রয়েছে।
কথা হয় আবদুল জব্বার নামে এক মৎস্য চাষির সঙ্গে। তিনি বলেন, সিজন অনুযায়ী বিভিন্ন মাছের চাহিদা বিভিন্ন ধরনের। কাতলা, রুই, মৃগেল, পাবদা, বাটা ছাড়াও সব ধরনের হাইব্রিড মাছ তিনি চাষ করেন। যখন যে সময়ে যে মাছের চাহিদা তা সামনে রেখেই মাছ চাষ করা হয়। যেন উপযুক্ত সময়ে মাছ বিক্রির মতো সাইজ হয়ে যায়। আতিকুর রহমান নামে এক মৎস্যচাষি বলেন, ‘আমি কাতলা ও রুইমাছ বেশি চাষ করি। মাছগুলো চার-পাঁচ কেজি ওজন হওয়ার পর বিক্রি করি। এতে সময় একটু বেশি লাগে কিন্তু দাম ভালো পাওয়া যায়। যে সময় যে মাছের চাহিদা বেশি সেই মাছের পোনা উৎপাদনে আগাম প্রস্তুতি নিতে হয়। বর্তমানে পাবদাসহ ছোট প্রজাতির এক মণ মাছ থেকে যে রেণু উৎপাদন হচ্ছে তা মৎস্য চাষিদের কাছে ২১ থেকে ২৩ হাজার টাকা দামে বিক্রি করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দাম রয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আলী বলেন, জেলায় ২০২৪ সালে বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা উৎপাদন হয়েছে ১২.৯০ মেট্রিক টন। যা থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতি, আকৃতি ও ওজনের মৎস্যের সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি। রেণু পোনা উৎপাদনকারী ও মৎস্য চাষি উভয়কে সচেতন করতে এবং গুণগত মান ঠিক রাখতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তরা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।