জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার 'পাইপলাইন' হচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট লিগ। এই প্রতিযোগিতার সেরাদের ভেতর থেকে বেছে নেওয়া হয় জাতীয় দলের নতুন তারকা। কিন্তু জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া ক্রিকেটাররা পুনরায় দলে সুযোগ পাওয়ার প্লাটফরম হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট লিগকে বেছে নেন। আর জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটাররাও নিজেদের ঝালিয়ে নিতে এই প্রতিযোগিতায় নামেন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লিগে সেরাদের তালিকায় নেই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এবারের লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক পাঁচ ব্যাটসম্যান ও বোলাদের মধ্যে বর্তমান জাতীয় দলের কোনো তারকাই নেই। তবে তরুণ অনেকেই আছেন, যারা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছেন।
জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা অবশ্য জাতীয় লিগে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগও পান না। কেউ কেউ আবার খেলার প্রয়োজনও বোধ করেননি। জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম চার ইনিংস খেলে করেছেন মাত্র ৯৭ রান। নাসির হোসেন তিন ইনিংসে ৮১ রান। সোহাগ গাজী ব্যাট হাতে সফল হলেও ব্যর্থ বল হাতে। দুই ইনিংসে তিনি দুই হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৪৮ রান করেছেন, বল হাতে মাত্র দুই উইকেট নিয়েছেন। তবে স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ঠিকই নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরেছেন। জাতীয় দলের তারকা এই বোলার খুলনা হয়ে দুই ম্যাচেই ২০ উইকেট নিয়েছেন। দুই দুটি ইনিংসে পাঁচের অধিক উইকেট নিয়েছেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বল হাতে কিছুটা ভালো করলেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ। সব মিলে এবারের জাতীয় লিগের লাইমলাইটে জাতীয় দলের তারকা নেই।
লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান হয়েছেন ঢাকা বিভাগের আবদুল মজিদ। ময়মনসিংহের এই ক্রিকেটার ১৩ ইনিংসে করেছেন ৬৯০ রান। মাত্র তিন বছর থেকে জাতীয় লিগে খেলছেন মজিদ। এই মধ্যে নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন তিনি। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে দুইটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। প্রিমিয়ার লিগের গত আসরেও চমক দেখিয়েছেন তিনি। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলে দুই দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সব মিলে ঘরোয়া লিগে দারুণ ধারাবাহিক মজিদ।
ঢাকা মেট্রোর ব্যাটসম্যান আসিফ আহমেদ কখনো জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলেননি। তবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২৩, একাডেমি দল এবং 'এ' দলের হয়ে খেলেছেন। ৬১৪ রান করে জাতীয় ক্রিকেট লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। আসিফ এবার জাতীয় লিগের একমাত্র ব্যাটসম্যান যার একটি ডাবল সেঞ্চুরিসহ তিনটি সেঞ্চুরি রয়েছে। রয়েছে একটি হাফ সেঞ্চুরিও। জাতীয় দলে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন ঢাকা বিভাগের অলরাউন্ডার তাইবুর পারভেজ। এবারের লিগে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দাপট দেখিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে ১১ ইনিংসে ৪১ গড়ে করেছেন ৪৫০ রান। ৮টি উইকেটও নিয়েছেন পারভেজ।
তরুণ তারকাদের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন ঢাকা বিভাগের আরেক তারকা নুরুল হাসান। ১০ ইনিংসে করেছেন ৪৮৯ রান। এবারের জাতীয় ক্রিকেট লিগে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় নুরুল হাসানের ৮১। জাতীয় দলে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনিও। ঢাকা বিভাগের আরেক ব্যাটসম্যান রনি তালুকদার ৫০০ রান করে এবারের লিগে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ঘরোয়া লিগে অবশ্য বরাবরই তিনি ভালো করেন। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে জাতীয় দলে এখনো সুযোগ হয়নি তার। এছাড়ার রংপুর বিভাগের তানভীর হায়দার শেষ দুই ম্যাচে টানা সেঞ্চুরি করে নির্বাচকদের নজরে রয়েছেন। বোলিংয়ে এবার সর্বোচ্চ ৩৩ উইকেট নিয়েছেন বরিশালের মনির হোসেন। দুই উইকেট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ঢাকার নাজমুল অপু। এছাড়া পাইপলাইনে নতুন কোনো ভালো পারফর্মার নেই বললেই চলে।