শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বদলে যাওয়া ফিজকে দেখছে বিশ্ব

মেজবাহ্-উল-হক

বদলে যাওয়া ফিজকে দেখছে বিশ্ব

সাফল্য এমনই- কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা ও ধৈর্যের পরই তা ধরা দেয়! কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের আইপিএলে এবারের সাফল্য যেন পরিশ্রমীদের সামনে বাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিল।

সাফল্য এমনই- কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা ও ধৈর্যের পরই তা ধরা দেয়! অনেকে বলেন সাফল্য ‘গড গিফটেড’! কিন্তু কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের আইপিএলে এবারের সাফল্য যেন পরিশ্রমীদের সামনে বাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিল।

খানিকটা ফ্ল্যাশ ব্যাকে যাওয়া যাক! দেশের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ে ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করে আলোচনায় আসেন মুস্তাফিজ। কি দুর্দান্ত তার কাটার, স্লোয়ার ও ইয়র্কার! ব্যাটসম্যানরা তার বলই বুঝতে পারছিলেন না।

আইপিএলে সেবার (২০১৬ সালে) সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে খেলতে নেমে বিস্ফোরক বোলিং করে ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন তোলেন মুস্তাফিজ। ওই আসরে ফ্রেঞ্চাইজি দলটি যে অসি তারকা ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে আইপিএল শিরোপা জিতেছিল তার নেপথ্যে ছিলেন বাংলাদেশের এ ক্যারিশম্যাটিক পেসার। সেবার মুস্তাফিজ এতই চমৎকার বোলিং করছিলেন যে, তখন হায়দরবাবাদের একাদশে জায়গাই হচ্ছিল না তখনকার বিশ্বসেরা পেসার কিউই তারকা ট্রেন্ট বোল্টের। ক্যাপ্টেন ডেভিড ওয়ার্নার তো মুগ্ধ হয়ে মুস্তাফিজের নাম দিয়ে দেন ‘দ্য ফিজ’!

এক আড্ডায় মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে দুজন ক্রিকেটার ‘গড গিফটেড’ প্রতিভা পেয়েছেন। তাদের একজন মোহাম্মদ আশরাফুল, আরেকজন মুস্তাফিজুর রহমান।

সত্যিই কি তাই!

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুল জাতীয় দলে নিজের ক্যারিয়ারকে দীর্ঘায়িত করতে পারেননি। অথচ তাকে নিয়ে কত বড় স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের।

মুস্তাফিজুর রহমান প্রশংসার জোয়ারে ভেসে গিয়ে যেন তীর হারিয়ে ফেললেন। অনেক দিন তার বোলিংয়ে ছিল না ধার। কাটার মাস্টারের বলে দেখা যায় না ভয়ংকর কাটার। জাদুকরী স্লোয়ার নেই। ব্যাটসম্যানরা বল ডেলিভারির সময় মুস্তাফিজের কবজির কাজ দেখে বুঝতেই পারতেন না, বলটি স্লোয়ার হবে কি না! সেই মুস্তাফিজ স্লোয়ার করলেই ব্যাটসম্যানরা বল পাঠিয়ে দিতেন গ্যালারিতে। ইয়র্কার যাচ্ছেতাই! পরের কয়েক আসরে আইপিএলেও কাটার মাস্টার ছিলেন খুবই সাদামাটা। একাদশেই সুযোগ হয়নি নিয়মিত।

তবে নিজেকে হারিয়েই যেন বোধদয় হলো মুস্তাফিজের! আসলে ‘গড গিফটেড’ বিষয়টি আপেক্ষিক। মুস্তাফিজ যেন অনুধাবন করতে পারলেন, সাফল্য নিহীত আছে কেবলমাত্র কঠোর পরিশ্রমের মাঝেই। সাধনায় কি না পাওয়া যায়!

তারপর পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে মুস্তাফিজ যেন বদলে গেলেন। আবারও ফর্মে ফিরলেন। সেই আইপিএল মঞ্চই এখন বদলে যাওয়া মুস্তাফিজকে দেখছে। প্রতি ম্যাচেই তার দল দিল্লি ক্যাপিটালসকে মুগ্ধ করছেন। যদিও স্কোর কার্ড দেখে মুস্তাফিজের বোলিং ক্যারিশমা বোঝা কঠিন। কিন্তু এ মুহূর্তে দিল্লির সবচেয়ে কার্যকরী বোলার কাটার মাস্টার। দ্য ফিজের জন্য দিল্লির একাদশে জায়গা হারাচ্ছেন টি-২০র সেরা গতি তারকা দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার নরকিয়ে।

একের পর এক ম্যাচে ক্যারিশমা দেখিয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের মন জয় করে নিয়েছেন কাটার মাস্টার। দিল্লির কোচ রিকি পন্টিং, অধিনায়ক রিশভ পান্থ তো মুস্তাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। দলটির তারকা ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নারও অভিভূত।

ফিজ যে প্রতি ম্যাচেই উইকেট পাচ্ছেন এমন নয়। কিন্তু দলের বিপদের সময় যখনই বল হাতে নিচ্ছেন পাল্টে যাচ্ছে ম্যাচের চিত্র। কখনো দেখা গেল পাওয়ার প্লেতে অন্য বোলাররা বেদম মার খাচ্ছেন, তখন মুস্তাফিজ এসে থামিয়ে দিলেন গতি। স্লোক ওভারেও ভীষণ কার্যকরী। তার বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে যেন ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো নার্ভাস হয়ে যাচ্ছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এই মুস্তাফিজ ২০১৬ সালে আপিএল জয়ী সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মুস্তাফিজের চেয়েও ভয়ংকর!

দলে দারুণ জনপ্রিয় বাংলাদেশের এ পেসার। মুস্তাফিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে সতীর্থরা বাংলা শিখছেন। কারণ, ফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ‘বাংলা ভাষা’।

সর্বশেষ খবর