২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা এখনো আড্ডার টেবিলে ঝড় তোলে। এখনো অনুষ্ঠান সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনার কেন্দ্রে থাকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ওই মনোমুঙ্কার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি। জমকালো, চোখজুড়ানো ওই অনুষ্ঠানটির বিশ্বব্যাপী রেটিং ছিল বেজিং অলিম্পিকের পর। ওই অনুষ্ঠানের প্রেরণায়ই হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টি-২০ বিশ্বকাপের আগে আরও একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামীকাল প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানটিকে অবশ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তকমা লাগাতে রাজি নয় বিসিবি। তারা বলছে, টি-২০ বিশ্বকাপের উন্মাদনা বাড়াতে বাংলাদেশি ও ভারতীয় সঙ্গীত তারকাদের নিয়ে আয়োজিত হবে 'বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট'। অনুষ্ঠানটির বাজেট প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল আইসিসির। এবারেরটা শুধুই বিসিবির। অর্থায়ন করার কথা সরকারের। কিন্তু কত টাকা দিবে সরকার, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি বিসিবি কর্তৃপক্ষ। কেননা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানের টাকা এখনো বাকি রয়েছে।
বিসিবির এখনকার কার্যক্রম চলছে ধারদেনা করে। কিছুদিন আগে ক্রিকেট বোর্ড একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ করেছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। বিসিবি তার রেভিনিউ বাড়াতে পারছে না। বিক্রি করতে পারছে না টিভি রাইটস। কিন্তু ১৮ কোটি টাকা খরচ করে আয়োজন করছে জমকালো অনুষ্ঠানের। এ বিষয়ে বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন বলেন, 'অর্থের বিষয়ে আমার পক্ষে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে আমি শুনেছি, জানি অর্থায়ন করবে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক, কর্পোরেট হাউস।' কনসার্টের অধিকাংশ টাকাই খরচ হবে ভারতীয় সঙ্গীত তারকা এ আর রহমানের জন্য। এই ভারতীয় ছাড়াও কনসার্টে থাকবেন সিংহলিজ-আমেরিকান হিপ হপ তারকা আকন। এছাড়া স্থানীয় তারকাদের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কুমার বিশ্বজিত, এলআরবি, মাইলস ও অর্ণবের। অনুষ্ঠানে গান ছাড়াও থাকবে আতশবাজি, লেজার শো। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করবে বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠান গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং ও ব্লুুজ কমিউনিকেশন। বিসিবিকে সহায়তা করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সরকার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির পুরো খরচ দেওয়ার কথা সরকারের। গত বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল সরকারের। শোনা যায় সেই টাকা এখনো পায়নি বিসিবি। তারপরও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিসিবি। আয়োজন করা হচ্ছে মূলত ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা বাড়াতে, তেমনই জানিয়েছেন বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও, 'এটি আসলে কোনো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নয়। ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উন্মাদনা বাড়াতে এই কনসার্টের আয়োজন করা হচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, বিসিবি চেয়েছিল অনুষ্ঠানটিতে আইসিসির লোগো ব্যবহার করতে। কিন্তু আইসিসি অনুমতি দেয়নি। অথচ টি-২০ টুনামেন্টটি আইসিসির সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। প্রথম তিনমাসে বিসিবি শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের আয়োজন করবে।
এ জন্য বিসিবির খরচ হবে প্রায় ৫১ কোটি টাকা। আয় হবে ৪৪ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়ে যাবে ৭ কোটি টাকা। এমন অবস্থা যখন বিসিবির, তখন ১৮ কোটি টাকার ব্যয়বহুল কনসার্ট আয়োজনের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা।