যা কিছু আবেদন শুধু দর্শকদের মধেই। ক্রিকেটাররা যখনই চার-ছক্কা হাঁকাচ্ছেন, তখনই আনন্দে হাততালি দিয়ে গরম করে তুলছেন নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। ওয়ার্ম ম্যাচ বলেই কি এতটা ফুরফুরে মেজাজে দর্শকরা! অবশ্য দর্শকদের হৈ হুল্লোড়ে মেজাজ পেয়ে বসেছিল মুশফিকুর রহিমদেরও। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-২০ বিশ্বকাপ প্রাক প্রস্তুতি ম্যাচে কাল টাইগাররা ৪ উইকেটে জিতেছে ঠিকই, কিন্তু জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। প্রস্তুতি ম্যাচ, তার উপর আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি নেই, তাই বলে ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষা এমন হবে! বোলিং ও ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল পিকনিক মুডে খেলছেন ক্রিকেটাররা। বোলিং করেছেন গা ছাড়া মেজাজে। ব্যাটিংও ছিল একই রকম। খেলার মানিসকতা কিংবা চড়াও হয়ে বোলিং করা, কোনোটাই দেখা যায়নি মুশফিক, সাকিবদের মধ্যে। তারপরও হযবরল ক্রিকেটের মধ্যে স্বকীয়তায় উজ্জ্বল ছিলেন তামিম ইকবাল ও রুবেল হোসেন। তামিমের ব্যাট কথা বলেছে, বলকে কথা বলিয়েছেন রুবেল হোসেন।
পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ইউএই দলটিকে নিশ্চিত করেই বলা যায় 'জাতিসংঘ' দল। তবে দলটির ক্রিকেট ইতিহাস একেবারে খারাপ নয়। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেছে মরুভূমির দলটি। এই দলটির বিপক্ষে ২০০৮ সালে এশিয়া কাপে খেলেছিলেন মুশফিকরা। সেই ম্যাচটি জিতেছিল অনায়াশে। তাই কালকের প্রস্তুতি ম্যাচে মরুভূমির দেশটির বিপক্ষে হালকা মেজাজ থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই মেজাজের খেসারত প্রায় গুণেই ফেলেছিল টাইগাররা। যদি না শেষ বেলায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১৮ বলে ৬ চারে ৩৩ রানের ইনিংস খেলতেন। তার ব্যাটিংয়েই সাত বল আগে থাকতে প্রস্তুতি ম্যাচটি জিতে নেয় টাইগাররা। কাল শুক্রবার এই মাঠেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মুশফিকরা।
১৬ মার্চ বাংলাদেশের অগি্ন পরীক্ষা। আফগানিস্তান ম্যাচটি জিতলেই প্রায় নিশ্চিত চূড়ান্তপর্ব। আফগান পরীক্ষার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের পুরোপুরি প্রস্তুত করে নেওয়ার মহাসুযোগ টাইগারদের সামনে। কিন্তু কাল খেলতে নেমে বোলাররা যে ধারায় বোলিং করেছেন, তাতে একবারও মনে হয়নি গত দেড়মাসে তারা টানা সাতটি ম্যাচ হেরেছেন। শ্রীলঙ্কার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ছাড়াও এশিয়া কাপে টানা চার হার। এই হারের ধাক্কা সামলাতে বোলারদের যখন পুরো ক্রিকেটীয় মেজাজে বোলিং করার কথা, তখন তারা বোলিং করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের মেজাজে। স্বীকার করেছেন সংবাদ সন্মেলনে আসা তামিম ইকবাল, 'শুরুতে আমরা ভালো বোলিং করতে পারিনি। তখন মনে হয়েছিল তারা ১৬০-৭০ রান করবে। কিন্তু শেষ দিকে আমরা ভালো কামব্যাক করেছি। তাতেই ম্যাচটি আমাদের গ্রিপে চলে আসে।' ইউএই ইনিংসে সাত বোলারকে বোলিং করিয়েছেন মুশফিক। দুই পেসার আল-আমিন ও রুবেল হোসেন বোলিং করেছেন চার ওভার করে আট ওভার। এরমধ্যে রুবেল করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। চার ওভারে রান দিয়েছেন ১৭। যাতে ডট ছিল ১৩টি। ফরহাদ রেজা ২ ওভারে ২৫ রান দেন। প্রথম ওভারেই দেন ১৮ রান। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, মরুর দেশের ব্যাটসম্যানরা খুবই সাবলিল ব্যাটিং করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ের বিপক্ষে। সাকিব চার ওভারে রান দিয়েছেন ২৮। বোলারদের গা ছাড়া মেজাজের বোলিংয়ের দিনে ক্যাচও ছেড়েছেন ফিল্ডাররা। ইউএই'র দলীয় ২৫ রানের রুবেল সহজ ক্যাচটি ছেড়ে দেন। দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেওয়ার পর শেষ ওভারে সহজ ক্যাচ ছাড়েন তামিম।
টার্গেট ১৪৩ রান। ওভার প্রতি সাত রানের সামান্য উপরে। সেটা করতে যেয়েই নাভিশ্বাস উঠেছিল টাইগারদের। প্রথম ওভারের শেষ বলে পুল খেলতে যেয়ে এনামুল ফিরেন সাজঘরে। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে সাকিব আউট হন ব্যক্তিগত ৯ রানে। ইনিংসটিতে একটি ছক্কা ছিল ঠিকই, কিন্তু একবার জীবনও পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ১৭ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ইনজুরি থেকে ফেরা তামিম ও অধিনায়ক মুশফিক ৫৫ রান যোগ করেন ৩২ বলে। মুশফিক ব্যক্তিগত ২৭ রানে অহেতুক সুইপ খেলতে যেয়ে ক্যাচ দেন মিড অনে। অন্যদিকে চমৎকার খেলতে থাকা তামিম হঠাৎ করেই তাল হারিয়ে ফেলেন নিজের। তাই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে যেয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন বোলার মুস্তাফাকে। তামিমের বিদায়ের পর হঠাৎ করেই তিন উইকেট হারিয়ে একটু কোণঠাসা হয়ে পড়ে মুশফিকবাহিনী। ১১২ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতনের পর মনে হচ্ছিল, খেলা শেষ পর্যন্ত গড়াবে এবং আরও একটি আপসেট হতে পারে! কিন্তু সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ফরহাদ রেজা ২.৫ ওভারে ৩৪ রান যোগ করে জয় দিয়েই প্রস্তুতিটা শুরু করে টাইগাররা। ফর্মের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকা মাহমুদুল্লাহ ১৮ বলে ৬ চারে অপরাজিত থাকেন ৩৩ রানে।
কাল জিতলেও ক্রিকেটারদের যে মানসিকতা ছিল, তাতে আফগানদের কঠিন ব্যারিয়ার ডিঙানো কঠিনই হবে মুশফিকদের!