দল হেরেছে। কিন্তু অসাধারণ খেলেছেন সাকিব আল হাসান। এক কথায় বিগ ব্যাস কে এফসি টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত অভিষেক হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের। আগামী ৯ জানুয়ারি মেলবোর্ন স্টার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবেন সাকিব। তৃতীয় ম্যাচ পার্থ স্কোরচার্সের বিপক্ষে ১৬ জানুয়ারি।
গতকাল হয়েছে বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। হাতে গোনা কিছু লোক ছাড়া কেউই যায়নি ভোট কেন্দ্রে। পরিষ্কারভাবেই বলা যায়, দেশের জনগণ বর্জন করেছে নির্বাচন। ভোট কেন্দ্রে না যেয়ে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা গতকাল দুপুর থেকেই বসেছিলেন টেলিভিশনের সামনে। সবাই আগ্রহ নিয়ে দেখেছেন সাকিবের খেলা। বিগ ব্যাসে সাকিবের দল অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ৬ উইকেটে হেরেছে সিডনি সিক্সার্সের কাছে। তবে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের পারফরম্যান্স ছিল মুগ্ধ হওয়ার মতো। সাকিব ব্যাট হাতে ৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় খেলেছেন ৪৬ রানের ইনিংস এবং ৪ ওভারের স্পেলে ২১ রানের খরচে উইকেট নিয়েছেন ২টি। দল হারলেও তার পারফরম্যান্স তাকে দাঁড় করিয়েছে অন্য এক উচ্চতায়। হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার জন বোথা ইনজুরিতে পড়লে তিনটি ম্যাচ খেলার জন্য তাকে নেয় অ্যাডিলেড। প্রতিদানও দিয়েছেন প্রথম সুযোগেই। গতকাল খেলতে নামার আগে পুরো দল সাদরে বরণ করে নেয় তাকে। শুধু সতীর্থরাই নন, কমেন্ট্রি বঙ্ েবসেও কোচ ব্যারি সাকিবের প্রতিভা নিয়ে নানান উত্তর দেন। সাকিব গতকাল এমন এক সময় ব্যাট করতে নামেন, যখন ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা অ্যাডিলেড। সে সময় খেলতে নেমে খোলসে পুড়ে যাওয়ারই কথা তার। কিন্তু মুখোমুখির প্রথম বলেই ২ রান নিয়ে জানান দেন নিজের আগমনের। সব চাপ সামলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে রেয়ারডনকে নিয়ে ৮০ রান যোগ করেন ৮.২ ওভারে। রেয়ারডন ৪৩ রানে ফিরেন সাজঘরে। সাকিব আউট হন হাফসেঞ্চুরি থেকে মাত্র চার রান দূরে, ৪৬ রানে। ইনিংসের প্রথম রান ছিল দুই। প্রথম বাউন্ডারি মারেন ব্রেট লিকে। লির শর্ট বলকে পুল করে মিড উইকেট দিয়ে সীমানা পার করেন। ৩০ বলের ইনিংসটিতে বাউন্ডারি মারেন তিনটি। ছক্কা হাঁকান দুটি। যার প্রথমটি ছিল ওকেফেকে। ১৪ নম্বর ওভারের শেষ বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় ছক্কাটি মারেন হেনরিঙ্কে মিড অফ দিয়ে। দলীয় ১১২ রানের মাথায় হ্যাজলওডকে তুলে মারতে যেয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন ওকেফের হাতে। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৯ রান করে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স। ৪ ওভারে ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হ্যাজলওড ছিলেন সিডনির সফল বোলার। ১৫০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় সিডনি। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৬ রান যোগ করেন হেনরিঙ্ ও লুম্ব। ৫৫ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর ১০৩ রানে সিডনি হারায় তৃতীয় উইকেট। কিন্তু ততক্ষণে জয় হাতছাড়া হয়ে গেছে অ্যাডিলেডের। ম্যাচে স্ট্রাইকার্সদের টিকিয়ে রেখেছিলেন সাকিব নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে। বাঁ হাতি স্পিনার বোলিংয়ে আসেন ষষ্ঠ ওভারে। নিজের প্রথম ওভারে দুই বাউন্ডারিতে রান দেন ৯। দ্বিতীয় ওভারে প্রথম আঘাত হানেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে আর্মারে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন হেনরিঙ্। প্রথম স্পেলে দুই ওভারে রান দেন ১১ রান। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে আসেন ১৪ নম্বর ওভারে। তৃতীয় ওভারেই তুলে নেন মাইকেল লুম্বকে। এই ওভারে রান দেন ৬। চতুর্থ ও শেষ ওভারে রান দেন ৪। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে রান দেন ২১ এবং উইকেট নেন ২টি। সাকিবের নিয়ন্ত্রিত বোলিং সত্ত্বেও সিডনি ম্যাচ জিতে নেয় ৫ বল হাতে রেখে। ম্যাচ শেষে সাকিব বলেন, 'খেলাটা খুব সহজ ছিল না। আমি মাত্র গতকাল (পরশু) এসেছি। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া যে ভালো খেলতে পেরেছি। জিততে চেয়েছিলাম, কিন্তু শুরুতেই উইকেট হারানোয় চাপে পড়ে যাই আমরা। সেই ধাক্কা আর পরবর্তীতে সামাল দিতে পারিনি।'
অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স : ১৪৯/৭, ২০ ওভার (ফিলিপ হিউজেস ১২, রিয়ারডন ৪৩, সাকিব আল হাসান ৪৬, লুডমেন্ট ১০। ওকেফে ১/১৮, লালোর ১/৩৫, হ্যাজলওড ৩/১৬, নর্থ ১/১২)
সিডনি সিক্সার্স : ১৫০/৪, ১৯.১ ওভার (সাইকেল লুম্ব ৫৪, হেনরিঙ্ ২৬, নর্থ ৩৮, রবি বোপারা ২৩*। রিচার্ডসন ১/২৯, শ্যন টেইট ১/৩৪, সাকিব আল হাসান ২/২১)