রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
যে কারণে নিষিদ্ধ হলেন সোহাগ

দেশের ফুটবলে বড় লজ্জা

শুধু সোহাগ নন, ধরা খাচ্ছেন রুই-কাতলারাও!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দেশের ফুটবলে বড় লজ্জা

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের অপেক্ষায় সাংবাদিকরা। আবু নাইম সোহাগের নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চায় সবাই। তিনি এলেন। গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলেন নিজের কক্ষে। কিছুক্ষণের প্রস্তুতি নিয়ে এলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু এ কি! দুই-তিন কথা বলেই চলে গেলেন! জানিয়ে গেলেন, ফিফার পাঠানো প্রতিবেদন নাকি এখনো পড়াই হয়নি তার।

বাফুফে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দরজার নেমপ্লেটে আর আবু নাইম সোহাগের নামটা নেই। জালিয়াতি, মিথ্যাচার, আর্থিক অনিয়ম এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা দুই বছর নিষিদ্ধ করেছে তাকে। ফিফার নির্দেশনা মেনে সোহাগকে কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাফুফে।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দুঃসংবাদটা এসেছে বাংলাদেশে। সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে ফিফার পক্ষ থেকে অফিশিয়াল মেইলের মাধ্যমে আবু নাইম সোহাগের নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অবহিত করা হয়। এই মেইলের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয় ৫১ পাতার একটি প্রতিবেদন। ২০২০ সাল থেকে তদন্ত করছে ফিফার ইন্ডিপেন্ডেন্ট এথিকস কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সামনে নিজেদের বক্তব্য দিতে গত ফেব্রুয়ারিতে জুরিখে যান সোহাগ এবং বাফুফের অর্থ বিভাগে কাজ করা অনুপম ও আবু হোসেন। তারও আগে থেকেই বাফুফের অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তবে বাফুফের পক্ষ থেকে এসব অনিয়মের ব্যাপারে বরাবরই অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। এবার আর অস্বীকৃতির উপায় কী!

বাফুফে সভাপতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘আমি একটা দুঃসংবাদ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।’ সালাউদ্দিন বলেন, ‘গত রাতে (শুক্রবার রাতে) সোহাগের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সে বলেছে, আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। সোহাগ কাসে (কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট) আপিল করবে।’ এরপরই তিনি বললেন, ‘আমি এখনো ফিফার প্রতিবেদনটা পুরোপুরি পড়িনি।’ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন ঢাকার বাইরে। তারা ফিরলে বোর্ড মিটিং করেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বাফুফে। পরের প্রশ্নটা ছুটে গেল বাফুফে সভাপতির দিকে, এই ঘটনাটা কী লজ্জাজনক? প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে বাফুফে সভাপতি ‘থ্যাংক ইউ’ বলে চলে গেলেন নিজ কক্ষে। আর্থিক অনিয়ম নিয়েও একটা প্রশ্ন হয়। এই প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বললেন, ফিফা নাকি আর্থিক অনিয়মের কথা বলেইনি! অথচ ৫১ পাতার প্রতিবেদনজুড়ে আছে আর্থিক অনিয়মের নানা ঘটনা।

বাফুফের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করার ঘটনা বেশ বড় ধরনের আঘাত করেছে ক্রীড়াঙ্গনকে। এ ঘটনায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই লজ্জাজনক।’ অনেকে আবার বলছেন, এটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।

পয়লা বৈশাখে ঘটা করে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই বলেছে, মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা। এই ঘটনার পর কী বাংলাদেশের ফুটবল থেকে গ্লানি মুছে যাবে! নাকি অসংখ্য আইসবার্গের মধ্যে কেবল একটার নাম আবু নাইম সোহাগ! আরও কত আইসবার্গ রয়ে গেছে, বলা কঠিন! আবু নাইম সোহাগের অনিয়মের দায় তো বাফুফের সভাপতিও এড়াতে পারেন না। এড়াতে পারেন না যারা এই আর্থিক প্রতিবেদন পাস করেছেন তারাও।

সোহাগ নিষিদ্ধ হয়েছেন। তার এ কৃতকর্মের সঙ্গে তো আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারেন। এখন কি শুধু সোহাগে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি ফিফার ঘোষণা আসবে আরও কাউকে নিষিদ্ধ করার। এই ক্ষেত্রে কোনো রুই-কাতলার নামও কি পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর