প্রথম প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। তাই দুই ম্যাচের সিরিজে তপু বর্মণদের ভাবনায় আজ শুধুই জয়। সন্ধ্যা ৬টায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় দুই দেশের ম্যাচ শুরু হবে। সিরিজ ড্র করতে হলে বাংলাদেশকে জিততেই হবে। হেরে গেলে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পাবে লাল-সবুজের দল। হারে বছরটা শেষ হলে আরেকটি হতাশার সাল পার করবে জাতীয় দল। নারী জাতীয় দল টানা দ্বিতীয় বার সাফ জিতে বছরটা রাঙিয়েছে। অথচ পুরুষ জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। ফুটবলে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে আজও কি বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা নেই? এত হতাশা বলেই তো ফুটবলাররা মনোবল হারিয়ে ফেলেন। যেখানে উৎসাহ দেওয়ার কথা সেখানে কি না যত ভয় কাজ করছে।
পরিস্থিতিটা ফুটবলাররাই তৈরি করেছেন। ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ জিতবে এ প্রত্যাশা সমর্থকদের ছিল। জয় পাওয়ার মতো খেলাটাও খেলেছিলেন মোরসালিনরা। সত্যি বলতে কি সাম্প্রতিককালে জাতীয় দল চোখে ধরার মতো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে বুধবার প্রথম ম্যাচেই। পিছিয়ে থেকেও যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে তা প্রশংসার যোগ্য। সাম্প্রতিক নয় অনেক দিন পর জাতীয় দল গতিময় ফুটবল খেলেছে। যা দেখে দর্শকরাই বলতে বাধ্য হয়েছেন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। কিন্তু এত ভালো খেলেও ফল তো শূন্য। ফুটবল গোলের খেলা। তাই যত ভালো খেলুক না কেন জালে বল জড়াতে না পারলে ষোলআনায় বৃথা। রক্ষণভাগের খামখেয়ালিপনায় প্রথমে গোল খেয়ে বসে। তারপরও বাংলাদেশের পজিটিভ খেলা দেখে মনে হচ্ছিল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে।
মোরসালিন, রাকিব, ফাহিম ও জনি যে সুযোগগুলো পেয়েছিলেন তা কাজে লাগাতে পারলে অন্তত ৩-১ গোলে জিততে পারত। তা আর হয়নি। হয় গোলরক্ষক সেভ করেছেন না হয় পোস্ট ঘেঁষে বা ওপর দিয়ে বল বাইরে চলে গেছে। গ্যালারিতে উল্লাসের বদলে আফসোসের ‘ইস’ শব্দটাই বেশি শোনা গেছে। আজ ভাবনায় শুধুই জয়। এ ছাড়া উপায়ও নেই বাংলাদেশের। কিন্তু এখানে তো ভাবনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে গোলই। যেখানে টোকা মারলেই বল জালে জড়ায় সেখানে কি না মিসের মহড়া। এত মিস হলে ম্যাচ মিস তো হবেই। আবার যে গোল খাওয়ার কথা না তা হজম করেছে বাংলাদেশ। ডিফেন্ডারদের মন কোথায় পড়ে থাকে সেটাই প্রশ্ন।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ভাবনায় গোলই। রক্ষণভাগ যেমন সতর্ক থাকতে হবে। তেমনি সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। জিততে হলে বাংলাদেশকে দুই দিকেই খেয়াল রাখতে হবে।
১৭ মিনিটে পিছিয়ে গেলেও দুই অর্ধ মিলিয়ে ছয়-সাতটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়। এতে কি ম্যাচ জেতা যায়? ফুটবলে হারলেই কোচের সমালোচনাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সেদিন তো হাভিয়ে কাবরেরা শিষ্যদের কৌশল শিখিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন। এখন না পারলে তার কী করার আছে? সত্তর-আশিভাগ বল কন্ট্রোলে রেখেও কাজের কাজ যদি করতে না পারে তাহলে কি কাউকে দোষ দেওয়া যায়? এমন হারে মন-মানসিকতা ভেঙে যাওয়ার কথা। তাই তো সাহস জোগাতে পরের দিন সকালেই বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল ছুটে যান হোটেলে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে নাস্তা করেন এবং কথাও বলেন। সভাপতি তো পুরো ম্যাচই দেখেছেন। তারা সবই করেছেন শুধু গোলটা পানটি। দ্বিতীয় ম্যাচের আগেই সাহস জুগিয়েছেন তাবিথ।
যাক সবকিছু মিলিয়ে আসল প্রসঙ্গ আসা যাক। বাংলাদেশ আজ কি পারবে? জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেছেন, ‘সব পজিশনেই বাংলাদেশকে বেটার মনে হয়েছে। চাপ মুক্ত খেলতে পারলে জয় আসবেই।’ মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হলেও পুরুষরা ব্যর্থতার ঘরে বন্দি। শেষটা জয়ে হলে নতুন বছর ভালো শুরু করার তাগাদা থাকবে। দেশবাসীর প্রত্যাশা আজ পারবেই। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?