শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নেপিয়ারে সেই একই চিত্র

মেজবাহ্-উল-হক

নেপিয়ারে সেই একই চিত্র

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ৭ মাস পর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে নামেন সাব্বির রহমান। শুরুটা করেছিলেন ভালোই। কিন্তু আটকে গেছেন ‘অপয়া-১৩’তে। কাল নেপিয়ারের বাইশগজে পড়ে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যান। সাব্বিরের বিদায়ে ৯৪ রানেই ৬ উইকেট হারায় টাইগাররা। হার্ডহিটার এই ব্যাটসম্যানের পড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি যেন বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসেরই বিধ্বস্ত হওয়ার প্রতীকী ছবি -এএফপি

নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচ ২০০৭ সালে, দ্বিতীয় ম্যাচ ২০১০ সালে, তারপর গতকাল তৃতীয় ওয়ানডে খেলল বাংলাদেশ। সময়ের ব্যবধানে দলে ক্রিকেটারের পরিবর্তন হলেও ফলাফলের চিত্র সেই একই। ম্যাকলায়েন পার্কে আবারও ব্যাটিংয়ে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। আবারও বড় ব্যবধানে হার। প্রথম ম্যাচে ১০২ রানে (ডি/এল পদ্ধতি), দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪৬ রানে পরাজয়ের পর গতকাল মাশরাফিরা হেরেছে ৮ উইকেটে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-২০ মিলে ২১টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। একবারও জিততে পারেনি। স্টিভ রোডসের শিষ্যরা গতকাল প্রথম জয়ের আশায় মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু জয়ের জন্য যেভাবে উজ্জীবিত হয়ে পারফর্ম করা দরকার তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি মাশরাফিদের শরীরীভাষায়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই পরাস্ত হয়েছে টাইগাররা।

সফরের আগে নিউজিল্যান্ডের জন্য আলাদা করে অনুশীলন করতে পারেননি ক্রিকেটাররা। সেখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো সময়ও হাতে ছিল না। তা ছাড়া বিপিএলে টানা ম্যাচ খেলার কারণে কালকের ম্যাচে ক্রিকেটারদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত!

নেপিয়ারের ম্যাকলায়েন পার্ক বরাবরই ব্যাটিং স্বর্গ! আগের দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিং করে দুই ম্যাচেই তিন শতাধিক রানের স্কোর করেছিল (৩৩৫ ও ৩৩৬ রান)। তাই কাল টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। ঘুরে-ফিরে সেই একই দৃশ্য। তবে স্তস্তি এটাই যে, আগেই দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দুইশ রানও করতে পারেনি (১৮১ ও ১৯০ রান), সেখানে কাল বাংলাদেশ করেছে ২৩২ রান। তবে এখানে বড় অবদান মোহাম্মদ মিথুন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের অষ্টম জুটির। তাদের ৮৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেয়।

ম্যাকলায়েন পার্কে কাল মাত্র ৭১ রানেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন বাংলাদেশ দলের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস। এরপর একশ রানের মধ্যেই গুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তবে প্রান্ত আগলে ধরে রেখেছিলেন মিথুন। সাব্বিরের সঙ্গে ২৩ রান এবং মিরাজের সঙ্গে ৩৭ রানের দুটি জুটি গড়ায় কোনো রকমে দলগত শতক পূর্ণ হয়। তারপর মিথুন ও সাইফউদ্দিন নতুন করে লড়াই শুরু করেন। শুরুতে বড় ধাক্কার পর বেশ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যাটিং করেছেন তারা। ৪৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৯০ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেছেন মিথুন। নেপিয়ারে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি এটি। এর আগে ২০১০ সালে ৬৩ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। কাল দারুণ ব্যাটিং করেও হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি সাইফউদ্দিন। অযথাই সুইপ শট খেলতে গিয়ে ৪১ রানে আউট হয়ে যান।

বিপিএলে রানখরায় থাকলেও কাল দুরন্ত শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার। দলীয় ১৯ রানের মধ্যে দুই ওপেনার তামিম ও লিটন বিদায়ের পরও ঝড়ো গতিতেই ব্যাট করছিলেন তিনি। এক ছক্কা ও পাঁচ বাউন্ডারিতে মাত্র ২২ বলে খেলেন ৩০ রানের ইনিংস। মিরাজের ২৬ রানের ইনিংসটিও ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু এক ভুল শটেই আউট হয়ে যান।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কিউই পেসারদের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি।

ট্রেন্ড বোল্ট ও লকি ফার্গুসনের বলে গতির সঙ্গে ছিল দুর্দান্ত সুইং। এই দুই বোলারই টাইগারদের ব্যাটিং ইনিংসে ধস নামিয়ে ছিলেন। বোল্ট নিয়েছেন ৩ উইকেট, আর ফার্গুসনের শিকার ২। তবে লোয়ার ব্যাটসম্যানদের উইকেট শিকারে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্পিনার মিচেল সেন্টনার। তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট।

বাংলাদেশ কাল ৫০ ওভার খেলতেই পারেনি। ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতেই অলআউট। টাইগাররা যখন ব্যাট করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল উইকেটে যেন জু জু আছে! কিন্তু নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় উল্টো চিত্র। তাদের ওপেনিং জুটিতেই আসে ১০৩ রান। ইনজুরি থেকে ফেরা কিউই ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল খেলেছেন অপরাজিত ১১৭ রানের ইনিংস। আরেক ওপেনার হেনরি নিকলসও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। দুই ওপেনার যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন মনে হচ্ছিল যেন দুজনেই খেলা শেষ করে দেবেন। তবে ৫৩ রান করার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যায় নিকলস। এরপর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মতো বোলাররাও ছিলেন নিষ্প্রভ। কিউই ব্যাটসম্যানদের ওপর একটুও প্রভাব ফেলতে পারেননি। তবে ম্যাচ শেষে হারের জন্য ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন মাশরাফি, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। শুরুতে দ্রুত উইকেট পতন হওয়ায় আমাদের স্কোর বড় হয়নি। তা ছাড়া আমরা এখানে এসে কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এক সপ্তাহও সময় পাইনি। তবে আমি হারের জন্য কোনো কিছুকে অজুহাত হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই না। আমাদের ব্যাটিং নিয়ে আরও অনেক কাজ করতে হবে।’

বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ক্রাইস্টচার্চে, ১৬ ফেব্রুয়ারি। হারলেই সিরিজ শেষ। সিরিজের শেষ ম্যাচটি তখন হয়ে যাবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর