পাকিস্তান জয়ের টেস্ট ট্রফিটি আনা হয়েছে কাগজের কার্টনে ভরে। কার্টন থেকে সেটা উন্মুক্ত করেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার ও টাইগারের সাবেক অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফিস। এরপর সেটা তুলে দেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। টাইগার অধিনায়ক ট্রফি হাতে মিডিয়ার সামনে ফটোসেশন করেন বাঁধভাঙা হাসিমুখে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাজমুলদের নেতৃত্বে প্রথম ধাপের ক্রিকেটাররা যখন পা রাখেন, তখন রাত সোয়া ১২টা। দ্বিতীয় ধাপের ক্রিকেটাররা আসেন রাত আড়াইটায়। প্রথম ধাপে নাজমুলদের সঙ্গে আসেন সফল কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহেও। দুই ধাপে স্কোয়াডের ১৫ ক্রিকেটার আসেন। শুধু দুবাই থেকে লন্ডন চলে যান সাকিব আল হাসান। কাউন্টি ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব খেলবেন সারের হয়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একজন গার্মেন্ট শ্রমিক হত্যায় আসামি করা হয় সাকিবকে। সাবেক অধিনায়ক দেশে কবে ফিরবেন, ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্ট ও ৩ ম্যাচ টি-২০ সিরিজ খেলবেন কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। টিম ম্যানেজমেন্ট বিশ্বাস করেন, সাকিব খেলবেন ভারত সিরিজে। অনুশীলনেও যোগ দেবেন।
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৪ নম্বরে উঠেছে বাংলাদেশ। ২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টাইগাররা এখন পর্যন্ত ৬ টেস্টে জয় পেয়েছে ৩টি। ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ও ৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলবে। টাইগারদের এখনকার মিশন ভারত সফর। নাজমুল বাহিনী এই প্রথম ভারত সফর করবে ফুরফুরে মেজাজে। টেস্ট ও টি-২০ সিরিজ খেলতে টাইগাররা সর্বশেষ ভারত সফর করেছিল ২০১৯ সালে। সেবার দিল্লিতে টি-২০ ম্যাচ জিতেছিল। গোলাপি বলে টেস্ট খেলেছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। কিন্তু হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। এ ছাড়া গত অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান জয় করে গতকাল দেশে ফিরেছেন নাজমুলরা। আগামীকাল পর্যন্ত বিশ্রাম। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হবে টাইগারদের অনুশীলন। সাকিব হয়তো শুরুতে যোগ দেবেন না অনুশীলনে। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছেন, সাকিব দলের সঙ্গে অনুশীলন করুন। ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট চেন্নাইয়ে ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় টেস্ট কানপুরে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত। ৬ অক্টোবর গোয়ালিয়রে প্রথম টি-২০, দিল্লিতে ৯ অক্টোবর দ্বিতীয় এবং ১২ অক্টোবর হায়দরাবাদে তৃতীয় টি-২০ ম্যাচ।
পাকিস্তানের মাটিতে এই প্রথম টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। এর আগে কখনোই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দেশটির মাটিতে জিততে পারেনি টাইগাররা। ২০০১ সাল থেকে টেস্ট খেলছে। মুলতানে ২৩ বছর আগে প্রথম টেস্ট খেলেছিল টাইগাররা। টেস্টটি ছিল এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের। এরপর টাইগাররা আরও কয়েকবার সফর করেছে পাকিস্তানে। কিন্তু জয়ের সাফল্যে উদ্ভাসিত হতে পারেনি। এবারের সফরটা স্মরণীয়। কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই সেরা পারফরম্যান্স। শুরুতে শিডিউলের প্রথম টেস্টটি ছিল রাওয়ালপিন্ডিতে এবং দ্বিতীয়টি ছিল করাচিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য করাচি স্টেডিয়ামে কাজ চলছে। সেজন্য দর্শক থাকবে না মাঠে। দর্শকের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু করাচি থেকে পাল্টে রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর বাকি সব ইতিহাস। বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জিতে নেয় ১০ উইকেটে। নিজেদের ২৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটি। টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান করে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান।
মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানে ভর করে ৫৬৫ রান করে টাইগাররা। টেস্টটি জিততে টাইগারদের দরকার ছিল ৩০ রান। সেটা অনায়াশে টপকে যান টাইগার দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ জয় পায় ৬ উইকটে। স্বাগতিক পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করেন টাইগার পেসাররা। বিশেষ করে হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা গতির ঝড় তুলে বিপর্যস্ত করেন স্বাগতিকদের। পাকিস্তান ঘরের মাটিতে ৭০ বছরের মধ্যে দুবার হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২২ সালে ইংল্যান্ড এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তানকে।
পাকিস্তান সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে থাকা নাজমুল বাহিনী ভারত সফরে যাবে ১৫ সেপ্টেম্বর।