ভুটানের কাছে হেরে যাওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। শুধু এবার নয়, ফুটবলে জাতীয় দলের ভরাডুবি ঘটলেই ধিক্কারের আওয়াজ ওঠে। কিছুদিন ফুটবলার ও বাফুফের কর্মকর্তাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে। এরপর আবার নীরবতা। এভাবেই চলছে দেশের ফুটবল। অথচ এই খেলা বাংলাদেশিদের রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। যে জনপ্রিয়তা ও ঘরোয়া আসরকে ঘিরে মাতামাতি হতো তাতে ফুটবলকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। ফুটবলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দলে পরিণত হবে তা কেউ না ভাবলেও এই আশা ছিল এশিয়ান পর্যায়ে সম্মানজনক স্থানে থাকবে। ৭০, ৮০ এমনকি ৯০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত যে উন্মাদনা ছিল তাতে ফুটবল ঘিরেই ক্রীড়ামোদিদের বড় আশা ছিল। স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক আসরে ফুটবলাররা দেশকে গৌরবে ভাসাবেন।
সেই স্বপ্ন শুধু হারিয়েই যায়নি। এমন ধস নেমেছে তাতে বাংলাদেশ থেকে ভালোবাসার ফুটবলের বিলুপ্তি ঘটে কি না সেই ভয় অনেকের মনে ঢুকে গেছে। মান নামতে নামতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম দুর্বল দলে পরিণত হয়েছে। এই জঘন্য মান নিয়ে জাতীয় দল যে মাঠে নামছে এটাই অবিশ্বাস্য। গত ১৫ বছরে দেশের ফুটবলের অধঃপতন একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেছে। অথচ কাজী সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি হওয়ার পর অনেকে ভেবেছিলেন একজন যোগ্য ফুটবলারই পারবেন ফুটবলের বেহাল দশা কাটাতে। শুধু কী তাই সালাম মুর্শেদী, বাদল রায়, আসলাম, বাবলু, রুপুদের মতো তারকারাও বাফুফের কমিটিতে ছিলেন। যারা ফুটবলের অন্তঃপ্রাণ তাদের দিয়ে উন্নয়ন ঘটবে এমন আশা কে না করবেন? বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটা। এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে ফুটবলের মান তলানিতে এসে ঠেকেছে।
যাক ফুটবল উন্নয়নে এদের মধ্যে কেউ যে পরিকল্পানার ছাপ আঁকেননি তাও বলা যাবে না। বাদল রায় ও আরও ক’জন মিলে কী করলে ভালো হয় তা একাধিকবার সভাপতির কাছে তুলে ধরেছিলেন। সালাউদ্দিন তা তো শোনেননি উল্টো বাদল রায়কে নাকি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন। সভাপতি তাকে গুরুত্ব না দিয়ে সালাম, মাহফুজা আক্তার কিরণ, কাজী নাবিল আহমেদ, পরবর্তীতে আতাউর রহমান ভূঁইয়াকে সব কাজের সঙ্গী করেন। শোনা যায় এদের মধ্যে আবার সালাউদ্দিন নাকি বেশি গুরুত্ব দিতেন কিরণকে। এই মহিলা সংগঠকের কোনো কথা না করতে পারেন না সালাউদ্দিন। কেন এই অবস্থা সেটাই রহস্য। শুধু মুখে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ফুটবলের উন্নয়ন ঘটে সেই রকম কোনো পদক্ষেপই নেননি সালাউদ্দিন। শুধু বিদেশি কোচ এসেছেন ও গেছেন। এটাই ছিল মূল কাজ। এখানে নাকি আবার কমিশনের ব্যাপার জড়িত। সুতরাং অনিয়মে বন্দি থাকা কমিটি ফুটবলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। হাহাকার ছাড়া কিছুই নেই।
কিরণ কীভাবে সবাইকে পেছনে ফেলে ফুটবল পন্ডিত হয়ে গেলেন সেটাই প্রশ্ন। সত্যি বলতে কি দেশের ফুটবল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন সালাউদ্দিন-কিরণ জুটি। অথচ এরাই নাকি গদি ধরে রাখতে ফের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফিফার দোহাই দিয়ে তারা জোর খাটাচ্ছেন। ফুটবলের স্বার্থে এদের কি কোনোভাবে হটানোর পথ নেই?