অনিয়মই যেন ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও প্রথম কয়েক বছর ছাড়া এ অঙ্গন ছিল অনিয়মে বন্দি। অতীত ঝেড়ে ফেলে এখন থেকে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মেনেই ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হবে। খেলাধুলা থাকবে রাজনৈতিক মুক্ত। দৃঢ় কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকালই তিনি প্রথম সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে বসে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে আসিফই সবচেয়ে কম বয়সে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। আগে যারা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের আমলে ক্রীড়াঙ্গন ছিল দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরপুর। বয়স কম হলেও আসিফের চ্যালেঞ্জ কম নয়। কেননা এতদিনের অভ্যাসে পরিবর্তন আনাটা সত্যিই কঠিন। তবে ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশা এ টগবগে তরুণই পারবেন ক্রীড়াঙ্গন থেকে অনিয়ম দূর করার সূত্রপাত ঘটাতে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই ক্রীড়াঙ্গন ঘিরে আলোচনা তুঙ্গে। এমন কোনো ফেডারেশন বা সংস্থা নেই যে, দুর্নীতি কিংবা অর্থ লোপাট হয়নি। বিশেষ করে বড় দুই ফেডারেশন নিয়েই আলোচনাটা হচ্ছে বেশি। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জেতার পর ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও মান সব খেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বিশ্ব এক নামেই চেনে। ক্রিকেটারদের পরিশ্রম আর নৈপুণ্যের কারণে ক্রিকেটের রমরমা অবস্থা। অথচ ট্র্যাজেডি হচ্ছে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্মকর্তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজের ভাগ্য গড়েছেন। বিসিবি এখন এতটা ধনী যে, তাদের অর্থ দিয়ে দেশের সব ফেডারেশন পরিচালিত হতে পারে। এ অর্থকে ঘিরেই যত দুর্নীতির অভিযোগ।
ফুটবল ফেডারেশনেও একই চিত্র। ফান্ডের দিক দিয়ে তারা ক্রিকেটের মতো সচ্ছল নয়। তবু দেশের দ্বিতীয় ধনী ফেডারেশন। ফিফা থেকে মোটা অঙ্কের অনুদান ছাড়াও স্পন্সরের অর্থও পাচ্ছে। এটা সঠিক খাতে ব্যয় না করে গত ১৫ বছর বাফুফেতে যেন হরিলুট চলেছে। দুর্নীতি ও অর্থ লোপাট হয়েছে এর বড় প্রমাণ বিশ্ব ফুটবল অভিভাবক সংস্থা ফিফা। তারা দুর্নীতির দায়ে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে যেমন নিষিদ্ধ করেছে, তেমনি ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদীকে জরিমানা করেছে। প্রায় ১৬ বছর ধরে বাফুফের কমিটিতে একই লোক থাকায় এ ফেডারেশনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কিছুই ছিল না। চিহ্নিত কয়েক প্রভাবশালী কর্মকর্তা পকেট ভারী করায় ফুটবলের মান এতই তলানিতে এসে ঠেকেছে, যা লজ্জাকেও হার মানিয়েছে।
সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই চাচ্ছেন বিসিবি ও বাফুফের বর্তমান কমিটির পরিবর্তন। বিশেষ করে সভাপতি পদে নাজমুল হাসান পাপন ও কাজী সালাউদ্দিনকে হটানোর দাবি উঠেছে। এ প্রসঙ্গটি ক্রীড়া উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। আসিফ খুব সতর্ক ও মেধা খাটিয়ে তার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুটোই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। সরকার পরিচালিত না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। কেননা বিসিবি যেমন আইসিসি তেমনিভাবে বাফুফে আবার ফিফার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে। হুট করে ফেডারেশন ভেঙে দেওয়া মানে নতুন করে সমস্যা ডেকে আনা।’ ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিসিবি সভাপতি দেশে না বিদেশে আছেন তার কোনো সন্ধান মিলছে না। একটা সংস্থাকে কাজ করতে হলে সবাইকে কাজ করতে হয়। সভাপতির মতো দায়িত্বশীল লোক যদি অনুপস্থিত থাকেন তাহলে এ বিষয়ে কী করা যায় তা সমাধান পেতে আমরা কাজ করে যাব। কারোর অনুপস্থিতে কর্মকান্ড থেমে থাকতে পারে না।’ দেশের ক্রীড়াঙ্গন সচল রাখতে হবে। অতীতে যা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি চায় না। ক্রীড়াঙ্গন চলবে নিয়ম মেনেই।’ এদিকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন পাল্টে যাচ্ছে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নাম। এরই মধ্যে পরিবর্তনের কাজ শুরুও হয়েছে।