সকাল ১০টায় হাসতে হাসতে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে ঢুকলেন জস বাটলার, স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস ও রবার্ট কি! হাঁটতে হাঁটতে স্যাম কারেন ইংলিশ ক্যাপ্টেন বাটলারকে কিছু একটা বললেন, সঙ্গে সঙ্গে অন্য তিনজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। তারপর নাম এন্ট্রি করে সোজা চলে গেলেন কোর্সে।
ঠিক একই সময়ে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে চলছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অনুশীলন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। যদিও গতকাল ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অনুশীলন বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু ঐচ্ছিক অনুশীলন হলেও বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে নামার আগে প্রাকটিস যে কতটা জরুরি তা খুব ভালো করেই জানেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা।
একে তো ওয়ানডে সিরিজ, তারপর এমন এক দলের বিরুদ্ধে খেলা যারা (বাংলাদেশ দল) হোমে ২০১৬ সালের পর কোনো ওয়ানডে সিরিজ হারেনি। সব শেষ সিরিজে তো ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ভারত হেরেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনুশীলনের জন্য যতটা সময় পাওয়া যায় তা লুফে নেওয়ার কথা। কিন্তু স্বয়ং ক্যাপ্টেন কি না অনুশীলন বাদ দিয়ে চলে গেলেন গলফ খেলতে!
কারণ কী? ক্রিকেটের জন্য গলফ খেলা কতটা জরুরি?
বাটলাররা আসলে গলফ কোর্সে গিয়েছিলেন লং শটের প্রস্তুতি নিতে। কীভাবে বাংলাদেশের মাটিতে আরও ভালো করা যায় হয়তো সে চিন্তা থেকেই দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অনুশীলনের চেয়ে গলফ খেলাটাই ইংলিশ অধিনায়কের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
ক্রিকেট এবং গলফ ভিন্ন দুই খেলা হলেও একটা জায়গায় দারুণ মিল। গলফে যেভাবে সুইং করা হয় একইভাবে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা স্ট্রেইট ড্রাইভ ও ‘ভি শট’ খেলেন। দুই ক্ষেত্রেই একই রকম ‘বডি সুইং’ করতে হয়। সে কারণেই বড় ম্যাচের আগে পিঞ্চহিটাররা গলফ খেলে নিজেদের আলাদাভাবে প্রস্তুত করেন।
আর বাটলার হচ্ছেন স্ট্রেইট ড্রাইভ ও ‘ভি’ শটের মাস্টার। সব ধরনের শটই তিনি দুর্দান্ত খেলেন। তবে তার বেশি পছন্দ স্ট্রেইট ড্রাইভ ও ‘ভি’ শট। এ কারণেই দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অনুশীলন করা বাদ দিয়ে গলফ কোর্সে চলে গিয়েছিলেন বাটলার।
এ ছাড়া গলফ খেলার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে ‘ফিটনেস’! কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে ১৮ হোল খেলতে হাঁটতে হয় সাড় ৬ কিলোমিটার। বাংলাদেশের এই কোর্সে খেলা অনেক চ্যালেঞ্জিং। ফেয়ারওয়ে সমতল হলেও পাটিং গ্রিন উঁচুতে। তাই এ কোর্সে এক রাউন্ড খেললে একজন খেলোয়াড়ের ফিটনেসেরও বড় পরীক্ষা হয়ে যায়। সে কারণেই ইংলিশ ক্রিকেটাররা বিশ্বের যেখানেই খেলতে যান না কেন গলফ খেলা তাদের চাই-ই চাই।
ম্যাচ জয়ের জন্য অনুশীলন কিংবা কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া যতটা জরুরি, তার চেয়েও বুঝি বেশি প্রয়োজন বোধহয় রিল্যাক্স মুডে থাকা! চাপমুক্ত থেকে লং শট খেলার অনুশীলনের জন্য গলফ কোর্স উৎকৃষ্ট জায়গা! সবুজের মাঝে সেরা অনুশীলন করতেই মূল লড়াইয়ের আগে কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে গিয়েছিলেন বাটলার। গতকাল গলফ খেলে ইংলিশ ক্যাপ্টেন যে খুবই তৃপ্ত সেটা বের হওয়ার সময় তার শরীরী ভাষা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। বাটলারের কথা শুনে আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন, ‘কোর্সটা দারুণ। অনেক ভালো লাগছে। রিল্যাক্স লাগছে। এখানে আসতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে।’ ক্রিকেট নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ইংলিশ ক্যাপ্টেন।
কুর্মিটোলার ১৮ হোলেই খেলেছেন বাটলার। সকাল সোয়া ১০টার দিকে টি-অফ করেন। বাটলারের সঙ্গে একই গ্রুপে ছিলেন ইংলিশ তারকা পেসার স্যাম কারেন, আরেক পেসার ক্রিস ওকস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবার্ট কি। চারজনই বেশ ফানি মুডেই ছিলেন কোর্সে।
জস বাটলারের সঙ্গে ক্যাডি হিসেবে ছিলেন আজাদ। তিনিই বাটলারকে কুর্মিটোলা কোর্সের বিভিন্ন হোলের গ্রিন সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এত বড় একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে ক্যাডি হিসেবে থাকতে পারব এটা ভাবিনি কখনো। তার ব্যবহার এতই চমৎকার, বলে বোঝানো যাবে না। আমাকে বস বলে সম্বোধন করেছেন। পাটিং করার সময় বললেন, বস, কীভাবে মারব বলেন? তার সঙ্গে আমার দারুণ সময় কেটেছে।’
গতকাল মিরপুরে অনুশীলনের পর দুপুরে পুরো দলই কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে চলে যায়। বাটলাররা যখন বের হচ্ছিলেন, তখন দলের অন্য সদস্যরা খেলা শুরু করছিলেন। পড়ন্ত বিকাল পর্যন্ত কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে পার করে দেন ইংলিশরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ নিয়ে খুবই সতর্ক সফরকারীরা।