সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

শারজাহ থেকে দুবাই স্পোর্টস সিটি

বাংলাদেশের ম্যাচের পর ‘ভারত-পাকিস্তান’ উত্তাপ

শারজাহ থেকে দুবাই স্পোর্টস সিটি

মুশফিক-নাঈমের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। বড় স্কোর করার পরও ফিল্ডিং ও বোলিং ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরাজয়বরণ করতে হয় টাইগারদের - বিসিবি

যেন জেতা ম্যাচ হেরে গেল বাংলাদেশ। লঙ্কানরা যখন মাঠে উল্লাস করছে তখন বিষণœ মনে লাল-সবুজের সমর্থকরা বের হচ্ছিলেন শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে। মিনিট ত্রিশেক পরেই ৪৫ কিলোমিটার দূরে দুবাই স্পোর্টস সিটিতে শুরু হয় বিশ্বকাপের সেরা লড়াই- ‘ভারত-পাকিস্তান’ মহারণ।

চির বৈরী দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দুই দেশের সমর্থকদের কাছে এটি যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ক্রিকেট বিশ্বের কাছেও এই ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব। ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছেও বহু আকাক্সিক্ষত এক ম্যাচ।

করোনা মহামারীর জন্য এখন প্রেস বক্সে বসে খেলা কাভার করার সুযোগ পাওয়াই কঠিন। কারণ, প্রেস বক্সে নির্ধারিত আসনের অর্ধেক ফাঁকা রাখতে হয়। চাহিদার তুলনায় আসন কম। এজন্য দেখা যায়, অধিকাংশ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সাংবাদিকরাই ঠিক ঠাক সুযোগ পান না।

কিন্তু আগের রাতে হঠাৎ লক্ষ্য করি, ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি থেকে ‘অ্যাপ্রুভাল’ মেইল। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে ‘ভারত-পাকিস্তান’ ম্যাচ কাভারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ যেন অনেকটা হরিষে বিষাদ। কেননা, একই দিনে দুপুরে শারজাহতে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা’ ম্যাচ, সন্ধ্যায় দুবাইয়ে ‘ভারত-পাকিস্তান’  মহারণ। দুই ম্যাচের মধ্যে সময় মাত্র কয়েক মিনিট, কিন্তু পাড়ি দিতে হবে ৪৫ কিলোমিটার পথ।

খেলা শেষে শারজাহ স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে আসার পর শুরু হয় আরেক বিড়ম্বনা। টেক্সি নেই। যে চালককে আগেই বলা ছিল, তিনি অন্য যাত্রী নিয়ে চলে গেছেন। তারপর ১৫ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল আরেক টেক্সি।

অতঃপর যখন দুবাই স্পোর্টস সিটিতে পৌঁছানো গেল ততক্ষণে প্রথম ইনিংসের খেলা অর্ধেক শেষ।

বাংলাদেশ দল শারজায় হেরেছে নিজেদের ভুলে। অপরিপক্ব ক্যাপ্টেন্সি, সাইফুদ্দিন-আফিফ-মাহমুদুল্লাহর খরুচে বোলিং এবং লিটন কুমার দাসের দুই দুটি ক্যাচ মিস টাইগারদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। অথচ এই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে ৫৭ রানের ক্যারিশম্যাটিক এক ইনিংস খেলে মুশফিকুর রহিম নতুন করে প্রত্যাবর্তনের পান্ডুলিপি লিখলেন। ওপেনিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লের চিন্তা দূর করে দিয়ে মোহাম্মদ নাঈম খেললেন ৬২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিন্তু দল হারায় সবই বৃথা গেল।

কালকের দিনটি হতে পারত সাকিব আল হাসানের। দারুণ বোলিং করলেন। ১৭ রানে নিলেন ২ উইকেট। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার কাল পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদিকে টপকে টি-২০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। আফ্রিদির উইকেট ৩৯টি, এখন সাকিবের ৪১টি। কিন্তু বাংলাদেশের হারে যেন সবই মাটি হয়ে গেল।

ম্যাচে তিনটি ওভার বাংলাদেশকে জয় থেকে ছিটকে দিয়েছে। ১৩তম ওভারে পার্টটাইমার আফিফ হোসেন দিয়েছেন ১৫ রান, ১৪তম ওভারে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ নিজে দিয়েছেন ১৬ এবং ১৬তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২২ রান দিয়ে ম্যাচটি যেন শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিলেন।

এই ম্যাচ হারার পেছনে বড় ব্যর্থতা নেতৃত্বে। কারণ, দলের সেরা বোলার সাকিব আল হাসান এবং মুস্তাফিজুর রহমানের একটি করে ওভার বাকি ছিল। শ্রীলঙ্কা জয় তুলে নেয় ১৯তম ওভারে। শেষের ওভারটি মুস্তাফিজ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও সাকিবের একটি ওভার বাকিই থাকত।

এ কেমন অধিনায়কত্ব, দলের সেরা বোলারকে ব্যবহার না করে পার্টটাইমার দিয়ে ম্যাচ হেরে বসে থাকে? প্রশ্ন উঠেছে, মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্ব নিয়ে!

এদিকে দুবাই স্টেডিয়ামে ঢুকে দেখি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতেরও যাচ্ছেতাই অবস্থা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিরাট কোহলির দল মাত্র ৩১ রানেই হারায় টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে। পাওয়ার হিটার রোহিত শর্মা রানের খাতাই খুলতে পারেননি। আইপিএলে সুপার ফর্মে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল মাত্র ৩ রানেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন। সূর্যকুমার যাদব দারুণভাবে শুরু করেও ইনিংসকে বড় করতে পারেননি। তবে অধিনায়ক বিরাট কোহলি এক প্রান্ত আঁকড়ে ধরে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৫৭ রানের দারুণ একটি ইনিংসও খেলেন কোহলি। তারপরও দলের স্কোর ১৫১ রানের বেশি হয়নি।

সুপার ফর্মে থাকা পাকিস্তান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে ১৫২ রানের লক্ষ্য পেয়ে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ১০ উইকেটে জিতে যায় তারা। বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম জয় এটি। যেন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল পাকিস্তান। আর এই ইতিহাস গড়াতে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক বাবর আজম নিজেই। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে গড়া তার ওপেনিং জুটিই দলকে নিরাপদে পৌঁছে দিল।

বাবর আজম নিজে খেললেন ৫২ বলে ৬৮ রানের ‘ক্যাপ্টেন্স নক’। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৭৯ রান। অবশেষে বিশ্বকাপে ভারত জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো পাকিস্তানের।

ম্যাচ শেষে দুবাই স্টেডিয়ামে ভারতীয় দলের মেন্টর মহেন্দ্র সিং ধোনি ও বিরাট কোহলির সঙ্গে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সাক্ষাতটা ছিল মনে রাখার মতো। ধোনি কি যেন বললেন, আর তাতে হাসিতে ফেটে পড়লেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। এমন দৃশ্য দেখে দর্শকরাও উল্লসিত। ক্রীড়া যে কেবলই লড়াই নয়, বন্ধুত্বের প্রতীক, ‘ভারত-পাকিস্তান’ ম্যাচের শেষের দৃশ্যটি যেন তারই অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকল।

 

ভারত : ১৫১/৭, ২০ ওভার (কোহলি ৫৭, রিশাভ ৩৯, জাদেজা ১৩; শাহিন আফ্রিদি ৩/৩১, হাসান আলি ২/৪৪, শাদাব ১/২২)।

পাকিস্তান : ১৫২/০, ১৭.৫ ওভার (মোহাম্মদ রেজওয়ান ৭৯*, বাবর আজম ৬৮*; বুমরাহ ০/২২, ভুবনেশ্বর ০/২৫)।

ফল : পাকিস্তান ১০ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : শাহিন আফ্রিদি।

সর্বশেষ খবর