আধুনিক শিল্প চাহিদাভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর এবং তাদের টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো SICIP-PKSF প্রকল্প। তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় দেশের ১২,০০০ তরুণকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের এবং প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণরা অগ্রাধিকার পাবে।
এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থীরা ১২টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। তাদের থাকা ও খাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয় প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। এছাড়া, প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর প্রশিক্ষণলব্ধ দক্ষতার ভিত্তিতে আত্ম ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
আজ পিকেএসএফ ভবনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন Skills for Industry Competitiveness and Innovation Program (SICIP) প্রকল্পের পিকেএসএফ অংশের (SICIP-PKSF) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও সহযোগী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। এ প্রকল্পে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব ও SICIP-এর জাতীয় প্রোগ্রাম পরিচালক ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার। দক্ষতা উন্নয়নে পিকেএসএফ-এর কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, PKSF-SICIP প্রকল্পের আওতায় ১২,০০০ তরুণের প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপনের পর সরকার থেকে পিকেএসএফ-কে অধিকতর সহায়তা প্রদান করা হবে। বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে, যার আলোকে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় পিকেএসএফ এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোকে কার্যকর অবদান রাখার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত সচিব ও SICIP-এর নির্বাহী প্রোগ্রাম পরিচালক মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন বলেন, পিকেএসএফ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমরা আশা করবো পিকেএসএফ এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি কোর্স দক্ষতার সাথে সারাদেশে বাস্তবায়ন করবে। তিনি প্রশিক্ষকদের মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের দেশের বাইরে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান জনমিতিক সুবিধা দীর্ঘকাল থাকবে না। এ সুবিধাকে কাজে লাগাতে হলে দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি সৃষ্টির গত্যন্তর নেই। এ লক্ষ্যে, SICIP-PKSF প্রকল্পটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গৃহীত দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফজলুল কাদের বলেন, প্রতি বছর বিশ লক্ষেরও বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, যা দেশের জন্য একই সাথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ সরকার দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। এর সাথে একাত্ম হয়ে পিকেএসএফ এর ‘কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২৫-২০৩০’-এ দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে মানবসামর্থ্য বৃদ্ধিকে একটি অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি জানান, SICIP-PKSF প্রকল্পের আওতায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-স্বীকৃত পন্থায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে লক্ষ্যিত জনগোষ্ঠির মজুরিভিত্তিক ও আত্মকর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।
অনুষ্ঠানে দেয়া বিশেষ বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জসীম উদ্দিন বলেন, বিদ্যমান ১২,০০০ জনের ছাড়াও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণের আওতায় আরো সাড়ে ৮ হাজার জনের প্রশিক্ষণ চাহিদা সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে, যেখানে অগ্রাধিকার পাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা। এছাড়া, আরো ২ হাজার এতিম ও দু:স্থ তরুণদের প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়টি পরিকল্পনাধীন রয়েছে। “শুধু প্রশিক্ষণ নয়, এসব তরুণদের জন্য পুঁজি, প্রযুক্তি ও বাজার সংযোগ সহায়তা নিয়েও পাশে থাকবে পিকেএসএফ”।
অনুষ্ঠানের প্রকল্প সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা প্রদান করেন সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক মোঃ জিয়াউদ্দিন ইকবাল। ইতোপূর্বে SICIP-PKSF প্রকল্পের পূর্বসূরী SEIP প্রকল্পের আওতায় পিকেএসএফ মোট ৩৮,৬৩৩ জনকে সফলভাবে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে।