প্রিমিয়ার হকি লিগে অংশগ্রহণ করেনি মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং। শোনা যাচ্ছিল তাদেরকে শাস্তি হিসেবে প্রথম বিভাগে নামিয়ে দেওয়া হবে। বাইলজে স্পষ্টভাবে তাই উল্লেখ করা আছে। লিগ চলাকালে ফেডারেশন থেকে জানান হয়েছিল যত বড় ক্লাব হোক না কেন বাইলজ ভঙ্গের শাস্তি তাদের পেতেই হবে। সামনে নির্বাহী কমিটির সভায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। না, বেশ কটি সভা হয়ে গেলেও চার ক্লাবের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ বিষয়টি ঝুলেই ছিল। অবশ্য গত বৈঠকে রেলিগেশন নিয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা না হলেও সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান আমরা চার ক্লাবের জন্য আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছি। হকির বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমরা চাই মোহামেডানসহ অন্য ক্লাবগুলো মান-অভিমান ভুলে মাঠে ফিরে আসুক। যদি তারা সাড়া না দেয় তাহলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। গতকাল ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী বলেন, গত বৈঠকেই আমাদের সভাপতি নিজেই বলেছেন, আমি চাই না কাউকে বাইরে রেখে খেলা মাঠে নামাতে। এবার না খেললেও আমি মনেপ্রাণে চাই মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং লিগসহ অন্যান্য টুর্নামেন্টে ফিরে আসুক। এখানে শাস্তি কোনো সমাধান হতে পারে না।
সভাপতি এ ধরনের মন্তব্য করার পরই ফেডারেশন চার দলের সঙ্গে সমঝোতার চিন্তা-ভাবনা করছিল। এর মধ্যে নির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, সমঝোতার প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামীতে সবাইকে নিয়ে লিগ অনুষ্ঠিত হবে। হকিতে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের কথা তিনি তুলে ধরেন। চার ক্লাবের মধ্যে মোহামেডানই হচ্ছে মূল ফ্যাক্টর। তারা যদি খেলতে রাজি হয় তাহলে সমস্যা আর থাকার কথা নয়। গতকাল এ ব্যাপারে মোহামেডানের হকির প্রাণপুরুষ সাজেদ এ এ আদেলের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, সমঝোতার কথা আমি এই প্রথম শুনলাম। জানিনা ফেডারেশন কিসের ভিত্তিতে সমঝোতার কথা ভাবছে। আমাদের বক্তব্যতো পরিষ্কার হকিতে এই কমিটি থাকা অবস্থায় মোহামেডান ফেডারেশনের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। অন্যদের সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারব না। সাজেদ অবশ্য বলেন, মোহামেডান ক্লাব পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সঙ্গে ফেডারেশনের কেউ কথা বলেছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি এ অবস্থায় আপোষে যাওয়া মানে স্বেচ্ছায় পরাজয় মেনে নেওয়া। তাই আগের সিদ্ধান্ত থেকে মোহামেডান এক চুলও নড়বে না। এদিকে মেরিনার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ খান রানা বলেন, সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং থাকব। এমন প্রহসনমূলক নির্বাচন করে চেয়ারে বসবে আর আমরা আন্দোলনে এত দূর পর্যন্ত এসে আপোষ বা সমঝোতা করব তা কি হয়। এবার নয়, আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই এই কমিটি থাকা অবস্থায় মেরিনার্স কখনো মাঠে নামবে না। যদি আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয় তাতেও আপত্তি নেই। আমরাতো বসে থাকব না, অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। অর্থাৎ হকির অসুস্থ পরিবেশ যে কাটছে না তা দুই ক্লাবের দুই কর্মকর্তার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুধু প্রিমিয়ার নয়, আসন্ন প্রথম বিভাগ লিগেও কম্বাইন্ড, ভিক্টোরিয়া, উত্তরা হকি, মুক্ত বিহঙ্গ ও ফরাশগঞ্জ নাকি খেলছে না। অভিযোগ উঠেছে সাজানো কমিটি করে জোর করে কোনো কোনো ক্লাবকে মাঠে নামানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে রহমত উল্লাহর প্রতিক্রিয়া জানতে গতকাল ফোন করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য আলোচনার দুয়ার খোলা রেখেছি। এখন কেউ যদি মামলা-হামলার হুমকি দেন তাহলে বিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া ছাড়া পথ থাকবে না। অন্যদিকে আবার চার ক্লাব শুধু তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অটলই থাকছে না। মামলা করার চিন্তা ভাবনাও করছে। এ অবস্থায় আগামীতে হকির জন্য কি অপেক্ষা করছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।