র্যাঙ্কিংয়ে ২১তম স্থানে থাকায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপের পথ খোলা। অর্থাৎ র্যাঙ্কিংয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছয়ে বলে এফআইএইচের নিয়মে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ নিশ্চিত স্বাগতিক দেশ বলেই ওমান যুব বিশ্বকাপে ৭ নম্বর দল হিসেবে খেলবে।
বাংলাদেশের জন্য সম্মান ও বিরাট প্রাপ্তিই বলা যায়। যা কখনো পারেনি। এবার সেই সাফল্যের খাতায় নাম লেখাতে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ স্বপ্নের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জায়গা করে নেয়। ১৯৯৯ সালে দুনিয়া সেরা আসরে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের। এরপর থেকে নিয়মিত খেলছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপে জায়গা করে নিলেও আরেক জনপ্রিয় খেলা ফুটবল কখনো বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কোনো কোনো ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, জীবনেও সম্ভব না। যাক দেশের তিন জনপ্রিয় খেলা হকি এবার বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় রয়েছে।
হকির যে কোনো বিশ্বকাপে এই প্রথম বাংলাদেশ খেলতে যাচ্ছে। জাতীয় দলকে নিয়েই তো হকির মূল বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ জাতীয় দলের পথটা কঠিন হলেও আরেক বিশ্বকাপে তো খেলবে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। আগামী বছর জুনিয়র অর্থাৎ অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপে অভিষেকের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। তার আগে অবশ্য এশিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ খেলবে। ১১ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ওমানের মাসকটে এ আসর অনুষ্ঠিত হবে। স্বাগতিক ওমান ছাড়াও ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশ, চীন, চীনা তাইপে ও থাইল্যান্ড অর্থাৎ ১০ দলকে নিয়ে যুব এশিয়া কাপের আসর।
ফিকশ্চার এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়েই ১০ দল আসরে খেলবে। বিশ্ব হকির অভিভাবক সংস্থা এফআইএইচের নিয়ম অনুযায়ী এশিয়া অঞ্চল থেকে সরাসরি তিন দেশ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠবে। চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ও তৃতীয় স্থানকারী দল বিশ্বকাপে জায়গা পাবে। এরপর আর চারটি দেশ যুব দুনিয়া সেরা আসরে সুযোগ পাবে। সেই ক্ষেত্রে সেমিফাইনাল কারা খেলবে বলা মুশকিল। তবে শক্তির বিচারে ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা পাঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি। র্যাঙ্কিংয়ে ২১তম স্থানে থাকায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপের পথ খোলা। অর্থাৎ র্যাঙ্কিংয়ে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছয়ে বলে এফআইএইচের নিয়মে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ নিশ্চিত। স্বাগতিক দেশ বলেই ওমান যুব বিশ্বকাপে ৭ নম্বর দল হিসেবে খেলবে। যেভাবে হোক বাংলাদেশ তো যুব হকির বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে হকি ফেডারেশনের অচলাবস্থা নিয়ে। এমনিতেই এ ফেডারেশন মুমিনুল হক সাঈদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে গভীর সংকটে বন্দি। তা ছাড়া যে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হয়েছিল তা ছিল অবৈধ পন্থায়। নিয়মকানুন কিছুই মানা হয়নি। পেশি শক্তি ও ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের কোনো কিছুর বিনিময়ে খুশি করে সাঈদের পুরো কমিটিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। এর আগেও সাঈদ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে প্রথমবার হকির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কিন্তু ক্যাসিনোকান্ডে আসামি হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দেশত্যাগ করেন। বাইলজ ভাঙার কারণে সাঈদকে বহিষ্কারও করা হয়। তারপরও অদৃশ্যের শক্তির কারণে তিনি অবৈধভাবে পদ ফিরে পান। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও সাঈদ পলাতক। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলাও হয়েছে।
সামনে হকির বড় আসর অথচ ফেডারেশনের অবস্থা করুণ। দাবি উঠেছে এ অগণতান্ত্রিক ফেডারেশন বিলুপ্ত করে যোগ্যদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হোক। নভেম্বর ১১ থেকে অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়া কাপ। সেপ্টেম্বর এসে পড়ল। এত বড় টুর্নামেন্ট খেলতে তো বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিতে হবে। স্বল্প পরিসরে প্রস্তুতি নিয়ে খেললে ভালো কি আশা করা যায়। শক্তির বিচারে না হয় বাংলাদেশের সেমিফাইনালের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদি সেরা পাঁচেও থাকে তা হবে স্বস্তিদায়ক। এফআইএইচের সিদ্ধান্তে এবার যুব বিশ্বকাপে ২৪টি দেশ খেলবে। এখানেই বড় সুবিধাটা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন যদি এশিয়া কাপে যাচ্ছেতাই খেলে তাহলে তিরস্কারের সুরে বলা হবে না ভাগ্যের জোরে বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ!
দেশের নন্দিত সাবেক খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, হকির বৃহত্তর স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত পারা যায় আগের বিতর্কিত কমিটি ভেঙে দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে অস্থায়ী কমিটি করা। আরেক সাবেক তারকা খেলোয়াড় ও কোচ মামুন-উর রশীদেরও একই মত। তাদের কথা হকি তো চালাতে হবে। সামনে বিশ্বকাপ এখন কি ফেডারেশন চাঙা করা উচিত নয়? প্রস্তুতি ছাড়াই কি বাংলাদেশ যুব এশিয়া কাপে খেলবে? এ নিয়ে কি কারোর ভাবনা নেই?