পুরুষ জাতীয় দল সেমিফাইনালেই খেলতে পারছে না। ২০০৯ সালের পর থেকে গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছে। নেপালে অপরাজিত শিরোপা জিতে দেশে ফেরার পর সাবিনা-সানজিদাদের যে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এক কথায় তা বিরলই বলা যায়। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্রিকেটাররা দেশে ফিরলে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু সাবিনাদের মতো নয়। অন্ধকারে ডুবে থাকা দেশের ফুটবলে আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন মেয়েরা। অথচ তারাই এখন বঞ্চনার শিকার। সাফ শিরোপা জয়ের প্রায় আট মাস পার হয়ে গেছে। সাবিনারা এখনো মাঠে নামতে পারেননি।
সাফ জেতার পর বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনই কথা দিয়েছিলেন নারী জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা বাড়বে। অথচ সাফ জেতার পর প্রথম বিদেশ সফরটা বাতিল হয়ে গেছে। অর্থ সংকট দেখিয়ে সাবিনাদের অলিম্পিক বাছাই পর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে অংশ নিতে দেয়নি বাফুফে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবের পর মনে হচ্ছিল নারী ফুটবলারদের সমীহ চোখে দেখবে বাফুফে। কিন্তু কীসের কী! বিদেশ সফর তো দূরের কথা, দেশের মাঠে সাবিনারা কবে নামবেন তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা কাটছে না। অলিম্পিক বাছাই পর্বে খেলতে না পারায় সাবিনাদের মধ্যে হতাশাও নেমে এসেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বাফুফের এক ঘোষণায় তাদের মন চাঙ্গাও হয়ে ওঠে।
চলতি মাস থেকে দেশে প্রথমবারের মতো নারী ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। নারী ফুটবলারদের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্যও হয়ে ওঠে। কেননা পাঁচ তারকা এক হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানে ফ্রাঞ্চাইজি লিগের আকর্ষণীয় ট্রফি উন্মোচন করা হয়েছিল। কোন বল দিয়ে খেলবে তাও ঠিক হয়ে যায়। অনুষ্ঠান হয়েছে কিন্তু দলই ঠিক হয়নি। বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জোরালো কণ্ঠে বলেছিলেন, দল, ভেন্যু সব ঠিক হয়ে যাবে। ফ্রাঞ্চাইজি লিগ মাঠে গড়ানোটা সময়ের ব্যাপার।কই, ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরুর সম্ভাব্য তারিখও পার হয়ে গেছে। কারা খেলবে তাও ঠিক হয়নি এখনো। ভেন্যু জটিলতা তো আছেই। আয়োজক প্রতিষ্ঠান কে স্পোর্টসের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ করিম বলেন, ‘সময় লাগলেও এটা বলতে পারি ফ্রাঞ্চাইজি লিগ হবেই।’ প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে হবে? বাফুফেই বলে দিয়েছে কে স্পোর্টস তাদের বকেয়া অর্থ শোধ না করা পর্যন্ত ফ্রাঞ্চাইজি লিগ মাঠে নামানো যাবে না। ২০২২-২৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপের স্বত্বের চুক্তি বাবদ এ প্রতিষ্ঠানের কাছে আড়াই কোটি টাকার পাওনা রয়েছে।
ফ্রাঞ্চাইজি লিগের জন্য সাবিনাসহ আরও কয়েকজন ফুটবলার ভারতীয় লিগে অফার পেয়েও তা ফিরিয়ে দেন। এখন তো তারা পুরোপুরি অন্ধকারে। বাফুফে থেকে তারা আর কত বেতন পান। বছরে মূল আয় তো হয় প্রিমিয়ার লিগ খেলেই। এখন ফ্রাঞ্চাইজি লিগের অপেক্ষা করতে গিয়ে যদি নারী লিগটা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো সব শেষ। সবকিছু মিলিয়ে অনিশ্চিয়তায় আছেন সাবিনারা।