অটোরিকশাচালক সোহেল রানা। তিনি পরপর দুটি বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করান। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিমানটি পরিচালিত হয়। তার তৈরি বিমানটি একনজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের মানুষ
প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ফোম, ককশিট, সাইকেলের এসফোক, ফ্যানের মোটর, স্যান্ডেলের সোল, গুনা, আঠা, বাঁশসহ বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে বিমান তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন অটোরিকশাচালক সোহেল রানা। তিনি পরপর দুটি বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করেন। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিমানটি পরিচালিত হয়। তার তৈরি বিমানটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের মানুষ। তার স্বপ্ন তিনি বিমানের পাইলট হবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্র্য। তারপরও সবার সহযোগিতা নিয়ে তিনি পড়াশোনা করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান। জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ভূখণ্ডের গুচ্ছগ্রাম বাজারের ইউনুস আলী ও শাহিনুর বেগমের ছেলে সোহেল রানা। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে দহগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। বাবা ইউনুস আলী গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করেন। মা শাহিনুর বেগম গৃহিণী। অভাবের সংসার। একসময় সোহেল রানা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনেন। সেটি চালিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ ও সংসারের হাল ধরেন তিনি। সোহেল রানা জানান, ছোট থেকেই বিমান তৈরির স্বপ্ন ছিল। পাঁচ বছর ধরে ইউটিউব ও মানিকগঞ্জের জুলহাসের বিমান তৈরি দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। কিন্তু অভাবের সংসারে বিমান তৈরির টাকা কোথায় পাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। এদিকে প্রতিদিন অটো চালিয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে ঋণ পরিশোধ ও বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালান। এবার মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে (দৈর্ঘ্য ২১ ইঞ্চি ও প্রস্থ ২৮ ইঞ্চি, ওজন ৩৮০ গ্রাম) বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করেন। এর আগে ২০২৪ সালে দৈর্ঘ্যে ২৮ ইঞ্চি ও প্রস্থে ৪২ ইঞ্চি আকারের বিমান তৈরি করেন। সেটিতেও সফল হন। বর্তমান বিমানটি ১২ থেকে ১৫ মিনিটে এক কিলোমিটার আকাশে উড়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার যেতে পারে। রিচার্জেবল লিথো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত বিমানটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই বিমানটিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা লাগালে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূর থেকে অনায়াসে দেখা যাবে। সোহেল আরও বলেন, ‘আমার স্বপ্ন আমি পড়াশোনা করে পাইলট হতে চাই। বিমান তৈরিতে কোনো সহযোগিতা পেলে আমি আরও ভালো কিছু করে দেখাতে পারব।’ সোহেল রানার মা শাহিনুর বেগম বলেন, ‘আমরা দরিদ্র। অভাব-অনটনের কারণে আমার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে সোহেল রানা বিভিন্ন খেলনা বিমান তৈরি করে। এজন্য আমরা কেউ কিছু বলি না।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি মেধাবী। আর্থিক কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। বর্তমানে সে অটোরিকশা চালায়; পাশাপাশি বিমান তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।’ এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তার এই প্রতিভা দেখে আমরা সন্তুষ্ট। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।’