তিন ম্যাচ বাকি। ৯ পয়েন্ট হারালেও ঢাকা মোহামেডানের শিরোপা নিশ্চিত থাকবে। স্বাধীনতার পর ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাব এমন নির্ভার হয়ে কবে ফুটবল লিগের শেষ ম্যাচগুলো লড়েছিল। তা হয়তো অনেকের ভুলে যাওয়ার কথা। ৩২ বছরের আগের ঘটনা মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া ঘরোয়া আসরে আগের সেই আকর্ষণও নেই। টিভিতে প্রতিদিন খেলা দেখায় ইউরোপিয়ান লিগ গুরুত্ব হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল যুগে ইউরোপিয়ান লিগের ৫০ বছরের পুরোনো তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও ক্লাবগুলো তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও এসবের প্রতি আগ্রহ নেই। লোকাল লিগের কথা বাদই দিলাম। ফুটবলে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাসও খুঁজে পাওয়া যায় না। সেখানে ক্লাবগুলোর তথ্য না থাকাটা স্বাভাবিক।
শনিবার ফর্টিস এফসির কাছে ঢাকা আবাহনী হারার পর তিন ম্যাচ আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা মোহামেডান। আজ কুমিল্লায় রহমতগঞ্জের বিপক্ষে খেলবে তারা। পরের দুই ম্যাচ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের বিপক্ষে। তিনটি ম্যাচ হারলেও শিরোপা অটুট থাকবে সাদা-কালোদের। তিন ম্যাচ আগে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে। এবার এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৩৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ঢাকা আবাহনী ২৮ ও বসুন্ধরা কিংসের অ্যাকাউন্টে ২৫ পয়েন্ট। দুই দল যদি বাকি তিন ম্যাচ জিতে তারপরও ৩৮ পয়েন্ট ছুতে পারবে না।
পুরোপুরি নির্ভার হয়ে মোহামেডান তিন ম্যাচ খেলবে। ১৯৯৩ সালে মোহামেডান এক ম্যাচ আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। শেষ ম্যাচে আবাহনীর কাছে হেরেও ১ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে সাব্বিরের নেতৃত্বে সাদা-কালোরা হারানো শিরোপা উদ্ধার করে। সেবার ১৮ ম্যাচে মোহামেডানের সংগ্রহ ছিল ৩০ আর আবাহনীর ২৯। ১৯৯৩ সালের পর ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০২ সালে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিবারই শেষ ম্যাচে মোহামেডানের শিরোপা নিশ্চিত হয়। তাও আবার প্রতিপক্ষ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী।
২০০২ সালে ড্র করলেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। কিন্তু নাটকীয় জয়ে মোহামেডান শিরোপা জেতে। ১৯৯৯ সালে শেষ ম্যাচে আবাহনী জিতলেই দুই দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যেত। তখন শিরোপার জন্য প্লে-অফ খেলতে হতো। কিন্তু আলফাজ আহমেদের নেতৃত্বে মোহামেডান সেই ম্যাচে আবাহনীকে পাত্তাই দেয়নি। ৩-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৯৬ সালে শেষ ম্যাচে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হতো। জুয়েল রানার নেতৃত্ব দেওয়া মোহামেডান আবাহনীকে হারিয়েই লিগ সেরা হয়।
১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে লিগে টানা তিনবার শিরোপা জিতে অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। অন্য তিন দলেরও হ্যাটট্রিক শিরোপা রয়েছে। তবে কেউ টানা তিন লিগে অপরাজিত থাকতে পারেনি। এ এক ইতিহাস। যাক এমন বিরল রেকর্ডের পরও তিন লিগে শেষ ম্যাচে মোহামেডান শিরোপা নিশ্চিত করেছে।
১৯৮৬ সালে আবাহনী ভারত থেকে ভাস্কর গাঙ্গুলি, মনোরঞ্জন ধর ও নাইজেরিয়ান চিমা ওকোরিকে উড়িয়ে এনেছিল। ড্র করলেই আবাহনী টানা চারবার লিগ চ্যাম্পিয়ন। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে ২-০ গোলে জিতে যায় মোহামেডান। অবশ্য সেবার শেষ ম্যাচে ওয়ান্ডারার্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান।
পরের দুই লিগেও আবাহনীর বিপক্ষে শিরোপা নিশ্চিত করে শেষ ম্যাচে। ১৯৮৭ সালে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয় প্লে-অফ ম্যাচে। এরপর ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে শেষ ম্যাচে আবাহনী জিতলে দুই দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যেত। কিন্তু গোলশূন্য ড্র করে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান টানা তিনবার অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়।