ধানমণ্ডি ক্লাব মাঠ খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক- পরিবেশবাদীদের এমন দাবি অনেকদিনের। মাঠ উন্মুক্ত করতে মানববন্দন করছেন তারা। কিন্তু তাদের দাবি মানতে রাজি নন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কর্মকর্তারা। ক্লাব কর্মকর্তাদের বক্তব্য, মাঠে খেলা হচ্ছে। পরিবেশও পরিবেশবান্ধব। সুতরাং এ নিয়ে আন্দোলন করার কিছুই নেই।
ধুলোয় মাখামাখি, গরুর হাট এবং মেলা বসা মাঠটিকে পুরোপুরি খেলার উপযোগী করেছে ক্লাবটি। সরকারি অনুদানে তৈরি করা হচ্ছে কমপ্লেঙ্। আবাসন, শপিং কমপ্লেঙ্ কিংবা অন্য কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে না- এসব বুঝাতেই কাল ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় সংবাদ সন্মেলনের। সেখানে মঞ্জুর কাদেরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর মাজহার তান্না, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহেদ রেজা, খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ ইব্রাহীম সাবেরসহ অনেকে। সংবাদ সন্মেলনে ক্লাবটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানানোর পাশাপাশি এলাকার ছেলেদের জন্য মাঠ খুলে দেওয়া হবে বলেও জানান ক্লাব সভাপতি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই ক্লাবের পক্ষে অবস্থান পরিষ্কার করতে এসে হয়ে পড়েন স্মৃতিকাতর।
১৯৬৫ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যখন ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ছক কষেছিল, তখন সেখানে মাঠ ছিল মাত্র দুটি। একটি আবাহনী মাঠ এবং অন্যটি ধানমন্ডি ক্লাব মাঠ। এই মাঠেই ক্লাবটির যাত্রা শুরু ১৯৬২ সালে। যাত্রার পর ক্লাবটির পক্ষে খেলেছেন দেশবরেণ্য ক্রীড়াবিদ কাজী সালাউদ্দিন, তানভীর মাজহার তান্না, ইউসুফ বাবু, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা, টুটুল, গাফফার, মানিক, টিটো, সোহরাব, সেলিম শাহেদরা। দেশবরেণ্য ক্রীড়াবিদরা খেললেও উল্লেখ করার মতো সাফল্য ছিল না ক্লাবটির। কিন্তু ২০০৯ সালে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় ক্লাবটি রূপ নেয় লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। এরপরই ক্লাবটি পেতে থাকে সাফল্য। এরমধ্যে ঘরোয়া ফুটবলে জিতেছে পেশাদার লিগ, ফেডারেশন কাপ। এ বছর কলকাতায় ১১৮তম আইএফএ শিল্ডে টাইব্রেকারে হেরে রানার্স আপ হয়। ক্লাবটি ভবিষ্যতের ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে নির্মাণ করছে কমপ্লেঙ্। ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খরচে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তৈরি করে দিচ্ছে দুটি টেনিস কোর্ট, একটি বাস্কেটবল, দুটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট, চারটি ক্রিকেট বে। এছাড়া ক্লাব নিজ খরচে তৈরি করেছে একটি ফুটবল মাঠ। যদিও সেটা ফিফার মাপ অনুযায়ী হয়নি। মাঠটিকে নিরাপত্তার বেষ্টনিতে বেঁধে রাখতে চারিদিকে দেওয়াল তৈরি করা ছাড়াও রাখা হয়েছে নিরাপত্তা সদস্য। যার ফলে এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলার জন্য প্রবেশ করতে পারে না মাঠে। এ নিয়েই পরিবেশবাদীদের আন্দোলন। তবে অচিরেই এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য ক্লাবটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে জানান ক্লাব সভাপতি মঞ্জুর কাদের, 'কাজ শেষ হলে এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য খুলে দেওয়া হবে মাঠ।' ছেলেমেয়েদের জন্য মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বললেও এখানে শুধু ধানমন্ডির এলিট ছেলেমেয়েরাই খেলতে পারবেন বলে জানান তিনি, 'এখানে ধানমন্ডির এলিট শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা খেলবেন। কোনো টোকাই খেলতে পারবে না।'
সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত থেকে বিসিবি সভাপতি সমর্থন যোগান শেখ জামালের সভাপতিকে, 'ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকদিনের। আমার ছোটবেলা ধানমন্ডিতেই কেটেছে। অনেকদিন পর ক্লাবটিতে এসে ভালো লাগছে। আমি চাই এমন পরিবেশ দেশের আরও অনেক জায়গায় হউক। আমি জানি ভালো কাজ করতে গেলে বাঁধা আসবেই। সুতরাং কাদের ভাই ভালো কাজ থেকে পিছিয়ে পড়লে চলবে না। আমি ভালো কাজের জন্য সমর্থন করি। এর আগে বিসিবির নির্বাচনের সময়ও এমন বাধা এসেছিল। কিন্তু আমি সব সময়ই বলেছি জিম্মিকারীদের সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদেরকে ভিড়তেও দেইনি।' বাফুফে সভাপতি বিস্ময় মাখানো কণ্ঠে বলেন, 'আমি চাই আরও ২০টি এলাকায় এমন কাঠামো তৈরি হোক। আমি ১৯৬৬-৬৭ সালে এখানে খেলেছি। এই মাঠের প্রতি আমার আলাদা একটা টান আছে।' এদিকে পরিবেশবাদীরাও গতকাল ধানমণ্ডিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। স্থপতি মোবাশ্বের বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি বা ক্লাবের বিরুদ্ধে নই। আমরা চাই মাঠটি খেলার জন্য খুলে দেওয়া হোক।