দুপুর ১টায় ফ্লাইট। ইউএস বাংলায় ঢাকা থেকে সরাসরি চেন্নাই যাবে ক্রিকেট দল। বেলা ১১টার মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, চন্ডিকা হাথুরাসিংহে একে একে উপস্থিত হন বিমানবন্দরে। সবাই যখন বিমানবন্দরে পৌঁছান, তখন বৃষ্টি ঝরছে ঝমঝম করে। বৃষ্টিবাধা উপেক্ষা করে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন গুটিকয় ক্রিকেটপ্রেমী। কারও হাতে লাল-সবুজ পতাকা। কেউ প্ল্যাকার্ড নিয়ে শুভকামনা জানাচ্ছেন। এর মধ্যে মিরাজ বিমানবন্দরে উপস্থিত হতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকে ঘিরে ধরেন একটি সেলফি তুলতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের নায়ক মিরাজও আবদার মেটান। এভাবে হাসিমাখা মুখে ও পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গতকাল ঢাকা ছাড়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে ভারতের চেন্নাইয়ে পা রাখেন নাজমুলরা। চিদাম্বরমে ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় টেস্ট কানপুরে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি টেস্ট খেলেই নাজমুল বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়বে ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলতে। আত্মবিশ্বাসী টাইগার অধিনায়ক ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য খেলবেন, ঢাকা ছাড়ার আগে গতকাল বিমানবন্দরে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেন, ‘এটা একটা সুযোগ। প্রত্যেকে ম্যাচ জেতার জন্য খেলব। সুযোগ থাকবে জেতার। এত লম্বা চিন্তা না করে শক্তি অনুযায়ী যেন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি পাঁচ দিন। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্র্ণ। আমরা জয়ের জন্যই দুটি টেস্ট খেলব।’
পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডির দুই টেস্টে বিধ্বস্ত করেছে স্বাগতিকদের। ব্যাটিং ও বোলিং-উভয় বিভাগে নাজমুল বাহিনী দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে। সিরিজের সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ উইকেট, সিরিজ সেরা ও ম্যাচসেরা সব পুরস্কারই জিতেছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। ১০ উইকেটে জয়ী প্রথম টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংস খেলে সেরা ক্রিকেটার হন মুশফিকুর রহিম। ৬ উইকেটে জয়ী দ্বিতীয় টেস্টের ম্যাচসেরা হন লিটন দাস ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে। ১৫৫ রান ও ১০ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন মিরাজ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ী স্কোয়াড নিয়ে টাইগাররা এখন চেন্নাইয়ে। অবশ্য ইনজুরির জন্য বাঁ হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম নেই ভারত সফরে। তার জায়গায় নেওয়া হয়েছে উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলী অনিককে। স্কোয়াডে চারজন পেসার, দুজন স্পিন অলরাউন্ডার ও দুজন জেনুইন স্পিনার দিয়ে স্কোয়াড সাজিয়েছে। প্রথম টেস্ট হবে চেন্নাইয়ে। চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের পরিসংখ্যান বলছে, সেখানকার উইকেট স্পিনারদের সহায়তা করে। নাজমুল বাহিনীকে লড়াই করতে হবে রবিচন্দন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবদের ঘূর্ণির বিপক্ষে। অবশ্য দাঁত কামড়ে লড়াই করতে হবে সাকিব আল হাসান, মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হোসেনকে। ভারতের পেস অ্যাটাকও শক্তিশালী। জশপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, ইয়াশ দয়াল ও আকাশ দ্বীপদের জবাব দিতে হবে তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদদের। ব্যাট হাতে নাজমুল শান্ত, লিটন, মুশফিক, সাকিব, মিরাজ, সাদমান, মাহামুদুল জয়, জাকির হাসানদের প্রতিপক্ষ বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ইয়াশভি জয়সোয়াল, সরফরাজ খান, ধ্রুব জুরেলদের। সব মিলিয়ে সিরিজটি আগেরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘এটা একটা চ্যালেঞ্জিং সিরিজ হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানে একটা ভালো সিরিজ পার হওয়ার পর দলের মধ্যে বাড়তি আত্মবিশ্বাস আছে। এমনকি দেশের মানুষের মধ্যেও আছে। প্রতিটি সিরিজে একটা সুযোগ। আমরা সফরে দুটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। জেতার জন্য যে জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ, প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ...আমাদের লক্ষ্য থাকবে কাজটা আমরা ঠিকঠাক করতে পারছি কি না। আমাদের কাজ ঠিকমতো করতে পারলে ভালো ফল সম্ভব, তবে চ্যালেঞ্জিং।’
ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। জয় পায়নি। ড্র সাকল্যে দুটি। ভারতের মাটিতে দুটি সিরিজ খেলেছে। এবার খেলবে তৃতীয় সিরিজ। আগের দুই সিরিজে খেলা ৩ টেস্টে হেরেছে যাচ্ছেতাইভাবে। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস রচনা করতে মরিয়া নাজমুল বাহিনী।