শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোথায় হারালেন সেই মুস্তাফিজ!

মেজবাহ্-উল-হক

কোথায় হারালেন সেই মুস্তাফিজ!

মুস্তাফিজুর রহমান

মুস্তাফিজের বোলিং ছিল রীতিমতো এক রহস্য! ব্যাটসম্যানরা তাকে বুঝতেই পারতেন না। হয়তো ডেলিভারির সময় কবজির দিকে তাকিয়ে ব্যাটসম্যানের মনে হলে ইয়র্কার দেবেন, কিন্তু ওই বলটি হয়ে যাচ্ছে ‘কাটার’। কিংবা ব্যাটসম্যান ভাবছেন ‘কাটার’, হয়ে যাচ্ছে ‘স্লোয়ার‘

 

বল ডেলিভারির মুহূর্তেই ব্যাটসম্যান আন্দাজ করে ফেলেন বোলার তার জন্য কী ধরনের বল করছেন! ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কীভাবে বলটি মোকাবিলা করবেন। যে ব্যাটসম্যান যত দ্রুত বোলারকে বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সে ব্যাটসম্যানই সফল হন।

তেমনি যে বোলার যত বেশি ব্যাটসম্যানকে ধাঁধায় ফেলতে পারবেন সে বোলার তত বেশি সফল! এই কাজটি একসময় দারুণভাবে করতে পারতেন বাংলাদেশের তারকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ডেলিভারির সময় তার হাতের কবজি দেখে ব্যাটসম্যান আন্দাজ করতে পারতেন না, তিনি ‘ইয়র্কার’ ‘স্লোয়ার’ নাকি ‘কাটার’ দিচ্ছেন!

মুস্তাফিজের বোলিং ছিল রীতিমতো এক রহস্য! ব্যাটসম্যানরা তাকে বুঝতেই পারতেন না। হয়তো ডেলিভারির সময় কবজির দিকে তাকিয়ে ব্যাটসম্যানের মনে হলে ইয়র্কার দেবেন, কিন্তু ওই বলটি হয়ে যাচ্ছে ‘কাটার’। কিংবা ব্যাটসম্যান ভাবছেন ‘কাটার’, হয়ে যাচ্ছে ‘স্লোয়ার’।

বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছিল মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়েই। মহেন্দ্র সিং ধোনির দল ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে কী বিপদেই না পড়েছিল।

আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনেও বড় ভূমিকা ছিল মুস্তাফিজের। ওই আসরেই হায়দরাবাদের অধিনায়ক আদর করে মুস্তাফিজকে ডাকলেন ‘দ্য ফিজ’ নামে। তখন থেকে মুস্তাফিজের সংক্ষিপ্ত নাম হয়ে যায় ফিজ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে মুস্তাফিজের আগমন যেন অনেকটা ধূমকেতুর মতোই। খুব কম সময়ই ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক হয়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু এখন মুস্তাফিজের বোলিংয়ের সেই রহস্য আর নেই!

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মুস্তাফিজ খেলছেন রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে। দলটির আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি জানিয়েছিলেন, বিপিএলে মুস্তাফিজ ফর্মে ফিরবেন!

রংপুরের হয়ে প্রথম ম্যাচে প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়ায় মনে হচ্ছিল নবির কথাই ঠিক। কিন্তু শেষের ওভারেই সব এলোমেলো হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কান হার্ডহিটার দাসুন শানাকা নেন ২৬ রান। টানা চার বলে ৪ ছক্কা হাঁকান তিনি। একসময় মনে হচ্ছিল, ছয় ছক্কাই হয়ে যায় কিনা। তবে শেষের দুটি ডেলিভারি তিনি অসাধারণ দিয়েছেন। কিন্তু চার বলই মুস্তাফিজের বোলিং ফিগারকে খুবই ‘সাদামাটা’ করে দিয়েছে।

জাতীয় দলের জার্সিতে ভারতের বিরুদ্ধে সব শেষ সিরিজেও তার বোলিং ছিল খুবই সাদামাটা। দিল্লির টি-২০ ম্যাচে ২ ওভারে দিয়েছেন ১৫ রান, রাজকোটে ৩.৪ ওভারে দিয়েছেন ৩৫ রান, শেষ টি-২০তে নাগপুরে ৮ ওভারে দিয়েছেন ৪২ রান।

২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০ টি-২০তে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ২৫টি, ইকোনমি ৯.৪৭। দুই বছরে ৩৪ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৬৩ উইকেট। এ সময়ের মধ্যে ৫ টেস্টের ৮ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন মাত্র ৮ উইকেট। যতই দিন যাচ্ছে, মুস্তাফিজ যেন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও হারিয়ে ফেলছেন।

কেন মুস্তাফিজের বোলিংয়ে আর কোনো ‘রহস্য’ নেই? কেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারলেন না মুস্তাফিজ?

-এমন প্রশ্ন যেন সবার! কিন্তু কোনো উত্তর নেই।

ভক্তদের কাছে ‘দ্য ফিজ’ যেন এখন এক হতাশার নাম!

‘কোথায় হারালেন সেই মুস্তাফিজ!’

পাদটীকা : সঠিক ব্যবহারবিধি না জানলে ধারালো অস্ত্রও দ্রুত ভোঁতা হয়ে যায়!

 

টি-২০

ম্যাচ ৩৭, উইকেট ৫২

সেরা বোলিং ৫/২২

ইকোনমি ৭.৮৭

 

ওয়ানডে

ম্যাচ ৫৬, উইকেট ১০৭

সেরা বোলিং ৬/৪৩

ইকোনমি ৫.২৪

 

টেস্ট

ম্যাচ ১৩, উইকেট ২৮

সেরা বোলিং ৫/৬৬

ইকোনমি ৩.২০

সর্বশেষ খবর