পাঠকরা আমার ওপর বিরক্ত হতেই পারেন। কেননা বাংলাদেশের প্রতিটি ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। আমি এ কথাও উল্লেখ করেছি বাছাইপর্বে হংকংয়ের কাছে হারার পর সুপার টেনে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। বাস্তবে কিন্তু তা হয়নি, বাংলাদেশ গ্রুপের তিন ম্যাচে শোচনীয় হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। আমি কিন্তু কখনো বলিনি, বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবে। তবে আশা ছিল সুপার টেনে মুশফিকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। না ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত বা পাকিস্তানের সামনে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেনি। দর্শকদের কথা বাদই দিলাম, একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমিও লজ্জিত। তারপরও অনেককে বোঝাতে চেষ্টা করেছি একটা দলের সময় খারাপ যেতেই পারে। একথা বলার পর কেউ কেউ তিরস্কার করে বলেছেন, লজ্জা ঢাকতে কত আর চেষ্টা চালাবেন। আসলে মুশফিকদের এমন পারফরম্যান্সে একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমিও হতাশ। কেননা সময়টা খারাপ যেতেই পারে। কিন্তু তিন ম্যাচে লজ্জার চেহারা একই রকম হবে কেন? জয় না পাক একটা ম্যাচ অন্তত লড়াই করে হারতে পারত।
বাংলাদেশের আজ শেষ ম্যাচ। পাঠকরা নিশ্চয় আগ্রহসহকারে দেখবেন ম্যাচ নিয়ে আমি কি লিখছি। হ্যাঁ, আপনারা বিরক্ত বা কেউ কেউ আবার তিরস্কারও করতে পারেন। তারপরও বলব ফলাফল কি হবে জানি না। কিন্তু আমি আজও বাংলাদেশের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অবাক হয়ে কেউ হয়তো বলবেন, এ খেলা নিয়ে মুশফিকরা অস্ট্রেলিয়াকে হারাবে! বিশ্ব ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার শক্তির জুড়ি নেই। চারবার তারা ওয়ানডেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তারপরও টি-২০ বিশ্বকাপে তারা কুলিয়ে উঠতে পারে না। এবারে ফেবারিটের তক্মা নিয়ে বাংলাদেশে আসলেও সেই অস্ট্রেলিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মতো হ-য-ব-র-ল অবস্থা না হলেও তারাও কিন্তু সুপার টেনে তিন ম্যাচ হেরেছে। সুতরাং আজকের ম্যাচটি দুদলের প্রেস্টিজের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। কেউ চাইবে না খালি হাতে ফিরতে। সে ক্ষেত্রে নিয়ম রক্ষার হলেও ম্যাচটি দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আশা করছি। অস্ট্রেলিয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। তারা অল্প ক'দিনের মধ্যে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমার চিন্তা বাংলাদেশকে ঘিরে। হারতে হারতে মুশফিকদের আত্দবিশ্বাস প্রায় জিরোতে এসে ঠেকেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির একটাই পথ অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। তিন ম্যাচে কেন কুলিয়ে উঠতে পারেনি, তা নিশ্চয় মুশফিকরা বুঝতে পেরেছেন। আজ সেসব দিক চিহ্নিত করে খেলতে পারলে ভালো। মনে রাখতে হবে স্পিনে অস্ট্রেলিয়া ততটা পারদর্শী নয়। এটা বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট হতে পারে। আগে বা পরে ব্যাট করলে টপ অর্ডারদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। ব্যাটিং বিপর্যয় কিন্তু ঘটছে টপ অর্ডারদের কারণে। খেলতে পারছেন কেউ। বিশেষ করে পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারছে না। প্রথম ৬ ওভারে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে পারলে অবশ্যই বড় স্কোর গড়া সম্ভব। ১৭০ বা ১৮০ রান তুলতে পারলে আমি বলব অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সম্ভব। আর প্রথমে বল করলে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। মুশফিক হয়তো নাখোশ হতে পারেন তারপরও বলব ওর বোলিং পরিবর্তনটা ভালো হচ্ছে না। আসলে জিততে হলে বাংলাদেশকে আজ ব্যাট, বল বা ফিল্ডিংয়ে সমান দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। কোনো টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া খালি হাতে বিদায় নিয়েছে এ ধরনের নজির নেই বললেই চলে। সুতরাং মান বাঁচাতে অস্ট্রেলিয়া আজ তাদের সেরা খেলাটা খেলতে চাইবে। অধিনায়ক হিসেবে মুশফিক ভালোমতো জানেন জিততে হলে আজ তাদের কি করা প্রয়োজন। মনে রাখতে এক জয়ই সব ব্যর্থতার কলঙ্ক মুছে দিতে পারে।