হেলে দুলে মাঠে আসেন এমিলিরা। আয়েশি ভঙ্গিতে অলসভাবে গা গরম করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার ফুটবলার মাঠে এসেছিলেন আরও আধা ঘণ্টা আগেই। ম্যাচ শুরুর আগে দারুণ চনমনে লাগছিল তাদের। ম্যাচেও উজ্জীবিত ছিলেন মারুফরা। কিন্তু কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভাগ্য সহায় ছিল না মুক্তিযোদ্ধার। তাই ভালো খেলেও তারা মোহামেডানের কাছে হেরে গেল ১-০ গোলে। মুক্তিযোদ্ধাকে একমাত্র গোলটি হজম করতে হয়েছে ডিফেন্ডারের ভুলে। শুধু তাই নয়, তাদের একটি গোলও বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ে শূন্য হাতে মাঠ ছাড়েন মানিকের শিষ্যরা।
ঐতিহ্যের ফুটবল ছেড়ে কর্তব্য ভুলে মোহামেডানের ফুটবলাররা যেন নিজেদের সঁপে দিয়েছেন ভাগ্যের হাতে! তাই তো 'অলস' ফুটবল খেলেও তারা কাল পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে। আর এই জয়ে ১০ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে শেখ রাসেল ও মুক্তিযোদ্ধাকে টপকে উঠে গেল পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবাহনীর সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান দুই। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শেখ জামাল। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে নেমে গেল মুক্তিযোদ্ধা। খেলার ১০ মিনিটেই ঘটে নাটকীয় ঘটনা! ডান পাশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার গোল মুখে মোহামেডানের জোরালো আক্রমণ। স্ট্রাইকারদের উদ্দেশ্যে ডি-বক্সে বল বাড়িয়ে দেন মোহামেডানের অরূপ কুমার। কিন্তু বল পেয়ে যান মুক্তিযোদ্ধার ডিফেন্ডার ডেরার্ড লিডক্স! দ্রুত ক্লিয়ারও করেন। কিন্তু বল চলে যায় নিজেদের পোস্টেই। মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক লিটনও ধরতে ব্যর্থ হন। আত্মঘাতী গোলই হতে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে টাচ লাইনে গিয়ে বলের সঙ্গে পায়ের স্পর্শ লাগিয়ে গোলের কৃতিত্ব নিজের করে নেন এমিলি। পুরো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত এই একটি গোলই হয়েছে। তবে আরও একবার গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন এমিলি। ৭২ মিনিটে গোলরক্ষক লিটনের দৃঢ়তায় বেঁচে যায় মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া খেলার পুরোটা সময় যেন মাঠে খুঁজেই পাওয়া যায়নি মোহামেডানকে। মধ্যমাঠ, রক্ষণভাগ সবখানেই মুক্তিযোদ্ধার দাপট। কাল অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল মিস করেছেন মুক্তিযোদ্ধা। খেলা শুরুর তিন মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু সানডের শট মোহামেডানের গোল বারের ওপর দিয়ে যায়। ৪২ মিনিটে এলেটা কিংসলের দূরপাল্লার শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৫০ মিনিটে ওয়াকা কিংসলের ক্রস আটকে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক মামুন। আর ৮০ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধার এলেটা কিংসলের করা গোলটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। কাল মাঠে কিছুটা উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়েছিল। ৫৫ মিনিটে দুই দলের সাত নম্বর জার্সিধারী মোহামেডানের জাহিদ ও মুক্তিযোদ্ধার মারুফের মধ্যে হাতাহাতি। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধও থাকে। পরে রেফারি মো. জালালুদ্দিন দুই দলের দুই সাত নম্বর জার্সিধারীকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। মুক্তিযোদ্ধার কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য পরাজয়ের জন্য দায়ী করেছেন রেফারিকেই। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, 'মারুফকে সরাসরি লাল কার্ড দেখানো ঠিক হয়নি। আমরা পেনাল্টি থেকেও বঞ্চিত হয়েছি। এই ম্যাচে খুবই বাজে রেফারিং হয়েছে।' এদিকে দল জয় পাওয়ায় দারুণ খুশি মোহামেডানের কোচ রুই ক্যাপেলা। তিনি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত আমরা তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছি। এতেই আমি খুশি। সামনের ম্যাচে আমরা আরও ভালো করব।'
মোহামেডান : এমিলি (অধিনায়ক), নাহিদুল, জাহিদ, হেমন্ত, সবুজ, অরূপ, মামুন (গোলরক্ষক), ডেমিয়ান, ফোমবেঙ্গে, জঙ্গু, ফেলিক্স।
মুক্তিযোদ্ধা : সিরাজী, মারুফ (অধিনায়ক), এনামুল, এলেটা, সাইদুল, বিপ্লব, লিটন (গোলরক্ষক), ইকবাল, লিডক্স, সানডে, ওয়াকা কিংসলে।